• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
প্রয়োজন একটি সুষ্ঠু নীতিমালা

নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থরা

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

নিরাপদ সড়কের জন্য চূড়ান্ত ১১১ সুপারিশ

প্রয়োজন একটি সুষ্ঠু নীতিমালা

  • প্রকাশিত ০৬ এপ্রিল ২০১৯

সড়ক নিরাপদ রাখতে ও শৃঙ্খলা ফেরাতে সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নেতৃত্বে সরকার গঠিত কমিটি ১১১ সুপারিশের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। ঠিক একইভাবে যাত্রীকল্যাণ সমিতিও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ৩৭টি সুপারিশমালার একটি প্রস্তাবনা তুলে ধরে। যাত্রীকল্যাণ সমিতি তাদের সুপারিশ সম্প্রতি সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের হাতে হস্তান্তরও করেছে। বলা হচ্ছে, শিগগিরই ১৫ দিনের সময়সীমা দিয়ে জনমত যাচাইয়ের জন্য এই সুপারিশগুলো বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। এখন কথা হচ্ছে, জনমতকে গুরুত্ব দেওয়া হবে তো? কেননা অতীতেও দেখা গেছে, মালিকপক্ষের সুযোগ-সুবিধা দেখতে গিয়ে গণপরিবহনের নৈরাজ্য বন্ধে বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাবিত ৫ দফা অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের নামে সমন্বয় কমিটির কাছে ফেরত পাঠিয়েছিল বিআরটিএ।

গত বছর সড়ক পরিবহন আইন অনুমোদন দেওয়া হলেও রাজধানীতে গণপরিবহনের নৈরাজ্য বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। এমনকি এই নৈরাজ্য বন্ধে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত তৈরি হয়নি নতুন কোনো নীতিমালা। দীর্ঘদিন ধরে নগরীতে চলমান সিটিং সার্ভিসের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া, যত্রতত্র তোলা হচ্ছে যাত্রী। আর এসব কারণে ইদানীং আবারো সড়কে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩তম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত তিন কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে— ওভার স্পিড, ওভারটেকিং, যান্ত্রিক ও রাস্তার ত্রুটি। সমস্যা যা-ই হোক, সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস না পাওয়ার পেছনে রয়েছে নানা কারণ। চালকের লাইসেন্স প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে যানবাহনের ফিটনেস সনদ, গাড়ির অনুমোদন, সড়কের ত্রুটি, সঠিক তদারকির অভাবসহ সব ক্ষেত্রেই রয়েছে গলদ। দুর্ঘটনা রোধে সরকারিভাবে নেওয়া সিদ্ধান্তসমূহও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কার্যকর হয় না। এক্ষেত্রেও রয়েছে সমন্বয় ও পরিকল্পনার অভাব।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে জনসাধারণের দাবি ছিল গণপরিবহনকে শক্তিশালী করা। আর গণপরিবহন সেক্টরকে সমৃদ্ধ করতে হলে রাজধানীতে বসবাসকারী ধনী-গরিব বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে বিবেচনায় নিয়ে সিটিং এবং লোকাল উভয় সার্ভিসই সহজলভ্য হওয়া প্রয়োজন। ২০১৭ সালে এ-সংক্রান্ত সমন্বয় কমিটির প্রস্তাবিত পাঁচ দফার অনুসরণ রাজধানীতে গণপরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধে জরুরি বলে মনে করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। যেখানে বলা হয়েছিল, কোম্পানিভিত্তিক কিছুসংখ্যক গাড়ি সিটিং ও বাকি গাড়ি নন-সিটিং করা; সিটিং সার্ভিসের গাড়ির রঙ আলাদা থাকা; সম্পূর্ণ রুট কয়েকটি ধাপে বিভক্ত করে এর ভাড়া ধাপভিত্তিক অনুযায়ী সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করা এবং সিটিং সার্ভিসের জন্য সীমিত সংখ্যক স্টপেজ নির্ধারণ করা বাঞ্ছনীয়।

কিন্তু প্রভাবশালী মালিকপক্ষের কথা বিবেচনায় নিয়ে উপরোক্ত সুপারিশগুলো সে সময় আলোর মুখ দেখেনি। বরং আরো যাচাই-বাছাইয়ের নামে তা সমন্বয় কমিটির কাছে ফেরত পাঠিয়েছিল তখন বিআরটিএ। যদি বিআরটিএ আবারো মালিকপক্ষের সুবিধাকে প্রাধান্য দেয়, তা হলে সিটিং কিংবা লোকাল কোনো সার্ভিসই যাত্রীকল্যাণ বয়ে আনবে না। বন্ধ হবে না গণপরিবহনের নৈরাজ্য এবং যত সুপারিশই করা হোক না কেন, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো কখনোই সম্ভব হবে না। বিপরীতে দুর্ঘটনা বেড়েই যাবে, তার শিকার হবে ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। কথিত আছে— আইনপ্রয়োগকারী ব্যক্তি ও সংস্থাই আইন ভাঙার ক্ষেত্রে গাড়ির চালক, সহযোগী, মালিক এবং পথচারীদেরও সহায়তা করে থাকে। সুতরাং ভালো ভালো কথা লিখে আইনটিকে অনুমোদন দিলেই হবে না, তার সঠিক প্রয়োগের ক্ষেত্রেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। এমতাবস্থায় গত বছর পাস হওয়া নতুন সড়ক পরিবহন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং তার সঠিক প্রয়োগ দেশবাসী দেখতে চায়। পাশাপাশি একটি সুষ্ঠু নীতিমালার মাধ্যমে রাজধানীতে গণপরিবহনের নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে নগরবাসী।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads