• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতিতে অগ্রগামী বাংলাদেশ

বড় সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জও বটে

  • প্রকাশিত ২৪ এপ্রিল ২০১৯

শ্রম ও কৃষিনির্ভর অর্থনীতির দেশ থেকে প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেওয়ার ফলে প্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নয়নের বিপ্লবের সূচনা হয়। বলতে দ্বিধা নেই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে দেশের তরুণসমাজের মধ্যে প্রযুক্তিভিত্তিক কর্ম প্রসারে ব্যাপক আগ্রহ দেখা গেছে। ফলে গত দশ বছরে ডিজিটাল বিপ্লব কৃষিনির্ভর অর্থনীতির বাংলাদেশকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সক্ষমতায় রূপান্তর করেছে। বিশ্বের অনেক দেশ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে থাকলেও গর্ব করেই আমরা বলতে পারি— বাংলাদেশই বিশ্বের প্রথম ডিজিটাল বিপ্লব ঘোষণাকারী দেশ। এই কৃতিত্ব অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাপ্য।

বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চার-পাঁচ বছরে দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যাপক অবকাঠামো এবং প্রযুক্তিনির্ভর পরিবেশ তৈরি করেছে সরকার। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে বা ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থাপিত ৪ হাজার ৫২৬টি ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪০ লাখ মানুষ সেবা পাচ্ছে। দেশের টেলিডেনসিটি ও ইন্টারনেট ডেনসিটি যথাক্রমে ৭৭.৮ ও ২৩.৭ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। ই-কমার্স, ই-পেমেন্ট এবং ই-গভর্ন্যান্সের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। দেশের বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার এবং আইসিটি সার্ভিস যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের ৩০টি দেশে রফতানি হচ্ছে। ২১টি জেলার ১৫২টি উপজেলার ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ সংবলিত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের ফলে দেশে বর্তমানে ইন্টারনেট গ্রাহক সাড়ে ৫ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। ৭ লাখ মানুষের ইন্টারনেটভিত্তিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। বর্তমান সরকারের মেয়াদে দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইসিটি ইনকিউবেটর এবং কম্পিউটার ভিলেজসহ অন্যান্য অবকাঠামো তৈরির কার্যক্রমসমূহ দ্রুত করা হবে। বর্তমানে আট হাজার ডাকঘর এবং ৫০০টি উপজেলা ডাকঘরকে ই-সেন্টারে রূপান্তরের কাজ চলছে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেব্ল কনসোর্টিয়ামের সদস্য হয়েছে বাংলাদেশ। এরই পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক সম্প্রসারণ ছাড়াও প্রশাসন, ব্যাংকিং, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং গণযোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে।

অল্প কয়েক বছরে বাংলাদেশ প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির দিকে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হচ্ছে— এটি আশাব্যঞ্জক দিক। কিন্তু পাশাপাশি এর নিরাপত্তার দুর্বলতা কাটাতে পারছি না সেটি আমাদের জন্য একটি ঝুঁকির কারণ। আশার খবর, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে ‘ভিশন ২০২১’  ঘোষণা করেছে সরকার। ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটি এবং শতভাগ মানুষকে ইন্টারনেট সেবার আওতায় নিয়ে আসতে কাজ শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, কয়েক বছরে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ই-কমার্সের কার্যক্রম বাড়বে প্রায় ৪০ শতাংশ হারে। আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে দেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।

আমরা জানি, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। প্রযুক্তি জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে যেমন, তেমনি আবার নিরাপত্তাহীনও করেছে। তাই প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি এর নিরাপত্তার দিকটিও বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। কারণ পৃথিবীর অনেক দেশ ডিজিটাল শিল্প বিপ্লব বা রিভিউলিশন ফোর পয়েন্ট জিরোর কথা বলছে। তবে প্রতিটি দেশ পৃথক বৈশিষ্ট্যে আবর্তিত হওয়ার কারণে ফাইভজি, রোবটিক কিংবা আইওটিসহ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি কোনো দেশের জন্য অসুবিধাজনক, কোনো দেশের জন্য বড় সুযোগ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ডিজিটাল বিপ্লব একই সঙ্গে বড় সুযোগ এবং নিরাপত্তার দিক থেকে চ্যালেঞ্জও বটে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads