• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
সব অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে দুর্নীতি

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

সব অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে দুর্নীতি

  • সাঈদ চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২৮ মে ২০১৯

সব সমস্যার মূলে দুর্নীতি। যে যা-ই বলুক, দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে অন্য সব সমস্যা এমনিই কমে যাবে। দুদিন ধরে বালিশ উঠাতে কত টাকা ধরা হয়েছে তা নিয়ে ট্রল চলছে! মানুষের মনটা এমন হলো কী করে? যাদের সামান্য সুযোগ আছে আর তার সঙ্গে পাপী একটা মন আছে, তারা সবাই যথেচ্ছভাবে দুর্নীতি করছে। আমরা দুর্নীতি কথাটিকেও কমন করে ফেলেছি। দুর্নীতি নাম শুনলে মানুষ এমন একটি ভাব করে যেন— দুর্নীতি নিয়ে কথা বলার দরকার নেই। দুর্নীতি চলবেই! তার মানে তার মনেও দুর্নীতি আছে। দুর্নীতি বন্ধের কথা বললে বুকে ধাক্কা লাগে! জেনে শুনে বুঝে অন্যের টাকা নিচ্ছে। কোনো অপরাধবোধ বা অনুশোচনা নেই। এরাও দেখানো কাজ করে আবার বিভিন্ন ধরনের মানুষের মন ভোলানো স্ট্যাটাসও দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে! বেশিরভাগ মানুষ মুখোশ পড়ে ফেলছে!

 

দুর্নীতি বন্ধে সরকারের আরো কঠোর হওয়া দরকার। যদি দুর্নীতি বন্ধ করা যায়, তবে কালো টাকার এমন ছড়াছড়ি কমবে আর তার সঙ্গে সব ধরনের অপরাধপ্রবণতা কমবে। সততার বাণী শুধু শুনিয়ে লাভ কি, যদি অসৎ কাজগুলো চোখের সামনেই চলতে থাকে! একটি ভাউচার প্রকাশ পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাতেই এত বিস্ময়কর অনিয়ম! এগুলো আসলে একদিনে হয়নি। এর আগেও একটি ফ্যান কিনে লাখ টাকা বিল করেছে, তার কি কোনো শাস্তি হয়েছে? বিটিসিএলের একটি প্রকল্পে ৪৫০টি ফ্যান কেনার জন্য তাই মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার মার্কিন ডলার বা প্রায় চার কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এভাবে বিভিন্ন খাতে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে ‘মর্ডানাইজেশন অব টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কানেকটিভিটি’ বা ‘ডিজিটাল সংযোগ সম্প্রসারণে টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর আধুনিকায়ন’ (এমওটিএন) প্রকল্পে। ২০১৫ সালের মার্চ থেকে প্রকল্পটি গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তবে অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে সমালোচনার মুখে ২০১৭ সালের এপ্রিলে একনেক সভা থেকে এর ‘বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাব’ (ডিপিপি) প্রত্যাহার করা হয়। এই সংবাদটি ছিল ২০১৭ সালের ২৩ মে দৈনিক সমকালে। প্রত্যাহার হলেও এত বেশি টাকা কেন ধরা হয়েছিল, সে ব্যাপারে কি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল?

 

শুধু তা-ই নয়, হাসপাতালের যন্ত্রাংশ কেনার নামে কোটি কোটি টাকা নাই হয়েছে, তার কোনো শাস্তি হয়েছে কি?  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আদেশে ২০১৬ সালে ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতালে এমআরআই মেশিন ক্রয়ের কথা বলা হয়েছিল। ওই মেশিন কিনতে ওই বছরের ৩০ জুন ১৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা ছাড়ও করা হয়। অথচ হাসপাতালে কোনো এমআরআই মেশিন সরবরাহ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছিল, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেশিন সরবরাহ না করেই বিল তুলে নিয়েছে। শুধু ঢাকা ডেন্টাল কলেজ ও হাসপাতাল নয়, আরো কয়েকটি হাসপাতালে যন্ত্রপাতি সরবরাহের নামে ওই অর্থবছরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছিল একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও দুর্নীতি হচ্ছে। গত কিছুদিন আগে গাজীপুর শিক্ষা অফিসে অভিযান চালায় দুদক টিম। সেখানেও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। রডের বদলে বাঁশ দেওয়ার পদ্ধতি এখন ওল্ড মডেল হয়ে গেছে। কোন জায়গাটিতে দুর্নীতি নেই!

 

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্নীতিতে আবার যোগ হচ্ছে কর্মচারীদের বেতন প্রসঙ্গও! এত টাকা যদি অপখাতে ব্যয় হয়, সেক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাধা তো আসবেই। সরকার যথেষ্ট আন্তরিক হলেও দুর্নীতি ম্লান করে দিচ্ছে সব। আজ ওয়াসার পানি দূষিত, নদীগুলো দূষণ নিয়ে ধুঁকছে, খালগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে, খাদ্যে ভেজাল, হাসপাতালে টেস্টের দামেও দুর্নীতি, কৃষকরা মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে দাম পায় না। সরকার কোন দিকে যাবে তবে! দুদক যা করছে, তার দিক থেকে হয়তো সর্বোচ্চ কিন্তু আরো অনেক কিছু করার আছে এবং তার জন্য সরকারের আরো আন্তরিকতা প্রয়োজন।

 

সরকারি চাকরি একবার পেলে আর যায় না। এমন নিয়ম হতে পারে না। দুর্নীতির প্রমাণ পেলে চাকরি থেকে বহিষ্কার করুন, সঙ্গে সঙ্গে সেখানে সৎ মানুষ নিয়োগ দিন। যে কোনো দুর্নীতি প্রমাণ হলে তার বিরুদ্ধে দ্রুত বহিষ্কারের মতো কঠোর ব্যবস্থা নিন। এভাবে চলতে থাকলে একসময় সবাইকে জেলে নেওয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। দুর্নীতির অপরাধীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অনেক কষ্টে পাওয়া বাংলাদেশের মানুষ অনেক কিছু চায় না। তারা নির্ভরতা চায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দেশে এরা কারা এমন মানুষ সৃষ্টি হলো যে, যেভাবেই হোক টাকা উপার্জন করতে হবে! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বর্তমান বিশ্বে প্রভাবশালী, জনদরদী এবং মানবিক একজন মানুষ। তিনি আজ বাংলাদেশকে যেখানে নিয়ে গেছেন, সেই গর্বের জায়গায় সাধারণ মানুষ যদি দুর্নীতির শিকার হয়, সেবা না পায়, মানুষ যদি কষ্টে থাকে তা সত্যিই বড় বেশি বেমানান। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ, এখনই কঠিন সিদ্ধান্ত নিন দুর্নীতি কীভাবে বন্ধ করবেন। দুর্নীতি প্রতিরোধে আরো কাজ বাড়াতে হবে। দুদককে শুধু দুর্নীতি দমনে কাজ করলে হবে না। করতে হবে সচেতনতার কাজ, তথ্য জানানোর মতো কাজ ও মানুষকে আস্থায় ফিরিয়ে আনার কাজ। এ জন্য দুর্নীতিবাজকে শাস্তি দেওয়ার প্রযোজ্যতা অনেক বেশি। সৎ মানুষের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধে আরো কাজ বাড়াতে হবে। দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটিগুলোকে আরো কার্যকরভাবে উপস্থাপন করতে হবে। সরকারকেও আরো বেশি সহযোগী হতে হবে দুদকের।

 

লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads