• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

রাজধানী যেন জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড

স্থায়ী সমাধানে ব্যবস্থা নিন

  • প্রকাশিত ০১ এপ্রিল ২০১৯

দেশে অগ্নি দুর্ঘটনা এবং অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। বলতে গেলে রাজধানী যেন একটি জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হচ্ছে। নিমতলী ট্র্যাজেডি ও চুড়িহাট্টার পর বনানী অগ্নিকাণ্ড, গুলশান ডিএনসিসি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড যেন কেবলই অগ্নিকাণ্ড নয়, একেকটি মৃত্যুর মিছিল। বিভিন্ন খবর থেকে জানা গেছে, নগরে সড়ক দুর্ঘটনার পর অগ্নি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার প্রতি বছর ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। যদিও বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানেনি, তবে ভূমিকম্পের বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এই নগরী মৃত্যুকূপে পরিণত হবে বলে বিশেষজ্ঞরা হামেশাই সতর্ক করছেন। তথাপি অগ্নি আতঙ্ক বাড়লেও, বাড়ছে না সচেতনতা, আইন প্রয়োগ এবং ব্যবস্থাপনার দক্ষতা।

আগুনে কেবল জানমালই নয়, স্বপ্ন ভস্মীভূত হচ্ছে বহু পরিবারের। এক তথ্যে জানা গেছে, দেশে নানা ধরনের দুর্ঘটনায় যত প্রাণ যায়, তার ৭১ শতাংশই ঘটে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে। দুর্ঘটনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জীবনহানি ঘটে নৌপথে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। গত বছর দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে শতকরা প্রায় ২ জন নিহত হয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে আগুনে চুড়িহাট্টায় ৭১ জন নিহত হওয়ার পর বনানীর এফ আর টাওয়ারের আগুনে ২৬ জনের প্রাণ গেল। হিসাব বলছে, এ বছরের প্রথম তিন মাসে অগ্নিকাণ্ডের এ দুটি বড় দুর্ঘটনায় ৯৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ সংখ্যা ২০১৬-১৭ সালে অগ্নিকাণ্ডে সারা দেশে নিহতের সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ। তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে সারা দেশে ১৯ হাজার ৬৪২টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ঘটে ৬ হাজার ২০৮টি। এর মধ্যে অধিকাংশই ঘটেছে রাজধানীতে। এমনকি গত বছর এসব অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান ১৩০ জন। দগ্ধ ও আহত হন ফায়ার সার্ভিসের ১৩ কর্মীসহ মোট ৬৭৭ জন। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চার বছরে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণ গেছে ২৯৬ জনের। এসব হিসাব জানা গেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তথ্য থেকে।

বলতে দ্বিধা নেই এসব বিষয় যাচাই করা ও তদারকির মূল দায়িত্ব রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বিভাগের। এ দুটি সংস্থাই দায়িত্ব পালনে ক্রমাগত উদাসীনতার পরিচয় দিয়েও পার পেয়ে যাচ্ছে- ব্যাপারটি বিস্ময়কর। অভিযোগ তোলা হয়, বিল্ডিং কোড না মেনে বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেন না। তাদের অবহেলার কারণেই ঘটছে এমন দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। তাই তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে। দুঃখ লাগে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হয় যে, বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে। তাহলে রাজউক ও ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের মতো প্রতিষ্ঠান আর এত জনবলের পেছনে সরকারের এত অর্থ ব্যয় করার কোনোই মানে হয় না।

বড় বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটার পরও উত্তরণের কোনো উপায় খোঁজা হয় না। প্রতিটি ঘটনায় তদন্ত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা আর আলোর মুখ দেখে না। রাজধানীর প্রায় ৯৫ শতাংশ ভবনেরই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ঠিক নেই। ইমারত নির্মাণ বিধিমালার নির্দেশনাগুলো যাচাই-বাছাই করা হয় না। তথাপি অগ্নি আতঙ্ক বাড়লেও, বাড়ছে না সচেতনতা, আইনপ্রয়োগ এবং ব্যবস্থাপনার দক্ষতা। আশ্চর্য লাগে এতকিছুর পরও একটি দুর্ঘটনায় প্রাণহানি না ঘটা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো টনক নড়ে না। অপরদিকে, একেকটি দুর্ঘটনায় কিছু মানুষের জীবনহানিকে সংখ্যায় বিচার করে কিছুদিন আলোচনায় তৎপর থাকলেও পরে আমরা বেমালুম ভুলে যাই। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে এত অবহেলা হতে পারে একটি দেশের রাজধানীর বুকে- জাতির জন্য এটি খুবই লজ্জাজনক। আশা করি, এর স্থায়ী সমাধানে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads