• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
নিশ্চিত হোক জনগণের নাগরিক অধিকার

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

নিশ্চিত হোক জনগণের নাগরিক অধিকার

  • মাহমুদুল হক আনসারী
  • প্রকাশিত ২৯ এপ্রিল ২০১৯

একটি রাষ্ট্রের উৎপত্তির ক্ষেত্রে যে চারটি মৌলিক বিষয়ের প্রয়োজন পড়ে, তার অন্যতম একটি জনগণ। জনগণ ছাড়া রাষ্ট্র হচ্ছে প্রাণহীন। আবার জনগণের স্বেচ্ছাচারিতা দমাতেই রাষ্ট্র আইন প্রবর্তন করে এবং নাগরিকের দেখভালের জন্য তার কিছু মৌলিক অধিকারকে স্বীকারও করে নেয়। আধুনিক রাষ্ট্র এও মেনে নিয়েছে যে, জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। সেই সাধারণ জনগণের নাগরিক অধিকার রক্ষাও রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব।

স্বাধীন দেশে নাগরিক তার জীবন যাপনে রাষ্ট্রের কাছে যেসব অধিকার পাওয়ার দাবি রাখে তার মধ্যে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা অন্যতম অধিকার। স্বাধীন রাষ্ট্র এসব অধিকার দিতে বাধ্যবাধকতা আছে সংবিধানে। সরকারের কেন্দ্র থেকে স্থানীয় সরকার পর্যন্ত সবগুলো সেক্টরের দায়িত্ব জনগণের জীবনমানের সুখ ও দুঃখের নজরদারি করা। এসব দেখার জন্য সরকারের বহু প্রকারের প্রশাসনিক দফতর রয়েছে। এসব দফতরের পেছনে নাগরিকের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের অর্থের বিনিময়ে তাদের লালন পালন করা হয়। পরিষ্কার কথায় তাদের বেতনভাতা, সুযোগ-সুবিধা, বাসাবাড়ি ও পেনশন পর্যন্ত দেওয়া হয়। লাখ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জনগণের ট্যাক্সের অর্থের ওপর রাষ্ট্র পরিচালিত হয়। আসলে একটা স্বাধীন দেশে আপামর সাধারণ জনগণ রাষ্ট্রের বিশাল এ সেক্টর থেকে কী সুবিধা অথবা কী সেবা পাচ্ছে, সেটাই আমি জনগণের সুখ-দুঃখের পর্যালোচনা করছি এ লেখায়।

প্রথম কথা ভোক্তা অধিকার নিয়ে। আমজনতার কী অধিকার নিত্যদিনের হাটবাজারে পাচ্ছি সেটাই এখন না বলে পারছি না। দেশে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সবগুলো হাটবাজার অনিয়ন্ত্রিত। মফস্বলের মার্কেট বলেন অথবা শহরের ফুটপাত থেকে নামিদামি মার্কেট-সবগুলোয় পণ্য বেচাবিক্রিতে নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা হচ্ছে না। হাটবাজারে কাঁচা তরিতরকারি থেকে শুকনো খাবার পর্যন্ত সবখানেই পণ্যবাজার সীমাহীনভাবে অনিয়ন্ত্রিত। তরিতরকারি, চাল, ডাল, পেঁয়াজ, মরিচ, শাকসবজি সবকিছু ইচ্ছেমতো মূল্য হাঁকিয়ে সাধারণ জনগণের অতিরিক্ত পকেট কাটা হচ্ছে। ভোক্তা নিজের চাহিদা পূরণ করতে বাজারে গিয়ে অসহায় বোধ করছে। পণ্যবাজার যেনো সেকেন্ডে সেকেন্ডে লাফিয়ে লাফিয়ে ফুলে-ফেঁপে উঠছে। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো মাছ, মাংস তরিতরকারির দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। একইভাবে দোকান মার্কেটে অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের দামও প্রতিদিন আকাশচুম্বী। এদিকে সরকারি দফতরে কর্মকাজে নাগরিকের যাওয়া-আসা করতেই হয়। সেখানেও কোনোভাবে নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত হচ্ছে না। টেবিলে টেবিলে পদে পদে হয়রানি ও অবৈধ অর্থ লেনদেন করে জনগণকে মাসকে মাস অপেক্ষা করে অফিস কাজ শেষ করতে হয়।

গণতান্ত্রিক দেশ, গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি সরকারি প্রশাসন কী দিচ্ছে জনগণকে, আর জনগণ অনিয়ন্ত্রিত বাজার মার্কেটে কীভাবে প্রতিনিয়ত প্রতারিত ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সেসব বিষয় বলতে গেলে লিখতে লিখতে কাগজ কালি শেষ হয়ে যাবে। তবু এসব ভোগান্তির ৫%ও লিখে শেষ করা যাবে না। রাষ্ট্রের সবগুলো সেক্টরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রশাসনিক হয়রানি আর বাজারের লাগামহীন অনিয়ন্ত্রিত পণ্যমূল্যে জনগণের নিঃশ্বাস যায় আর আসে। তাহলে হবে কী? এত বড় রাষ্ট্র, বিশাল জনগণের সুখ-দুঃখের দেখভালের দায়িত্ব কার কাছে? জনগণ কার কাছে গিয়ে এসব ভোগান্তির অভিযোগ দেবে সেটাও ভেবেচিন্তে পাচ্ছে না। জনগণ অর্থ সরকার, সরকার অর্থ জনগণ। জনগণের সুখ-দুঃখ, ন্যায়-অন্যায়, পাওয়া না পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের যেসব প্রশাসন ও উপপ্রশাসন রয়েছে, তাদেরই দেখার কথা জনগণের হাসিকান্না। কোথায় গেল রাষ্ট্রীয়ভাবে সে দায়িত্ব পালনের নাগরিক অধিকারের কথা। পদে পদে নাগরিকের ভোগান্তি, প্রশাসনিকভাবে নানাবিধ হয়রানির কারণে জনগণ কী পরিমাণ রাষ্ট্রের কাছে আস্থা হারাচ্ছে, সেটা চলমান প্রশাসনকে অনুধাবন করা দরকার। সবগুলো সেক্টর অনিয়ন্ত্রিত  ও বেপরোয়া। কেন এভাবে রাষ্ট্রের সেক্টরগুলো ক্রমান্বয়ে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাচ্ছে সেটাও ক্ষমতাসীনদের ভাবা উচিত।

রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা থাকবে, তাদের নির্দলীয় চিন্তায় দেশ চালানো উচিত। একটি গণতান্ত্রিক দেশে বহু ধরনের দল ও মতের মানুষ থাকে। সবগুলো দল একসাথে ক্ষমতায় যেতে পারে না। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায়ে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আরোহণ করে। আর ক্ষমতায় গেলে তখন শাসকদলকে জনগণের মৌলিক অধিকার নিয়ে কাজ করতে হবে। তখন হয়ে যায় সেটা রাষ্ট্রীয় সরকার। জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার ও প্রশাসন। সে চিন্তা আর চেতনা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালিত হলে তখন রাষ্ট্র সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়। আর যখন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে শৃঙ্খলা থাকে না, তখন অধীনস্থ প্রশাসনীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করা যায় না। তাহলে কি জনগণ সে ধরনের রাষ্ট্রীয় সমস্যায় অবতীর্ণ হয়েছে? রাষ্ট্রের আদেশ নিষেধ বক্তব্য হুকুম ও নির্দেশনা কেন বাস্তবায়িত হচ্ছে না। আর যখন রাষ্ট্রের প্রশাসনিক আদেশ-নিষেধ পালন হবে না, তখন তো রাষ্ট্রের প্রতিনিয়ত শৃঙ্খলা ভঙ্গ হবে। জনগণ এখন মনে হয় সেটাই দেখছে। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় থেকে প্রশাসনিক সবগুলো সেক্টরে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ভোগান্তির শিকার জনগণ। জনগণের অধিকার দেখার দায়িত্ব যাদের কাছে রয়েছে, তারা এখন নাক কান বন্ধ করে বোবার স্বর্গে বাস করছে। তাহলে কেন তারা এসব অন্যায় অনিয়ম দেখেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখছে না জনগণ? তাহলে কি রাষ্ট্রের নির্দেশনা তারা রক্ষা করছে না? সরকারের ক্ষমতাসীন মন্ত্রী-এমপিরাও প্রশাসনের অনিয়মের কথা জনগণের সাথে সুর মিলিয়ে বলে। আর জনগণ তো যেভাবেই সম্ভব সেভাবেই বলে যাচ্ছে। বাস্তবে কোনো প্রতিকার কোথাও দৃশ্যমান নয়। অনিয়ম দুর্নীতি আর ভোক্তা হয়রানির অভিযোগ বলে লিখে শেষ করতে পারব না। জনগণের কথা হলো এসব অনিয়মের প্রতিকার। প্রতিকারের ক্ষমতা সরকারের। সরকারি দফতর ও দায়িত্বশীলরা তা বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু কেন করছে না সে জায়গায় আমার কথা। তাহলে কি ধরে নেব সরকারের বাস্তব নীতি-নৈতিকতা দুর্বল হয়ে পড়ছে? সরকার কি অনিয়ম-দুর্নীতি লাগামহীন ব্যবসার নামে ভোক্তা হয়রানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না? যদি সরকার জনগণের মৌলিক অধিকার পূরণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে রাষ্ট্রীয়, সামাজিক নিরাপত্তা আর শৃঙ্খলায় কী পরিণতি হতে পারে সেটায় আশঙ্কা করছে সমাজসচেতন জনগণ। যে করেই হোক রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ থেকে নিম্নস্তর পর্যন্ত শৃঙ্খলার বাস্তবায়ন থাকতে হবে। অন্যথায় উচ্ছৃঙ্খল ও অনিয়ন্ত্রিত জাতিতে পরিণত হবে এ জাতি।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads