• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

প্রকৃতির বৈরিতা বাড়ছে

পরিবেশবান্ধব হওয়ার বিকল্প নেই

  • প্রকাশিত ১৮ মে ২০১৯

বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। এ কথাটি এখন শুধু পাঠ্যবইতেই খাটে। চিরচেনা বাংলাদেশের এই ছয়টি রূপই বাংলাদেশকে দিয়েছিল রূপসী বাংলার খেতাব। সময়ের বিবর্তনে এসে সবকিছুই পাল্টে যাচ্ছে। এখন আর ঋতুভিত্তিক বাংলাদেশকে চেনা যায় না। বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের আবহাওয়ার প্রকৃতি। এখন আর ছয় ঋতুর কোনো ঋতুকেই আলাদা করে চেনার উপায় নেই। এক ঋতুতে আরেক ঋতুর বৈশিষ্ট্য দেখা দিচ্ছে। দেশে গড় তাপমাত্রা অনেক বেড়েছে। প্রতি বছরই তাপমাত্রা বৃদ্ধির রেকর্ড ভাঙছে। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে জনজীবনের হাঁসফাঁস বেড়েছে। কমে গেছে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। দেখা যাচ্ছে শীতে নেই শীতের প্রকোপ। আবার কখনো অনাবৃষ্টির কারণে খরা কিংবা অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা হচ্ছে। এসবই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলা থেকে প্রকাশিত ‘এশিয়া ও প্রান্ত মহাসাগর অঞ্চলে মানবজীবনে জলবায়ুর প্রভাব’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশের প্রায় ১৩ শতাংশ ভূখণ্ড সমুদ্রে বিলীন হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশে বন্যার প্রভাব ২০ শতাংশ বাড়তে পারে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি পর্যন্ত বাড়লে ২০৮০ সালে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ৬২ সেন্টিমিটার। ফলে সমুদ্র উপকূলে থাকা দেশটির প্রায় ১৩ শতাংশ ভূখণ্ড বিলীন হয়ে যেতে পারে। গবেষকদের ধারণা, ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে পানির উচ্চতা আরো বেড়ে যাবে এবং বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতি বছর আরো বেশি বন্যা, খরা, প্লাবন, সুনামি, ভূমিকম্পের মুখোমুখি হচ্ছে মানবজাতি। দেখা দিচ্ছে খাদ্যাভাব। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে অনেক প্রজাতি। বলা যায় বিশ্বের পরিবেশ পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে চলেছে। অথচ নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে বনাঞ্চল বলতে এখন আর কিছু নেই। বৃক্ষ ও বনে পশুপাখি আর কীটপতঙ্গের বসবাস। তাদের বসবাসের স্থান না থাকায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে পশুপাখি আর কীটপতঙ্গ। এই পশুপাখি কীটপতঙ্গরা ক্ষতিকর পোকা-মাকড় আর মৃত পশুপাখির দেহাবশেষ খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। আমরা জেনেশুনে সেই উপকারী বন্ধুদের আবাসস্থল গাছ-গাছড়া কেটে শেষ করছি!

প্রকৃতিবিমুখ হওয়ার কারণে বাড়ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে। পাহাড় ধসে পড়ছে। প্রকৃতির এসব বিরূপ আচরণের জন্য একমাত্র মানুষই দায়ী। আমাদের নদীগুলো মরে গেছে। পুকুর যা আছে তাও ভরাট করা হচ্ছে। নদী ও খাল খনন হচ্ছে না। বনের গাছ কাটার আগে গাছ লাগাচ্ছি না। বন না থাকায় আমাদের পশুপাখিরাও বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে। মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও সার প্রয়োগ করে আমরা জমির প্রাকৃতিক উর্বরা শক্তি নষ্ট করে ফেলেছি। মাটির বিষ পানিতে মিশে আমাদের মাছের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে। কলকারখানা, যানবাহন ও ইটভাঁটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, শব্দদূষণ, ট্যানারির বর্জ্য, নগরীর সাধারণ ও শিল্পবর্জ্যের অব্যবস্থাপনা সবমিলিয়ে বিষিয়ে তুলেছে পরিবেশকে। পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি, কারখানা ও খামার গড়ে তোলে বিনষ্ট করা হয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। সর্বোপরি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে আমাদের চারপাশের পরিবেশ। ফলে পরিবর্তন হচ্ছে আবহাওয়া ও জলবায়ু, যার আলামত কিন্তু আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি। 

আবহাওয়াবিদদের মতে, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের পাহাড় কাটার ফলে সেখানকার মেঘগুলো দেশের উত্তরাঞ্চলে সরে গিয়ে বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে এবং একই সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর অঞ্চলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রচুর বনায়নের ফলে সেখানে বৃষ্টিপাত কিছুটা বাড়ছে। সামনে ভয়ানক বিপদ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমাদের এখনই উদ্যোগী হতে হবে। গাছ লাগিয়ে সবুজ বনায়ন সৃষ্টি করতে হবে। পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। জনগণকেই সচেতন হয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে। না হলে এর ভয়াল পরিণতির শিকার হবো আমরাই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads