• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস

সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষিত হোক

  • প্রকাশিত ০৭ এপ্রিল ২০১৯

ভালো স্বাস্থ্যই সুস্থ ও সতেজ জীবনের চাবিকাঠি। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সাধারণ মানুষের ভালো স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাধা যেমন দারিদ্র্য, তেমনি আরেকটি প্রধান বাধা সচেতনতার অভাব। স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সচেতনতা এমন একটি বিষয়, যার ওপর একটি দেশের মানবসম্পদ অনেকাংশে নির্ভরশীল। নাগরিকের সুস্বাস্থ্যের অভাবে দেশের উৎপাদনশীলতা কমে, কমে যায় উন্নয়নের গতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের গুরুত্ব এখানেই।

আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। প্রতি বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এমন একটি স্বাস্থ্য ইস্যু বেছে নেয়, যা বিশেষ করে সারা বিশ্বের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সেদিন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয় এ দিবসটি। ১৯৫০ সাল থেকে নিয়মিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে বিশ্বের নানা প্রান্তে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়ে আসছে। এই দিনটিকে বিশ্বের বহু দেশ এবং বহু বেসরকারি সংগঠন পালন করে থাকে। মূলত জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে প্রচার ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই দিনটি কাজে লাগানো হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে আটটি স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রচারমূলক কাজ করে থাকে, তার অন্যতম হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস।

তবে আমাদের দেশে বিপুল অর্থ ও সম্পদের সমাহার ঘটিয়ে এবং জনবল বৃদ্ধির মাধ্যমে ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা’ এবং ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ সুরক্ষাসহ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের ৩ নং ধারা ‘সব বয়সের এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত জীবন ও কল্যাণের মাত্রাকে বর্ধিত করার’ লক্ষ্য অর্জনের যে কথা বলা হচ্ছে, তা পূরণ করা সম্ভব হলে স্বাস্থ্য খাতে দেশের অগ্রগতি ঈর্ষণীয় পর্যায়ে পৌঁছবে বলে মনে করা যায়। আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি প্রবর্তন। অনেক জনবল নিয়োগ করার পরও যদি সেবাদান কেন্দ্রে চিকিৎসক ও সেবাদানকারীদের অনুপস্থিতির প্রবণতা প্রতিরোধ করা না যায় এবং সেবার গুণগত মান নিয়ে রোগী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস ও আস্থার পরিবেশ গড়া সম্ভব না হয়, তাহলে এ খাতে বিপুল সরকারি বিনিয়োগ অর্থহীন হবে এবং শতভাগ লক্ষ্য অর্জনের পথে প্রতিবন্ধকতা বিরাজ করবে।

দেশের জনগণ এখনো স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির জন্য ৬৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করে নিজের পকেট থেকে। প্রায় ৬৪ শতাংশ মানুষ এখনো চিকিৎসার জন্য পানিপড়া ও ওঝা-বৈদ্যদের শরণাপন্ন হচ্ছে। প্রায় ৭৭ শতাংশ প্রসূতি আধুনিক প্রশিক্ষণবিহীন দাইদের পরিচালনায় নিজ বাড়িতে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সন্তান প্রসব করছে। এমনকি ভুয়া ডাক্তার ও লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকানের প্রসার ঘটেছে দেশের আনাচ-কানাচে এবং এসব ঘটেছে ওষুধ প্রশাসনের লোকজনের যোগসাজশে অথবা তাদের দৃষ্টির আড়ালে। ফলে দেখা যাচ্ছে, অতীতে সরকারকে ২৩টি নকল ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কারখানা ও উৎপাদনসহ সব কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়েছে।

দেশে সহজে ও স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যসেবাপ্রাপ্তির সুযোগ সীমিত। অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশ ও পরিস্থিতি বন্ধুসুলভ নয়। এসব প্রতিবন্ধকতা অতিক্রমের লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবার পরিধির সঙ্গে সমন্বয় করে আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটাতে হবে এবং দক্ষ জনবল সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বচ্ছ কর্মসূচি নিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে সংস্কার সাধনের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রাতিষ্ঠানিক সেবাকে জনপ্রিয় করা এবং হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোকে রোগীবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা, যেখানে ধনী ও গরিব সমান সেবার সুযোগ পাবে। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সর্বত্র বিশেষ ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং বিকল্প অর্থায়ন বা বীমার প্রচলন করতে হবে। বর্তমান সরকার গৃহীত স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার উদ্যোগ সে লক্ষ্যেই পরিচালিত হবে, এমনটাই প্রত্যাশা দেশবাসীর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads