• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
কৃষিতে নতুন বিপ্লব ‘জৈব কৃষি’

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

কৃষিতে নতুন বিপ্লব ‘জৈব কৃষি’

  • প্রকাশিত ২৬ মে ২০১৯

আফসানা রিজোয়ানা সুলতানা

কৃষিতে জৈব কৃষির ধারণাটি নতুন নয়। কিন্তু এটি নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। কারণ ষাটের দশকের দিকে ‘সবুজ বিপ্লব’-এর নামে বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্যের জোগান দিতে গিয়ে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে আমরা যেমন চারপাশের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলেছি, তেমনি আমাদের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছি। ক্রমাগত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে জমি হারিয়েছে তার উর্বরতা শক্তি। নষ্ট হয়েছে বাস্তুসংস্থান। হারিয়ে গেছে অনেক প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী। তাই এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের ফিরে তাকাতে হচ্ছে পেছনের দিকে। নতুন করে ভাবতে হচ্ছে জৈব কৃষি নিয়ে। রাসায়নিক সারের ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে মাটিতে বসবাসকারী অণুজীবরা তাদের বাসস্থান হারাচ্ছে। অথচ এই অণুজীবরাই মাটিতে জৈব সার হিসেবে কাজ করে, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। কিন্তু অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে এরা প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। জমিতে নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করলে প্রতি ১০০ কেজির মধ্যে গাছ শুধু ২৮-৩০ কেজি ব্যবহার করতে পারে। বাকি রাসায়নিক পদার্থ পানির সঙ্গে ধুয়ে বা গ্যাস আকারে নষ্ট হয়ে পরিবেশকে দূষিত করে তোলে। মূলত জৈব কৃষি একটি বাস্তবসম্মত পদ্ধতি, যা ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি টেকসই পরিবেশের নিশ্চয়তা দেয়। এটি একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। এই উপায়ে উৎপাদিত ফসল বা পণ্যকে organic food/organic product বলে। এই পদ্ধতিতে জমি চাষ করলে মাটি সব সময় উর্বর থাকে এবং এই উর্বরতা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। তাছাড়া এটি জমির জীব ও উদ্ভিদ বৈচিত্র্য বাড়ায়। জৈব কৃষিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে খামারজাত সার, কম্পোস্ট সার, আবর্জনা সার, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, হাড়ের গুঁড়া, ছাই, কেঁচো ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। আর কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয় পাতা, কাণ্ড, মূল বা বাকলের রস। নিম বা মেহগনি ইত্যাদির তৈরি নির্যাস প্রয়োগ করেও গাছের রোগবালাই এবং পোকামাকড় দমন কর যায়। তাছাড়া ‘আইপিএম’ বা ‘সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার’ মাধ্যমেও ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন করা যায়। এর একটি ভালো দিক হলো এর মাধ্যমে শুধু ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন করা সম্ভব। বর্তমানে পোকামাকড় দমনের একটি খুবই জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো ‘সেক্স ফোরেমন ফাঁদ’। কোনো ধরনের কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই এটি জমির পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

উন্নত দেশগুলোয় এই ব্যতিক্রমী চাষাবাদ পদ্ধতি এবং organic food ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ সরকারও জৈব কৃষির প্রতি জোর দিচ্ছে। সে লক্ষ্যে সরকার ২০১৬ সালে জৈব কৃষিনীতি অনুমোদন করেছে। ২০১৩ সালে সরকার নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণয়ন করেছে, যার ৫৮ ধারায় বলা হয়েছে ‘মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বা বিষক্রিয়া সৃষ্টিকারী রাসায়নিক দ্রব্য, কীটনাশক বা বালাইনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের জন্য ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা দিতে হবে’। কিন্তু জৈব কৃষির মাধ্যমে এত লোকের খাদ্যের জোগান দেওয়া সম্ভব কি না, সে ব্যাপারে একটি বিতর্ক থেকেই যায়। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপস্থাপিত বিশেষজ্ঞদের মতামত উল্লেখ করা যেতে পারে। তাদের মতে, জৈব কৃষি সারা বিশ্বের প্রতিটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম। Bangladesh Organic Product Manufacturing Association (BOPMA) এরই মধ্যে দেশের এক লাখ একর জমিকে অর্গানিক কৃষির আওতায় নিয়ে এসেছে। ২০২০ সালের মধ্যে পুরো দেশকে অর্গানিক কৃষির আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সংস্থাটি। খাদ্যগ্রহণ আমাদের বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত। সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যকর খাদ্যের। আর একমাত্র জৈব কৃষিই আমাদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের নিশ্চয়তা দেয়। তাই আশা করা যায়, জৈব কৃষির হাত ধরে কৃষিতে ঘটবে এক নতুন বিপ্লব।

লেখক : শিক্ষার্থী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads