• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

কারাগারে মাদকের বিস্তার

সরবরাহকারীদের শাস্তি দিন

  • প্রকাশিত ১৩ এপ্রিল ২০১৯

অপরাধীদের শাস্তি ভোগের ঠিকানা হলো কারাগার। সেখানে যদি সে সব সুবিধা ভোগ করার সুযোগ পায় তবে একে আর কারাগার বলা যায় না। কারাগারে শাস্তি ভোগ করার পাশাপাশি বন্দিদের মাঝে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার ফলে অনুশোচনা বোধ জাগ্রত হয়। একই সাথে তারা অপরাধ করা এবং অপরাধপ্রবণতা থেকে দূরে থাকতে পারে। এ কারণেই কারাগারকে সংশোধনাগার বলা হয়। কিন্তু কারাগারে গিয়েও একজন অপরাধী যদি নেশা করার সুযোগ পায় তখন বুঝতে আর বাকি থাকে না, এই কারাগার সংশোধনাগার হিসেবে আর কীইবা ভূমিকা রাখতে পারে।

কারাগারে মাদকদ্রব্য সরবরাহ ও মোবাইল ফোনের রমরমা বাণিজ্যের খবর প্রায়ই উঠে এলেও এর প্রতিকারে তেমন কোনো ব্যবস্থার কথা জানা যায় না। অথবা ব্যবস্থা নেওয়ার পরও যখন এমন অপরাধ কার্যক্রম থামে না তখন কারাগারের পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। ভাবতে অবাক লাগে কারাগারের ভেতরে মাদক সরবরাহ এবং ফোনে কথা বলার সুযোগ যারা দিচ্ছে তাদেরকে বলা হয় কারারক্ষী। অথচ কারারক্ষীরা নিজেরাই অপরাধীদেরকে সহায়তা করে অপরাধ করছে। খবরে জানা যায়, টাকায় সব ধরনের নেশাদ্রব্য মেলে কারাগারে। বিশেষ করে ইয়াবা ট্যাবলেট, গাঁজার চাহিদা ও সরবরাহ বেশি। বহনে সহজলভ্য এবং কম ঝুঁকির জন্য ইয়াবা ট্যাবলেটের ব্যবহারই সেখানে বেশি হয়। আর এজন্য বাইরের চেয়ে ৫ গুণ বেশি দামে এসব বিক্রি হয় কারাগারের ভেতরে। এ যেন আরেক মাফিয়া বাণিজ্য! জানা গেছে, আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়া বন্দিরা ফেরার সময় নানা কৌশলে মাদকদ্রব্য কারাগারের ভেতরে নিয়ে যায়। মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগীরা আদালত চত্বরে ঘোরাফেরা করে এবং সুযোগমতো বন্দিদের কাছে মাদকদ্রব্য পৌঁছে  দেয়। এছাড়া আদালতে হাজিরা দিতে আসা কয়েদিদের স্বজনরা যেসব খাবার দেয় তার মধ্যেও লুকিয়ে মাদক চলে যায় কারাগারের ভেতরে। এভাবে ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ঢুকছে কারাগারে। কারারক্ষীদের অনেকে বন্দিদের কাছে মাদকদ্রব্য বিক্রি করে। আরো জানা যায় পরিদর্শনকালে অনেক সময় বিভিন্ন সেল থেকে মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার হয়। তার মানে কারাগারে মোবাইল ফোনের নিয়মিত ব্যবসার খবরটি অসত্য নয়। দু’শ’ টাকায় ঘণ্টা হিসেবে মোবাইল ভাড়া পাওয়া যায়।

কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী কোনো বন্দি খাবার সংগ্রহ করতে চাইলে কিংবা বাইরে থেকে কয়েদিকে কোনো খাবার কিংবা প্রসাধনী দিতে হলে কারাগারের ক্যান্টিনে অর্ডার দিয়ে টাকা জমা দিলে কর্তৃপক্ষ কারাভ্যন্তরে সংশ্লিষ্ট আসামির কাছে ওই পার্সেল পাঠায়। এই নিয়ম ভঙ্গ করে, নিরাপত্তার সব চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে কয়েদির কাছে সাবানের ভেতর ইয়াবাসহ ঘুমের ওষুধ পাওয়া যায় এটাই বিস্ময়কর! সাধারণ মানুষ সহজেই বুঝে নেবে কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা দুর্বল। আর এমন দুর্বল, অসৎ কর্মীনির্ভর কারাব্যবস্থা দিয়ে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ বা সংশোধন কোনোটাই আশা করা যায় না।  কারাগার হবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার স্থান। কারাগারের ভেতরে মাদকদ্রব্যের প্রবেশ হতাশাজনক। এতে করে কারাগারের অপরাধীরা সংশোধনের পরিবর্তে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে সেটাই এখন দুশ্চিন্তার বিষয়। বলতে দ্বিধা নেই এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে বড় বড় দাগি আসামি কারাবন্দি থেকেও নির্বিঘ্নে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পাচ্ছে। এটি একটি ভয়ঙ্কর অবস্থা। সরকারকে এখনই বিষয়টিতে বিশেষ নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে কারাগারের অভ্যন্তরে মাদক সরবরাহসহ সকল প্রকার অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads