• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

সম্পাদকীয়

সড়কে মৃত্যুর মিছিল

শাস্তি ছাড়া স্বস্তি মিলবে না

  • প্রকাশিত ২৩ মার্চ ২০১৯

রাজধানীতে চলমান ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ’ পালনের মধ্যেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। যে ছেলেটি নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে ছিল সোচ্চার, তারই প্রাণ গেল সড়কে। গত বছরের ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে কুর্মিটোলা হাসপাতালের সামনের সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুলের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন নিহত আবরার। ফেসবুক টাইমলাইনে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সমর্থনে গত আগস্টে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ স্টিকার দিয়ে ছবি পোস্ট করেন তিনি। একটি তরুণ-তাজা প্রাণের এমন নির্মম মৃত্যুই প্রমাণ করে দেশের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা কতটা বিশৃঙ্খল।

এমনটি আর চলতে দেওয়া যায় না। নিরাপদ সড়কের দাবিকে এভাবে উপেক্ষা করা দেশের জনগণ আর মেনে নিতে পারে না। একটি জীবনের দাম এত সস্তা আর অবহেলার হতে পারে না। একটি দেশের পরিবহন ও সড়ক ব্যবস্থাপনা এমন অনিরাপদ, অগোছালোভাবে চলতে পারে না। ক্রমাগত সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ার পরও দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি কার্যকর না করার কারণেই বাড়ছে দুর্ঘটনা এবং নিমিষেই অবসান ঘটছে বহু সম্ভাবনাময় জীবনের। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে এত লেখালেখি, আলোচনা, আন্দোলনের পরও কমছে না সড়কে মৃত্যুঝুঁকি। সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা না আনতে পারা এবং অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান না করাই সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ। শাস্তি ছাড়া আর স্বস্তি মিলবে না।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সহধর্মিণী জাহানারা কাঞ্চন ১৯৯৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনের ব্যানারে এই সামাজিক আন্দোলনের সূচনা করেন নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। সেই থেকে আড়াই দশক পেরিয়ে আজো নিরাপদ সড়কের দাবিতে পথে নামতে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের, এটা খুবই দুঃখের ও হতাশাজনক। কিন্তু দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে এই আন্দোলনটি ব্যাপক সাড়া জাগালেও তার কোনো প্রতিকার হয়নি। এবারো প্রাণ দিতে হলো আবরারের মতো সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীকে। ভাবতে অবাক লাগে এত বড় গণজাগরণের পরও সড়ক পরিবহন শৃঙ্খলায় এত নির্লিপ্ততা থাকে কী করে? ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন দীর্ঘ সময় তার আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের মানুষ এবং সরকারকে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, সড়ক দুর্ঘটনা কেবলই দুর্ঘটনা নয় বা ভাগ্যের লিখন নয়— এটি হত্যাকাণ্ডও বটে। এ থেকে উত্তরণের যথোপযুক্ত আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তিনি সোচ্চার ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। কিন্তু এই সামাজিক আন্দোলনের প্রতিফলন আমরা কি পাচ্ছি? কেন এমন জনদাবিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না— বিষয়গুলো স্পষ্ট হওয়া দরকার।

পরিস্থিতি এখন চরম পর্যায়ে। তাই সড়ক দুর্ঘটনাকে কোনোভাবেই নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। অন্যসব অপরাধের মতো সড়কে হত্যাযজ্ঞের অপরাধ বন্ধে দ্রুততম আইন কার্যকরণের আর কোনো বিকল্প নেই। ইচ্ছাকৃত দুর্ঘটনা ঘটানো, বেপরোয়া গাড়ি চালানো, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলা, নেশা করে গাড়ি চালানো, লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চালানো, অপরিণত বয়সে গাড়ি চালানো, গাড়ি চালনায় চালকদের কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কঠোর আইন প্রয়োগে সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার গণদাবি নিয়ে সারা দেশের মানুষ পথে নামতে বাধ্য হবে। পরিস্থিতি সে পথেই যাচ্ছে। আর আশার বাণী নয়, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের পক্ষে সরকারের ইতিবাচক ভূমিকা দেখতে চায় দেশের জনগণ। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads