• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

ধর্ষণ যখন সামাজিক ব্যাধি

সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ জরুরি

  • প্রকাশিত ২০ এপ্রিল ২০১৯

সম্প্রতি বাংলাদেশে ধর্ষণ বেড়ে গেছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে, একই সঙ্গে বাড়ছে হত্যা। একইভাবে বাড়ছে নিষ্ঠুরতা। অথচ এই অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় তেমন আনা যাচ্ছে না বললেই চলে। এর কারণ, অনেকেরই রয়েছে ক্ষমতার ‘আশীর্বাদ’। ফলে তারা অপ্রতিরোধ্য। সুতরাং আমাদের ঘরের নারীদের পায়ে পায়ে বিপদসঙ্কুল; তারা আজ আর নিরাপদ নয়। রাস্তাঘাট, হাট-মাঠ, বাস-ট্রেন, স্কুল-কলেজ, কর্মস্থল কিংবা আপন গৃহস্থল— কোথায় কার কাছে বাংলার নারী নিরাপদ? বিবেকবান প্রতিটি পুরুষেরই এসব ঘটনায় লজ্জিত হওয়া উচিত, ঘৃণায় নিজেকে নিজেরই ধিক্কার দেওয়া উচিত।

ক্ষমতার প্রভাব মানুষকে কতখানি অমানুষ বানাতে পারে তার বাস্তব প্রমাণ মিতু, তনু, খাদিজা, ইসরাতের হত্যাকাণ্ড। এ তালিকায় সর্বশেষ নামটি সোনাগাজীর মাদরাসা শিক্ষার্থী নুসরাতের। এ বছরের শুরুতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড উপপরিষদে সংরক্ষিত ১৪টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে নারী ও শিশু নির্যাতনের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, সেখানে দেখা গেছে বাংলাদেশে গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে মোট ১ হাজার ২৫১টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হয়েছে ২২৪ নারী ও শিশু।

ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৫৮ জনকে। গত বছর ধর্ষণসহ অন্যান্য নির্যাতনের মোট ঘটনা ছিল ৫ হাজার ২৩৫টি। আর বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যানুযায়ী চলতি বছরের প্রথম মাস তথা জানুয়ারিতেই ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২৯৮টি। নারীর প্রতি অব্যাহত সহিংসতাকে ২০১৯ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতির জন্য ‘উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

এমতাবস্থায় আমাদের কাছে বাংলাদেশে ধর্ষণকে একটি রোগ বা ব্যাধি হিসেবেই মনে হচ্ছে। মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি এটি। প্রতিদিন দেশে যে হারে ধর্ষণ প্রবণতা বাড়ছে তাতে এটাকে ছোঁয়াচে রোগ বলেই প্রতীয়মান হয়। এর ফলে বাড়ছে আত্মহননের প্রবণতা। অকালে হারিয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ আশার আলো। ধর্ষণের ফলে একজন নিরপরাধ মেয়ের জীবনে যে ক্ষতি হয়, সারা জীবন ভালো কাজ করে গেলেও সেই কালো দাগটি ওই মেয়ের জীবন থেকে মুছে দেওয়া সম্ভব নয়। আর সেই ধ্বংসযজ্ঞে পুড়তে থাকে মেয়েটির পরিবারও।

কেন মানুষ ধর্ষক হয়? পারিবারিক অবহেলা, অপসংস্কৃতি, ভুল শিক্ষা, ধর্ম-জ্ঞান না থাকা, সামাজিক বৈষম্য, ব্যক্তিত্বহীনতা, বেকার সমস্যা ইত্যাদি ধর্ষণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করি। একটি ছেলেকে পারিবারিকভাবে সঠিক শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হলে সেই ছেলে কখনো বিপথগামী হতে পারে না। ধর্ষণ রোধে অপসংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত হতে হবে আমাদের। জাগতিক শিক্ষার সঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসন ও নৈতিক শিক্ষা জরুরি। তবেই মানুষ তার বিবেক দ্বারা পরিচালিত হবে। পাশাপাশি সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করতে হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে। কেননা বেকার সমস্যা ধর্ষণপ্রবণতা বৃদ্ধির একটি কারণ। কথায় আছে ‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা’। সুতরাং আমাদের যুবসমাজকে প্রায়োগিক কাজে নিয়োজিত করতে হবে।

ধর্ষণ আজ শুধু ব্যাধি নয়। এটি দেশ ও জাতির জন্য অনেক বড় একটি অভিশাপ। এই অভিশাপের কালো অধ্যায় থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হবে। আর সেই গুরুদায়িত্বটি আমাদের সবার। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ধর্ষণ নামক ব্যাধি ও অভিশাপ থেকে আমাদের সমাজ রক্ষা পেতে পারে। আর তাই এ মুহূর্তে ধর্ষণ রোধে চাই সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ। ধর্ষণকারীর বিচার হতে হবে অতি দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক। প্রয়োজনে ধর্ষণ আইনের পরিবর্তনও করতে হবে, যাতে করে অন্য কোনো পুরুষ এ ধরনের জঘন্য কাজ করার আগে শতবার চিন্তা করে। আমাদের ঘরের নারীদের নিরাপত্তায় আর কালক্ষেপণ নয়। সমাজের সব সচেতন মহলকে যার যার অবস্থান থেকে সঠিক কাজটি করার আহ্বান জানাচ্ছি।ধ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads