• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
জনসংখ্যা এবং নিয়ন্ত্রণ

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

জনসংখ্যা এবং নিয়ন্ত্রণ

  • মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২৫ মে ২০১৯

দেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে গোটা দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশের মতো একটা গরিব ও দরিদ্র দেশের জন্য এটা সুখকর নয়। বরং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাটাই হবে বাংলাদেশের জন্য কাল। বর্তমানে দেশে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি একেবারেই ব্যর্থ। তাদের কার্যক্রম চোখেই পড়ে না। মূলত পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিকে সফল করে তুলতে হলে দেশের প্রাথমিক শিক্ষক, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন ও খাদেম, সিভিল সোসাইটি, এনজিও এবং জাতীয় মহিলা সংস্থাগুলোকে সংশ্লিষ্ট করার প্রয়োজন রয়েছে। দেশের জনসংখ্যা বর্তমানে কেউ কেউ বলেন ১৭ থেকে ১৮ কোটি। তারপর রোহিঙ্গাসহ অন্যান্যের আগমন। এটিও সরকারের ওপর এক ধরনের বোঝা। কারণ দিন দিন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি। এ কার্যক্রম সরকারি কর্মচারীদের দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। যেমন যাদের দায়িত্ব হবে সরকারি কর্মচারীদের, যারা দুইয়ের মধ্যে পরিবার সীমিত রাখতে ব্যর্থ হবেন, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

 

সরকার জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে, যেখানে কোনো ধরনের অবহেলা ও উদাসীনতাকে প্রশ্রয় দেওয়া সমীচীন হবে না। স্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণকারী কোনো দম্পতির একমাত্র মেয়ে বা ছেলেশিশুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য অগ্রাধিকার প্রদান, ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা, বিনা খরচে শিক্ষাদানের ব্যবস্থাও করতে হবে। এ ছাড়া পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেশের সব চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্য সেবিকা ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির মাঠ পর্যায়ের নারী-মহিলা কর্মচারী, এ সম্পর্কিত বেসরকারি সংস্থা-এনজিও এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারি কর্মসূচি বা কার্যক্রম জোরদার করা যেতে পারে। স্ব-স্ব জেলায় অবস্থিত সরকারি হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে তাদের নিজ নিজ এলাকার জন্য দেয় নির্দিষ্ট দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে হবে।

 

দেশব্যাপী ঘন ঘন ছোট পরিবার সুখী পরিবার এই নামে শহর, বন্দর, গ্রামে মেলা ও ভ্রাম্যমাণ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের ভয়াবহ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে সঠিক সিদ্ধান্ত ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, তাহলে সমাজে তার সুফল মিলবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। জনসংখ্যা সমস্যা যে দেশের এক নম্বর সমস্যা,  একথা দলমত নির্বিশেষে সবাই বিশ্বাস করেন এবং সবাই একথায় একমত যে, শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে অথবা বিপুল দেশি-বিদেশি অর্থ ব্যয় করে এ সমস্যার যথার্থ সমাধান কোনোমতেই সম্ভব নয়। এ সমস্যা সমাধানে দেশের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের মসজিদগুলোর ইমাম, আলেম-ওলামা, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা, এনজিও কর্মী, স্কাউটস, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও সুশীল সমাজকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে মাঠে নামতে হবে।

 

সচেতনতামূলক শিক্ষামূলক ডকুমেন্টারি ফিল্ম নির্মাণ করতে হবে। দেশের বস্তি এবং দরিদ্র-গরিব ও জনসংখ্যা অধ্যুষিত এলাকাগুলো ঘন ঘন টিম পাঠাতে হবে। তাদের সচেতন করে অন্যদেরও সচেতন করার কাজে লাগাতে হবে। সর্বোপরি জনগণকে জড়িত করে একটি পরিকল্পিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আবার স্কুল-কলেজে যদি পাঠ্যসূচির বিষয় হিসেবে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম থাকে এবং অন্যদিকে যদি মাঠপর্যায়ে তাদের উদ্বুদ্ধকরণের দায়িত্ব প্রদান করা যায়, তাহলেও সুফল মিলতে পারে। তবে এসব কার্যক্রমের সফলতার জন্য শিক্ষক, ইমাম, ছাত্র ও পরিবারগুলোকে কিছু আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হলে প্রোগ্রামটি শতভাগ সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

 

শুধু নীতিবাক্য বা ভালো কথা বলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা যাবে না। দরিদ্রতার কশাঘাতে জর্জরিত ও বৈজ্ঞানিক কার্যক্রমে শুধু আহ্বান জানিয়ে বা প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বুদ্ধ করা যাবে না। সামাজিক ও আর্থিক সুবিধা লাভের গ্যারান্টি প্রদান করা এবং পাশাপাশি ভালো কাজের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের প্রশংসাপত্র প্রদানের ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাই এ কাজ শুরু করার দায়িত্ব দেশের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সমাজ ও মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং এনজিওদের দেওয়া যেতে পারে। নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য পরিবার পরিকল্পনার মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সংশ্লিষ্টতা অবশ্যই থাকতে হবে।

 

আমাদের দেশে বিত্তবানদের পরিবারে সন্তানের সংখ্যা একেবারে কম। অথচ একজন রিকশাওয়ালা বা খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে সন্তানের সংখ্যা অধিক। এই খেটে খাওয়া বা বস্তির মানুষের ঘরে অধিক সন্তান জন্মের কারণে দেশে খাদ্য সমস্যার ঘাটতি শুধু বাড়বে তা নয়, বাড়বে সন্ত্রাস ও বিঘ্নিত হবে শান্তি। বস্তির খেটে খাওয়া মানুষ ছেলেমেয়েদের খাওয়া ঠিকমতো দিতে পারে না বলেই পরবর্তীকালে তাদের সন্তানরা দ্রুত বিপথে যায়। তাদের অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে দিয়ে আবার তাদের ঘরে দ্রুত সন্তান জন্ম দেওয়া আরেকটি জাতীয় সমস্যা।

 

দেশ এমনিতেই বেকারত্বে জর্জরিত। দেশের বাইরে কাজের সন্ধান দিন দিন কমতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় জনসংখ্যা রোধ করতে না পারলে দেশের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। সমাজে এখনো শিক্ষক ও মসজিদের ইমামদের মর্যাদা আছে, তাদের পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষা ও মাঠপর্যায়ে কাজে লাগাতে হবে। জাতীয় স্বার্থে অবিলম্বে এ পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক। এ অবস্থায় সরকার দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করতে পারে, যাদের কাজ হবে সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে অধিক জনসংখ্যার পারিবারিক ও সামাজিক কুফল সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা এবং সুখী, সমৃদ্ধ পরিবার ও জাতিগঠনে নিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যার সুফল সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা।

 

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads