• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
সন্ত্রাসের থাবায় ক্ষতবিক্ষত বিশ্ব

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

সন্ত্রাসের থাবায় ক্ষতবিক্ষত বিশ্ব

  • আরাফাত শাহীন
  • প্রকাশিত ২৭ এপ্রিল ২০১৯

শান্তির খোঁজে মানুষ সাধারণত তাদের ধর্মীয় প্রার্থনাগৃহে গিয়ে থাকে। মানুষ মনে করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা কিংবা প্যাগোডায় সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা পাওয়া যাবে। অতীতে আমরা কিন্তু এমনটাই দেখে এসেছি। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ আমাদের এই ধারণা পরিবর্তন করে দিয়েছে। নিউজিল্যান্ডে মসজিদে মানুষ হত্যা, শ্রীলঙ্কায় গির্জায় বোমা হামলা আমাদের কী ইঙ্গিত দেয়? এখন প্রতিদিনই বিশ্বের কোথাও না কোথাও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটছেই। প্রতিদিন বোমা পড়ছে কোনো না কোনো জনপদের ওপর। বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। পৃথিবীর কোথাও আজ শান্তির দেখা নেই। মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচার জন্য পালাচ্ছে মানুষ। কিন্তু পালিয়ে তারা যাবে কোথায়! পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাক না কেন- মৃত্যু পিছু ছাড়ছে না কিছুতেই। একটু শান্তির জন্য হয়রান হয়ে যাচ্ছে মানুষ।

সন্ত্রাসীরা তাদের কালো থাবা সারা বিশ্বেই বিস্তৃত করেছে। শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ও ন্যক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলার পর শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে পুরো বিশ্ব। কেউ কল্পনাও করতে পারেনি শ্রীলঙ্কার মতো একটি শান্তিপ্রিয় দ্বীপরাষ্ট্রে এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটতে পারে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখছি, বেছে বেছে শান্তিপ্রিয় দেশগুলোকেই টার্গেট করছে সন্ত্রাসীরা। গত মাসেই নিউজিল্যান্ডের মতো শান্তিপ্রিয় দেশেও সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হয়েছে। বিশ্ববাসীর মতো আমরাও শোকে মুষড়ে পড়েছি। এই সন্ত্রাসী হামলার ফলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩০০ জন ছাড়িয়ে গেছে। আহত অগণিত।

২১ এপ্রিল রোববার ছিল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব ইস্টার সানডে। এদিন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকেরা প্রার্থনার জন্য গির্জায় গিয়ে জড়ো হয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকেরা সংখ্যালঘু বলে বিবেচিত। তাই এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এমন বর্বরোচিত হামলা নিয়ে শ্রীলঙ্কা সরকারকে বিশেষভাবে ভাবতে হচ্ছে বলেই মনে করি। এই হামলাকে কোনো ছোটখাটো হামলা মনে করার কারণ নেই। এবং এটাও মনে করার কোনো কারণ নেই, কোনো ক্ষুদ্রশক্তি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এখন পর্যন্ত সেভাবে কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার না করলেও ধারণা করা হচ্ছে, ইসলামপন্থি কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই হামলা চালিয়ে থাকতে পারে। তবে শ্রীলঙ্কা সরকার যে ন্যাশনাল তাওহীদ জামায়াত (এনটিজে) নামক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে হামলার জন্য সন্দেহ করছে, তাদের শক্তিমত্তাও বিচার করে দেখতে হবে। এত ব্যাপক পরিসরে হামলা চালানোর ক্ষমতা তাদের আছে কি-না সেটিও বিবেচ্য বিষয়। তবে পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন, বাইরের কোনো শক্তিশালী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

বহুদিন হলো শ্রীলঙ্কার মানুষ শান্তির খোঁজে হন্যে হয়ে ছুটে ফিরছে। তারা কিছুটা হলেও শান্তির দেখা পেয়েছিল বলেই মনে করি। কারণ প্রায় তিন দশক ধরে চলে আসা গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি হয়েছে ২০০৯ সালে। তামিল টাইগার বিদ্রোহীরা স্বাধীন ভূখণ্ডের দাবিতে শ্রীলঙ্কা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে বছরের পর বছর। এই গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ। শ্রীলঙ্কার অবকাঠামো ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল প্রায়। তারপর গত দশ বছর ধরে তারা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায়। পর্যটনের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল এই দেশটিতে বিদেশি পর্যটকরা আবার ফিরতে শুরু করেছিলেন। ফলে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছিল সামনের দিকে। তামিল টাইগারদের বিদায়ের পর নতুন করে সন্ত্রাসী হামলা দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলেই মনে হয়।

আমরা প্রতিনিয়ত বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলি। আমরা অঙ্গীকার করি পরমাণু অস্ত্রমুক্ত বিশ্ব বিনির্মাণের। কিন্তু আমাদের সব অঙ্গীকার কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবচেয়ে আগে জরুরি ছিল বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে আন্তরিক প্রচেষ্টার। কিন্তু শুধু অস্ত্র ব্যবসা বজায় রাখার জন্য বৃহৎ শক্তিগুলো সন্ত্রাসবাদকে জিইয়ে রেখেছে। প্রতিদিন নতুন নতুন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্ম হচ্ছে। তাদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে অস্ত্রের নতুন নতুন চালান। আমাদের মাথায় রাখতে হবে এই অস্ত্রগুলো কিন্তু শক্তিশালী দেশগুলো থেকেই আসে। সুতরাং তারা চাইলেও এই দায় এড়াতে পারবে না। আর তাই সন্ত্রাসবাদ নিয়ে বিশ্বকে আবার নতুন করে ভাবতে হবে। কেননা মানবিক বিশ্ব গড়ে তুলতে হলে সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করার কোনো বিকল্প নেই।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads