• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
শিশু দিবস ও শিশুর প্রতি অমানবিকতা

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

শিশু দিবস ও শিশুর প্রতি অমানবিকতা

  • প্রকাশিত ২০ মার্চ ২০১৯

শিশুর প্রতি অমানবিকতা সমাজে সৃষ্টি করে মানবিক বির্পযয়। শিশু অপহরণ, শিশু শ্রম, শিশুর প্রতি বৈষম্য, অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ইদানীং উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে, যা সভ্য সমাজের জন্য অপমান আর আতঙ্কের বিষয়। আমাদের বিবেকবোধ এখনই জাগ্রত না হলে অদূর ভবিষ্যতে চরম মূল্য দিতে হবে। আমরা শিশুদের প্রতি সদয় আচরণে তাদের জীবনকে সুরক্ষিত করতে এখনই সোচ্চার হই পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতায়।

শিশু দিবসটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় পালিত হলেও বাংলাদেশে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতীয় শিশু দিবস পালিত হয়। শিশুদের সম্মান করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিশু দিবস পালন করা হয়। জানা যায়, প্রথম শিশু দিবস তুরস্কে পালিত হয়েছিল ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল। আন্তর্জাতিক শিশু দিবস পালিত হয় ১ জুন। ১৭ মার্চ বাংলাদেশে শিশু দিবস উপলক্ষে নানা আয়োজন থাকে। থাকে স্লোগানে মুখরিত রাজপথে মিছিল ও আনন্দ উৎসব। দিনটি শিশুর প্রতি মমত্ববোধ জাগাতে একটা বিশেষ সুযোগ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বর্তমান সময়ের অস্থিরতায়। বিশেষ করে কোমলমতি, অবুঝ শিশুরাই শিকার হচ্ছে খুন, গুম, অপহরণ, অমানসিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন অত্যাচারের, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ এ সময়ে বাংলাদেশে শিশুদের নিরাপত্তা চরম ঝুঁকির সম্মুখীন। এসব শিশু নির্যাতনের ঘটনায় সমাজ-রাষ্ট্রের অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়। আবেগতাড়িত বিষয় বলেই শিশু নির্যাতন একটা অমানবিক বিষয়। স্বার্থান্ব্বেষী কিছু বিবেকহীন অপরাধীর হিংস্রতা, শিশুর ওপর নির্মম ও বর্বরোচিত আচরণ মানবতাবোধকে দংশন করছে। এসব সমাজ ও মানবতাবিরোধী কাজের কারণে চরম মানবিক দীনতায় সময় পার করছি আমরা, লজ্জা-ঘৃণায়।

আমাদের দেশে নারী ও শিশুর জন্য রয়েছে সরকারি আইন। ধর্মীয় নির্দেশনায় রয়েছে শিশুর প্রতি মমত্ববোধের বিষয়। শিশুর জন্মের প্রথম দিন থেকে পরিণত বয়সে উপনীত হওয়া পর্যন্ত তার লালন-পালন, শিক্ষা-দীক্ষা ও তার জীবনের উত্তম বিকাশের জন্য মা-বাবার প্রতি বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে ইসলামে। নবী মোহাম্মদ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ছোটকে স্নেহ-মমতা করে না এবং বড়কে সম্মান দেখায় না, সে আমার উম্মত নয় (আল হাদিস)। শুধু ইসলাম ধর্মেই নয়, অন্যান্য ধর্মে শিশুর প্রতি স্নেহ-মমতার নির্দেশ রয়েছে। শিশুকে তার অধিকার দিয়ে তার প্রতি মানবিক আচরণ ও সহনশীলতা সব সময় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পালনীয় কর্তব্য।

সামাজিক জীব হিসেবে শিশুর প্রতি দুর্বলতা নেই এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া কঠিন। তারপরও ইদানীং শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে গেছে শহর থেকে গ্রামে। এমনকি মা-বাবা কর্তৃক সন্তান হত্যার মতো অমানবিক ঘৃণ্য ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। শিশুর প্রতি এমন অমানবিকতা সত্যিই সভ্য সমাজের বুদ্ধিমান জীব হিসেবে মানুষকে বিবেকহীন অসভ্যতার আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে, যা কখনোই সভ্য সমাজে কাম্য নয়। ধারণা করা হয়, শিশুর প্রতি মানুষের আবেগ বেশি কাজ করে বলেই অপরাধীদের শিকার কোমলমতি শিশু। শিশু হত্যা ও নির্যাতনের মতো ঘটনা থেকে বাঁচতে আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধকে জাগ্রত করে পারিবারিক বন্ধনে শিশুকে সুনজরে রেখে তাদের সার্বিক মঙ্গলে কাজ করা অতীব জরুরি। শিশুর শুভ কামনায় সদা জাগ্রত থেকে শিশু দিবসের সার্থকতাকে অর্থবহ করতে হবে। বিকৃত মানসিকতার পরিবর্তনে এবং শিশুর প্রতি সহিংসতা রোধে সামাজিক সচেতনতা ও ঐক্যবদ্ধ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই। তার সঙ্গে পারিবারিক বোঝাপড়া ও শিশুর প্রতি সহমর্মিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। পারিবারিক সহমর্মিতা ও সম্পর্কের বন্ধনকে দৃঢ় করে আমাদের ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের সুরক্ষিত করতে হবে। সুন্দর আগামী বিনির্মাণে শিশু নিরাপত্তার বিকল্প নেই। মা-বাবার কলিজার টুকরা শিশুদের প্রতি সার্বক্ষণিক নজর রেখে তাদের সুরক্ষিত জীবনের গ্যারান্টি আমাদেরই দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই শিশুই একদিন মা-বাবা হিসেবে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিনিধিত্ব করবে। ফুলের মতো জীবনের অধিকারী শিশুদের জীবনের নিরাপত্তা ও তাদের অধিকার আদায়ে শিশু নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগ সময়ের দাবি।

      

সফিউল্লাহ আনসারী

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads