• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

হাওরের ফসল বিপর্যয়ের আশঙ্কা

পরিবেশ উপযোগী ব্যবস্থা নিন

  • প্রকাশিত ১২ এপ্রিল ২০১৯

বিপদ যেন পেছন ছাড়ছে না হাওরের কৃষকদের। আগাম বন্যা, খরা, শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টির কারণে কয়েক বছর ধরে সোনার ফসল পুরোপুরি ঘরে তুলতে পারছেন না হাওরের কৃষকরা। দু’বছর আগে অকাল বন্যায় পুরো হাওরাঞ্চলের ফসল সম্পূর্ণ ডুবে গেলে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা। সে বছর কাঁচা-পাকা ধান পানির নিচে পচে বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টির কারণে মাছেরও মড়ক ধরে। আর সেই মাছ খেয়ে মড়কের কবলে পড়ে হাওরের হাঁসের খামার। মারা যায় গরু-ছাগলও। সে বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হাওরবাসীর পাশে দাঁড়ায় সরকার এবং দেশের বিবেকবান জনগণ। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রত্যক্ষ পরিদর্শন করেন হাওরের পরিস্থিতি। হাওরাঞ্চলের কৃষকরা সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই গত বছর কোনো কোনো স্থানে অতিবৃষ্টির কারণে জমির ধান কেটে আনলেও তা শুকাতে পারেননি কৃষকরা। অতিবৃষ্টির ফলে ধানে পচন ধরেছিল। এতে ধানের রঙ নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে ন্যায্য দাম পাননি কৃষক। আবার কোনো কোনো স্থানে শিলাবৃষ্টির কারণে কাঁচা-পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, পরপর ফসলহানির কারণে কৃষকের মনে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করতে দেখা গেছে। আর এ কারণেই বোধহয় কৃষক নিজেরাই অতি সাবধানী হয়ে এবার একটু আগেভাগেই চারা তৈরি এবং রোপণ কাজ সেরেছেন, যাতে আগেই ফসল ঘরে তুলে আনতে পারেন। কৃষকের এই প্রচেষ্টা অনাহূত আশঙ্কার কারণেই। যা ধারণাপ্রসূত তবে বিজ্ঞানসম্মত নয়। এজন্য হাওরের কৃষকদের বিজ্ঞানসম্মত চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের সচেতন করে তোলা দরকার।

প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, এবার অগ্রিম ধানের চারা রোপণ করায় কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছে নেত্রকোনার হাওরের বোরো ধান। একমাত্র বোরো ধানে চিটা দেখা দেওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন হাওরের কৃষকরা। কৃষি বিভাগ বলছে, কোল্ড ইনজুরির কারণে ফসলে চিটা দেখা দিয়েছে। আমরা মনে করি, এ বিষয়টিকে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করে কৃষি বিভাগের এর কারণ অনুসন্ধান এবং প্রতিকারে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। একই সঙ্গে হাওরের ফসল নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন। কারণ জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়া ও ঋতুর পরিবর্তন এবং প্রভাব চিন্তার বিষয়।

হাওরাঞ্চল অতি প্রকৃতিবান্ধব এলাকা।  হাওরের উৎপাদিত মাছ ও ধান দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখে। আমাদের দেশি জাতের অনেক ধান এখনো হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত হয়। আমাদের মনে রাখা দরকার, বছরে হাজার লাখ টন ধান উৎপাদন করে দেশের খাদ্য চাহিদা মেটায় এই হাওরবাসী। তাই হাওরাঞ্চলকে বিশেষ প্রকৃতিবান্ধব কৃষিজোন হিসেবে বিবেচনা করে হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ উপযোগী ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতি বছর  পাহাড়ি ঢলে হাওর রক্ষা বাঁধ কেন ভেঙে যায়- এর কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। হাওরের উন্নয়নে আমাদের প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক। আমাদের রাষ্ট্রপতিও হাওরাঞ্চলের সন্তান। তারপরও হাওর কেন অবহেলিত থাকবে? হাওরের উন্নয়নে ২৮ হাজার কোটি টাকার ‘হাওর মহাপরিকল্পনা’র সুফল তুলে আনতে হলে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। হাওর রক্ষা বাঁধগুলোকে পরিকল্পিত ও স্থায়ীভাবে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য সদাশয় সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এখনই হাওর নিয়ে ভাবুন। কৃষি বিজ্ঞানীরা হাওরের উপযোগী কম সময়ে অধিক ফলন সম্ভব এমন ধানের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করুন এবং একফসলি বৃত্ত থেকে হাওরবাসীকে বের করে নিয়ে আসার উদ্যোগ না নিলে হাওর উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার সামগ্রিক সুফল আসবে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads