• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
প্রয়োজন বিকেন্দ্রীকরণ

ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ)

সম্পাদকীয়

সুষম উন্নয়নে জার্মান মডেল

প্রয়োজন বিকেন্দ্রীকরণ

  • প্রকাশিত ০৪ এপ্রিল ২০১৯

২০১৬ সালে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) করা বসবাস উপযুক্ততার সূচকে ১৪০টি দেশের শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৩৯তম (১৪০তম সিরিয়ার দামেস্ক)। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জনসংখ্যার অত্যধিক চাপ ঢাকাকে আজ এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। ঢাকাকে ঘিরে শাসন ও উন্নয়ন কেন্দ্রীভূত করার একটি প্রবণতা সেই পাকিস্তান আমল থেকেই লক্ষণীয় ছিল, যা স্বাধীন বাংলাদেশেও চলমান থাকে। আর এ প্রবণতার ফলে ঢাকায় অবস্থিত সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রশাসনিক কার্যালয়, দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রভৃতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষকে ঢাকামুখী করছে। এমনকি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীও জীবিকার তাগিদে ঢাকার প্রতি আকৃষ্ট হয়। নদীভাঙন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা প্রতিকূলতার কাছে হার মেনে ভিটেমাটি বিক্রি করে প্রান্তিক মানুষ স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে আসে বেঁচে থাকার তাগিদে। এর ফলে রাজধানী ঢাকা ক্রমেই হয়ে পড়ছে মুমূর্ষু। রাজধানীর আশপাশে যতই এলাকা সম্প্রসারণ করা হোক না কেন- শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মক্ষেত্রের জন্য ঢাকায় দেশের দূর-দূরান্ত থেকে সাধারণ মানুষকে আসতেই হবে। আর এ কারণেই বর্তমান সময়ে অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ ঢাকার জন্য পরিবেশ দূষণ, বেকারত্ব, মৌলিক সেবার দুষ্প্রাপ্যতা, অপরাধ প্রবণতা, দারিদ্র্য ও জনসংখ্যার চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে বাধাপ্রাপ্ত করছে দেশের সুষম ও টেকসই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা।

আর তাই বহু আগে থেকেই ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ অভিমত ছিল ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণের পক্ষে। এবার সে কথাই বলল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সম্প্রতি পল্লী অঞ্চল পর্যন্ত দ্রুত ন্যায়সঙ্গত উন্নয়ন শীর্ষক এক সেমিনারে এডিবির পক্ষ থেকে জার্মানির বিকেন্দ্রীকরণ মডেল ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই মডেল ব্যবহারের ফলে জার্মানির মাত্র চারটি শহরে ১০ লাখের বেশি জনসংখ্যা রয়েছে এবং অনেক উন্নত দেশের চেয়ে জার্মানিতে সুষম উন্নয়নের সফলতাও বেশি। এর মাধ্যমে দেশটির সর্বত্র সব ধরনের অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করা গেছে। একই সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগসহ বৈষম্য নিরসনে সব ব্যবস্থাই গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। যদিও নতুনভাবে নির্বাচিত বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পল্লী এলাকার উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে; কিন্তু তার সঠিক রূপকল্প প্রণয়নে বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি প্রান্তিক পর্যায়ের সুধীজনদেরও সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন মনে করছি। কেননা অতীতে দেখা গেছে, এ ধরনের অনেক ভালো উদ্যোগ শুধু রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাস্তবায়নের ফলে কার্যত দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কোনো উপকার বয়ে আনেনি।     

সুতরাং এখন থেকেই বিকেন্দ্রীকরণের চিন্তা না করলে আগামীতে ঢাকায় বসবাস দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ন্যায়সঙ্গত উন্নয়নে জার্মান মডেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ মডেলে শিল্পায়নের পাশাপাশি সামাজিক বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশেও এ ধরনের উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। প্রত্যেক গ্রামকে শহরে রূপান্তরের কাজ চলছে যা বাস্তবায়নে ২০ বছরের বেশি সময় লাগবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, শহর মানেই জৌলুসপূর্ণ চাকচিক্যময় নগর প্রতিষ্ঠা নয়। গ্রামের তেমন উন্নয়ন আমরা চাই না। উন্নয়ন ঘটাতে হবে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত নাগরিক সুযোগ-সুবিধার। তা হলেই সাধারণ মানুষের রাজধানী কিংবা বড় বড় শহরমুখিতা হ্রাস পাবে।   

আর তাই প্রতিটি জেলা ও বিভাগে উচ্চশিক্ষা, উন্নত চিকিৎসা এবং কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করা বাঞ্ছনীয়। অতীতে সরকার ঢাকাকে ভিক্ষুকমুক্ত কিংবা ভূমিহীন মানুষকে যে ভূমির ব্যবস্থা ও কর্মের সুযোগ সৃষ্টির কথা বলেছে, সেখানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষিত লোকদেরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে আগামীর ঢাকাকে জনগণের বাসযোগ্য করার লক্ষ্যে সরকার বিকেন্দ্রীকরণের জন্য পল্লীকে শহরে রূপান্তরে একটি সুসমন্বিত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করবে, এমনটাই প্রত্যাশা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads