• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড

সমৃদ্ধ জাতি গঠন ত্বরান্বিত হবে

  • প্রকাশিত ১০ মে ২০১৯

আফসানা রিজোয়ানা সুলতানা

 

 

বাংলাদেশে বর্তমানে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারত্ব। যদিও অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে আমাদের অর্থনীতির অবস্থা বর্তমানে অনেক ভালো। কিন্তু তারপরও বর্তমানে বেকারত্বের যে উচ্চ হার তা আমাদের জন্য কোনো সুসংবাদ বয়ে আনে না। বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর ৪২তম অর্থনীতির দেশ। আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৬৭৭ মার্কিন ডলার। এখান থেকেই স্পষ্ট হয় যে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। কিন্তু একটি বিরাট জনগোষ্ঠীর দেশের অর্থনীতিতে অবদান না থাকা কোনো ভালো কথা নয়। দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে দেশের প্রতিটি মানুষকে তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে সক্রিয় হতে হবে। দেশের উন্নয়ন, অর্থনীতিতে অবদান রাখতে হবে। দেশের প্রতিটি মানুষের মেধা ও কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ, যার মধ্যে ১৪ লাখ পুরুষ ও ১৩ লাখ নারী। অথচ ২০১৫-১৬ অর্থবছরেও দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ। আমরা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করি। আবার অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন করি। তার কিছু যৌক্তিক কারণও আছে। আমাদের গড় আয়ু যেহেতু বৃদ্ধি পেয়েছে, তাই চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা আর অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো উচিত বলে অনেকেরই অভিমত। কিন্তু আমার কথা হলো, আমারা কেন শুধু চাকরির আশায় পড়ে থাকব। আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি প্রতি বছর চাকরির বাজারে যে ২২ লাখ তরুণ প্রবেশ করছে, তাদের সবার চাকরির ব্যবস্থা করা কি সরকারের পক্ষে সম্ভব? অবশ্যই না। তাহলে কি অবধারিতভাবে দেশে বেকার জনগোষ্ঠী বেড়েই চলবে? বর্তমানে বেসরকারি সেক্টরগুলো তরুণদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হলেও কোম্পানিগুলো কাজের ক্ষেত্রে বিদেশি দক্ষ কর্মীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আর কাজ হারাচ্ছে আমাদের শিক্ষিত অদক্ষ তরুণরা।

বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। আমাদের এই বিপুল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে হবে। আমাদের দেশের বেকারত্বের মূল কারণ নিহিত রয়েছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষিত মানুষ গড়ে তুলছে ঠিকই; কিন্তু দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে পারছে না। কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেওয়া হয় না। আবার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যখন তরুণরা নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করছে, বাংলাদেশে সেখানে তরুণরা চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে ঘরে বসে আছে। যদিও এখানে সবটুকু দোষও তাদের দেওয়া যায় না। আমাদের দেশে উদ্যোক্তা হতে গেলে প্রথমেই বেশকিছু কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই উদ্যোক্তারা যেন নিজে থেকে কোনো কিছু করতে পারে, সেজন্য সহজ ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি মানুষের জীবনে যেমন একবার কোনো সুযোগ আসে, তেমনি প্রতিটি জাতির জীবনেও একটি সুযোগ আসে। আর তা হলো ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড। এ সময়ের মধ্যে একটি দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষই কর্মক্ষম থাকে। অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের বয়সের সীমা থাকে ১৫-৬০ বছরের মাঝখানে। এ সময় নির্ভরশীল মানুষের থেকে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বেশি হয়। প্রতি ২ জন কর্মক্ষম মানুষের বিপরীতে মাত্র ১ জন নির্ভরশীল মানুষ থাকে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই সময় যেমন একটি পরিবারের আয় বাড়ে, তেমনি দেশও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়। একই সঙ্গে খুশির এবং দুঃখের বিষয় এই যে, আমরা বর্তমানে এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড সময়টি পার করছি কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার করতে পারছি না। অথচ অর্থনীতিবিদদের মতে, এই সুযোগ একটি জাতির জীবনে একবারই আসে।

চীন আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। ২০৫০ সালের মধ্যে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বলে অর্থনীতিবিদদের অভিমত। চীনের এই অভাবনীয় উন্নতি সম্ভব হয়েছে আশির দশকে তারা তাদের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পেরেছিল বলে। আজ আমরা যদি আমাদের এই সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগাতে না পারি; কর্মমুখী শিক্ষাকে গ্রহণ না করে, নিজের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে না লাগিয়ে শুধু চাকরির আশায় বসে থাকি, তাহলে এ দেশ এবং জাতির পক্ষে ভালো কিছু করার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তাই তার আগে এখন থেকেই আমাদের তরুণদের মেধা আর কর্মদক্ষতার পুরোপুরি এবং যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। কর্মমুখী শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে দেশে একটি দক্ষ প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে, যারা শুধু চাকরির আশায় বসে থেকে দেশে বেকারত্বের পাল্লাকে ভারী করবে না। সমাজের প্রতিটি মানুষ যদি তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে এসে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটায়, তাহলে দেশে আর কোনো বেকার থাকবে বলে মনে হয় না।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, কৃষি অনুষদ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads