• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

সম্পাদকীয়

ভালো বিনিয়োগকারীকে বড় সহায়তা

দেশীয় শিল্প বিকাশে উদ্যোগ

  • প্রকাশিত ২৯ মার্চ ২০১৯

দেশীয় শিল্প বিকাশ ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে খবরটি খুবই আশাব্যঞ্জক। খবরে প্রকাশ, ভালো বিনিয়োগকারীকে বড় সহায়তার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অর্থমন্ত্রীর বরাত দিয়ে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে,  ব্যাংকের ঋণ পুনঃতফসিলে বিশেষ সহায়তা পাবেন দেশের ভালো বিনিয়োগকারীরা। খবর অনুযায়ী, ভালো বিনিয়োগকারী ঋণগ্রহীতাদের সুদের হার ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। তারা ঋণ পরিশোধে ১২ বছর সুযোগ পাবেন। ডাউন পেমেন্ট থাকবে ২ শতাংশ। এই শ্রেণির ব্যবসায়ীরা যদি ঘুরে দাঁড়াতে পারেন, তাহলে প্রয়োজনে তাকে আবারো ঋণ দেওয়া হবে। সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশীয় শিল্প বিকাশ এবং ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের অবদানই বেশি। বিভিন্ন সমীক্ষা প্রতিবেদনেও দেখা গেছে, দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের ভূমিকাই বেশি। কিন্তু বেসরকারি উদ্যোক্তারা দেশের স্বার্থে বিনিয়োগ ক্ষেত্র তৈরি করলেও পারিপার্শ্বিক সহায়তার এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে তাদের বিনিয়োগ অনেক ক্ষেত্রেই ঝুঁকিতে পড়ে যায়। কোনো কোনো বিনিয়োগ সফলতার মুখ দেখে না। এমন ক্ষেত্রে লোকসানের কারণে এই বিনিয়োগকারীরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঋণখেলাপিও হয়ে থাকেন।

অর্থনীতির ভাষায় বলা হয়ে থাকে, যদি কোনো দেশ উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চায়, তাহলে সে দেশে অবশ্যই বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। কারণটি হলো- প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ এবং সরকারের শিল্পবান্ধব ভূমিকার মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির মোহাম্মদ মন্ত্রীদের কাছে ব্যবসায়ী সমাজের সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। তিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ চলমান রেখে তাদের অভিযোগ ও প্রস্তাব সক্রিয়ভাবে বিবেচনার সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। তখন মালয়েশিয়ায় উৎপাদন খাতের অভিজ্ঞতা, পুঁজি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা ও বাজার বিষয়ে জ্ঞান শিল্পায়নে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানানোর পাশাপাশি তিনি দেশীয় শিল্প বিকাশকে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে শক্তিশালী করেন। এর ফলে দেখা গেছে,  বিদেশি বিনিয়োগকারীরা একপর্যায়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেও মালয়েশিয়ার উন্নয়ন ব্যাহত হয়নি।

তাই উন্নত দেশের স্বপ্ন সোপানে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এর গতিসঞ্চারের জন্য দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দেশীয় শিল্প সম্প্রাসরণের নীতি গ্রহণ করাটাই বাস্তবসম্মত হবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের এগিয়ে চলার পেছনে বৈরী পরিস্থিতি-পরিবেশের মধ্য দিয়েই বিকশিত হওয়া দেশীয় শিল্প উদ্যোগের বিরাট অবদান ও ভূমিকা সঙ্গী হয়ে আছে।  সেই সঙ্গে এও মনে রাখা দরকার, একটি বাণিজ্যিক গ্রুপ অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, বৈরিতার দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এ ধরনের শিল্প উদ্যোগের ভূমিকা বিশাল, ফলপ্রসূ এবং আশাব্যঞ্জক। তাই এক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো আপন চেষ্টায় গড়ে ওঠা শিল্পকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। দেশের নাগরিকরা যদি নিজেদের প্রচেষ্টায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়, প্রকারান্তরে সেটা সরকারেরই সহায়ক পটভূমি হওয়ার কথা। কোনো যুক্তিতেই এসব সম্ভাবনার বিকাশের পথে সরকার বাধা হতে পারে না।

সরকারের একক প্রচেষ্টায় একটি দেশের আর্থ-সামাজিক ও অবকাঠামোর পরিবর্তন অসম্ভব। ব্যবসায়ী বা শিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করতে হয়। আমাদের দেশে অধিকাংশ শিল্প উদ্যোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্যক্তিক বা সামষ্টিক প্রয়োজন এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষাপটে। এখানে সরকারের খুব বেশি প্রণোদনা নেই। এখনো অনেক ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প উদ্যোগ বিকশিত হচ্ছে নিজেদের প্রচেষ্টায়ই। তাই এ ধরনের উদ্যোগকে আইনগত সীমাবদ্ধতার অজুহাতে আটকে না দিয়ে আপন চেষ্টায় গড়ে ওঠা শিল্পকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়াটাই শিল্প ও কর্মসংস্থানবান্ধব উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আমরা মনে করি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads