• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
আরো দক্ষ ও সেবামুখী হতে হবে

বাংলাদেশ কর্মকমিশন সচিবালয়

সংরক্ষিত ছবি

সম্পাদকীয়

সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতা

আরো দক্ষ ও সেবামুখী হতে হবে

  • প্রকাশিত ২৬ এপ্রিল ২০১৯

একটি দেশের প্রধানতম চালিকাশক্তি জনপ্রশাসন। প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দক্ষ, বিচক্ষণ, দায়িত্বশীল, আত্মপ্রত্যয়ী, নিবেদিত সর্বোপরি বিনয়ী হওয়া আবশ্যক। একই সঙ্গে তাদের হতে হবে উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন। সম্প্রতি চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের চীনে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আরো সম্প্রসারণ করার কথা জানা গেছে। খবরে প্রকাশ, একই সঙ্গে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে চলমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ প্রশিক্ষণের পরিধিও বাড়ানো হবে। যদিও এটি সরকারের একটি নিয়মিত ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, তবে এর সুফল দেশ ও জনগণ কতটা পাচ্ছে, সে বিষয়টিও আমলে নেওয়া দরকার। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন সময়ে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।

একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই কর্মকর্তারাই প্রশাসনযন্ত্রের কলকাঠি নাড়েন। তারা চাইলে সমৃদ্ধির চাকা যেমন দ্রুত ঘুরবে, পক্ষান্তরে তাদের অদক্ষতা আর দায়িত্বহীনতার কারণে পথ হারাবে দেশের ভবিষ্যৎ। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর উপলব্ধিকে আমরা যথার্থই মনে করি। কেননা আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদেরও সেভাবে গড়ে উঠতে হবে। একই সঙ্গে উন্নত বিশ্বের সঙ্গেও দক্ষতায় সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে সব সরকারি কর্মকর্তাকে। আমরা ডিজিটাল দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি সত্যি, তবে এখনো সরকারের সব কার্যক্রম ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হচ্ছে না। এটা হতে হয়তোবা সময় লাগবে। তারও আগে সরকারি কর্মকর্তাদের ডিজিটাল দক্ষতা বাড়ানো দরকার। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সরকারের কর্মকর্তারা এখনো ডিজিটাল পদ্ধতির প্রতি সেভাবে আগ্রহী হয়ে উঠছে না। এ কারণে তাদের প্রযুক্তিবিষয়ক দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নিতে হবে জরুরিভিত্তিতে।

সরকারি কর্মকর্তারা হচ্ছেন জনগণের সেবক। অথচ তাদের বিরুদ্ধে অপেশাদারিত্ব ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে হরহামেশাই। তাদের দায়িত্বহীনতা, দেশপ্রেমের অভাব এবং নিজেদেরই সরকারির নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। অথচ সরকার অবসরের বয়স ও বেতন-ভাতাসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে। কিন্তু তারপরও তাদের কাছ থেকে সেবা পাওয়া নিয়ে সাধারণ মানুষের ব্যাপক অসন্তুষ্টি আর হয়রানির অভিযোগের যেন শেষ নেই। আমরা জানি উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনগণ সরকারি চাকরির প্রতি খুব একটা আগ্রহী হতে দেখা যায় না। কারণ সেসব দেশে সরকারি চাকরি মানেই চূড়ান্ত দায়বদ্ধতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের প্রতি সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে তারা বাধ্য। আমাদের দেশে ঠিক তার উল্টো। জনগণ কাজ উদ্ধারে তাদের উৎকোচ দিতে দিতে নাজেহাল হতে বাধ্য হন।

এক জরিপে ৯৫ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেছেন, তারা জনসেবা করতে চান। কিন্তু জরিপ পরিচালনাকারী গবেষকরা দেখেছেন, বাস্তবে কাজ করার উদ্যম আছে মাত্র ৫৭ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তার। নৈতিক সচেতনতার ক্ষেত্রে এই হার আরো নাজুক। তার প্রমাণস্বরূপ আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকারির কর্মকর্তাদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এত বাড়ানোর পর তাদের আর দুর্নীতি করার কোনো প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশের ১ হাজার ৭৭ জন সরকারি চাকরিজীবীর চিন্তা-ভাবনার ওপর বাংলাদেশে সরকারি চাকরির ব্যবস্থাপনা ও তার সংস্কারের এই জরিপ পরিচালনা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ এবং যুক্তরাজ্য ও ডেনমার্কের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এ বিষয়ে গবেষকরা বলেছেন, সার্বিকভাবে জনপ্রশাসনের গুণগত মান আর পেশাদারিত্ব এখনো সন্তোষজনক নয়। তাদের কাজের স্পৃহা ও পেশাদারিত্ব বাড়ানো এবং দুর্নীতি দূর করাটাই সরকারের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরো দক্ষ ও সেবামুখী করা। আর এক্ষেত্রে সফলতা দেখাতে পারলেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে। বাংলাদেশ সত্যিকারের উন্নয়নের সুফল পাবে।ধ

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads