• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

সম্পাদকীয়

আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব

প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন

  • প্রকাশিত ১৯ এপ্রিল ২০১৯

প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশ। ভূ-প্রাকৃতিক গঠন এর অন্যতম কারণ। বঙ্গোপসাগরের ফানেল আকৃতির একটি প্রান্তে রয়েছে বাংলাদেশ। ফলে এখানে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের প্রকোপ অন্যান্য দেশের তুলনায় একটু বেশি। সেই সঙ্গে রয়েছে বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউজের প্রভাব। মনুষ্য সৃষ্ট কিছু পরিবেশ দূষণের ফলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে বিশ্ববাসীর। তারই ফলস্বরূপ ইদানীং সময়ের আগেই দেখা দিচ্ছে অতিরিক্ত ঝড়-ঝঞ্ঝা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়। আর এসব সম্মিলিত বিপর্যয়ে ভাঙনের শিকার আমাদের নদ-নদীগুলো, বাড়ছে নদীদূষণ। সম্প্রতি দৈনিক কাগজগুলোর পাতা উল্টালেই সে চিত্রের দেখা মেলে। শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলা তো এখন মানচিত্র থেকে মুছে যাওয়ার অপেক্ষায়। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পদ্মার ভাঙন, মানিকগঞ্জের শিবালয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন, তিস্তার ভাঙন, এমনকি খুলনার নদীবন্দরও ভাঙনের মুখে।

আমাদের সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা বন দিনকে দিন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে এ অঞ্চলের জনজীবনকে প্রতিরক্ষা দিয়ে থাকে এই বন। অথচ প্রায়ই সংবাদ হতে দেখি, কিছু দুষ্টচক্রের কারণে প্রাকৃতিক এই বনের গাছ কাটা পড়ছে। যে গাছের শেকড় মাটির ক্ষয় প্রতিহত করে, তাকে বিনাশের কারণে মাটি আলগে হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং প্রতি বছরের অতিবৃষ্টি, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসে উপকূলে ভাঙন তীব্র হচ্ছে। তারই ফল নদীর পাড় ধসে যাওয়া। 

গত মৌসুমে যমুনার তীব্র স্রোতে নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে মানিকগঞ্জের শিবালয়ের চরাঞ্চলের শত শত বিঘা জমি, বিদ্যালয়, উপাসনালয়, আশ্রয়ন কেন্দ্র, বসতবাড়ি। আবার তিস্তার ভাঙনে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামের আয়তন ছোট হয়ে আসছে। এ ভাঙন রোধ করা না গেলে কিছুদিনের মধ্যেই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে বিলুপ্ত ছিটমহল। অন্যদিকে ভাঙনের কবলে পড়েছে খুলনার নদীবন্দরও। বিভাগীয় শহর খুলনার পাশ দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদের তীরে ষাটের দশকে গড়ে ওঠে খুলনা নদীবন্দর। ব্যবসায়ীরা এ বন্দর ব্যবহার করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পণ্য পাঠিয়ে থাকে। প্রতি মাসে এখানে নোঙর করে ৬-৭শ জাহাজ। অথচ ভাঙনের কবলে পড়ে আগের মতো জাহাজ ভিড়তে পারে না; এমনকি বেকার হয়ে পড়ছে ঘাটশ্রমিকরাও। 

ঠিক সময়ে যথাযথভাবে নদীশাসন করা গেলে দেশের সর্বত্র বিচিত্র এই নদীভাঙন আমাদের দেখতে হতো না। বিস্তীর্ণ জনপদ নদীগর্ভে বিলীন হতো না। ভূমিহীন হতো না হাজার হাজার পরিবার। সুরক্ষিত থাকত সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাগুলো। অথচ একুশ শতকে এসে যখন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় গোটা বিশ্ব তৎপর, তখন নদীভাঙন প্রতিরোধে উপযুক্ত উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছি আমরা। অতিরিক্ত জনসংখ্যার দেশে এক ইঞ্চি ভূমিও বাংলাদেশের জন্য অমূল্য সম্পদ। চোখের সামনে তিলে তিলে গড়া কষ্টার্জিত সম্পদ এভাবে হারিয়ে যাওয়া যে কত বেদনার, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমন অবহেলায় যেন দেশের আর এক ইঞ্চি ভূমিও হারিয়ে না যায়, সেদিকে যথাযথ দৃষ্টি রাখতে হবে। তার রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল ভূমিকা জনগণ দেখতে চায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads