• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
প্রয়োজন ভোগান্তিহীন ও নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা

ছবি : সংগৃহীত

সম্পাদকীয়

প্রয়োজন ভোগান্তিহীন ও নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা

  • প্রকাশিত ০৩ জুন ২০১৯

সাহাদাৎ রানা

 

দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এ সময় রাজধানী থেকে প্রায় ১ কোটি মানুষ নাড়ির টানে গ্রামের বাড়িতে ছুটে যায় প্রিয় মানুষদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার অভিপ্রায়ে। তিন বা চার দিনের ছুটিতে কর্মব্যস্ত ঢাকা ছাড়তে গিয়ে এ সময় মানুষকে গলদঘর্ম হতে হয়। নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো আর নির্ঝঞ্ঝাটে পুনরায় এই শহরে ফিরে আসা নিশ্চিত করতেই ঘুম হারাম হয়ে যায়। বাস, লঞ্চ বা ট্রেনের টিকেটের জন্য অবর্ণনীয় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। প্রতি বছর সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশিত আশ্বাস পেলেও প্রত্যাশিত সুফল পায় না বাড়িমুখো মানুষজন। বলা যায় এই নাগরিক সুবিধা এত বছরেও নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে ফি বছর একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়ে বলতেই হয় সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে।

এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। ঈদের আগে নির্দিষ্ট দিনে টিকেট দেওয়া শুরু হলেও তাতে থাকে নানা ফাঁকফোকর। ফলে ভোর রাত থেকে ট্রেনের টিকেটের জন্য অপেক্ষা করেও কাঙ্ক্ষিত টিকেট মেলে না। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্যি, সেই টিকেট পাওয়া যায় বেশি দামে, কালোবাজারিদের কাছে। ইতোমধ্যে যা অনেকটা দৃশ্যমান হয়েছে। একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী ভিআইপিসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বরাদ্দ টিকেট কিনে নিয়ে তা উচ্চ দামে যাত্রীদের কাছে বিক্রি করে বলে অভিযোগ রয়েছে। দেখা যায়, অনেকে সারা রাত টিকেটের জন্য অপেক্ষা করেও টিকেট পায় না। এ জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতকে অভিযান চালাতে হয়। এই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি আসলেই কাম্য নয় সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। ইতোমধ্যে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেন ও বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে কাউন্টারে কাঙ্ক্ষিত টিকেট না পাওয়ার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। এটা অবশ্য শুরুতে নিয়মিত ঘটনা। তবে ধীরে ধীরে সেই অভিযোগের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। অগ্রিম টিকেট নিয়ে মারামারির ঘটনাও এ সময় ঘটে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয় কারো কাছে। এছাড়া রয়েছে আরো অনেক ভোগান্তি। বিশেষ করে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়। এই শিডিউল বিপর্যয়ের শঙ্কায় থাকে প্রায় সবাই। কেননা প্রায় প্রতি ঈদের আগে এ যেন নিত্য ঘটনা। সরকারি চাকরিজীবীরা সাধারণত ঈদের আগের দিন বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে ঈদের আগে মানুষজন বাড়িতে পৌঁছতে পারে না। এমনও দেখা গেছে ঈদের দিন সকাল বা দুপুরে অনেকের বাড়ি পৌঁছানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। এবার যেন এমনটা না হয় সেটাই প্রত্যাশা।

এত গেল ট্রেন প্রসঙ্গ। ঈদে বাড়ি যাওয়ার আরো একটি বাহন হলো নৌপথ। এই পথ নিয়েও রয়েছে বিস্তর অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা। কারণ ঈদ সামনে রেখে বাসের মতোই ফিটনেসবিহীন লঞ্চ নতুন করে রঙ দিয়ে নদীতে নামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মালিকরা, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এছাড়া নতুনের মতো দেখানো এসব লঞ্চে ধারণক্ষমতার চেয়েও নেওয়া হয় অতিরিক্ত যাত্রী। মানুষজন উপায় না দেখে বাধ্য হয়ে ওঠেন। অনেক সময় ঘটে লঞ্চডুবির ঘটনা। এবার ঝড়ের মৌসুমে ঈদ হচ্ছে বলে অন্যবারের চেয়ে এমন শঙ্কাটা একটু বেশিই। তাই কর্তৃপক্ষকে এ সময় একটু বেশিই সতর্ক হতে হবে। নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ। বিশেষ করে ফিটনেসবিহীন লঞ্চ যেন চলাচল করতে না পারে, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রাখতে হবে। নৌপথে আরো একটি প্রধান সমস্যা হলো অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন। বিশেষ করে ঈদের সময় এই প্রবণতা লক্ষ করা যায় প্রায় সব লঞ্চের ক্ষেত্রে। মালিকরা বেশি মুনাফার লক্ষ্যে এমনটা করেন। সঠিক ও কার্যকর উদ্যোগ নিলে এটা রোধ করা সম্ভব। লঞ্চঘাটগুলোতে বিশেষ করে সদরঘাটে ভ্রাম্যমাণ মোবাইল কোর্ট বসালে এক্ষেত্রে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব হতে পারে। এখনো ঈদের বেশ কয়েক দিন বাকি। তাই এ বিষয়ে এখনই উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।  

যে পথে সবচেয়ে বেশি মানুষজন গ্রামের বাড়িতে যায় তা হলো সড়কপথ। আর তাই হয়তো বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয় সড়কপথেই। ঈদ টার্গেট করে ফিটনেসবিহীন, রুট পারমিটবিহীন পুরনো বাস রঙ করে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে সংখ্যা বেড়ে যায় অননুমোদিত বাসের। এগুলোর ফিটনেস না থাকায় অনেক ক্ষেত্রেই রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তা থেকে নষ্ট বাস সরানোর তেমন কোনো ব্যবস্থা থাকে না। এর ফলে তৈরি হয় তীব্র যানজট। একইভাবে এসব বাসের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কাকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না; বরং এ সময় ব্যাপক হারে সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা আমরা লক্ষ্য করি। অনেক সময় ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হয় এ কারণে। এসব দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অদক্ষ চালক। ঈদ সামনে রেখে অনেক সময় আবার অদক্ষ চালকরা স্টিয়ারিং ধরে। আর এদের কারণে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়ে যায়। তাই এ বিষয়ে এখনই সঠিক ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। তাতে হয়তো দুর্ঘটনার বিষয়ে কিছুটা দুর্ভাবনা কমবে। 

এসব তো আছে। পাশাপাশি এ সময়ে আরো মাথাব্যথার কারণ হয় অতিরিক্ত ভাড়া। বাস ও লঞ্চ মালিকরা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়ে দেন। এক্ষেত্রে যেন চলে প্রতিযোগিতা। ফলে সাধারণ মানুষকে বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয়। অতিরিক্তি ভাড়া নেওয়া হলেও অতিরিক্ত যাত্রীসেবা যাত্রীদের ভাগ্যে জোটে না, বরং জোটে বিড়ম্বনা। নির্দিষ্ট সময়ে বাস ছেড়ে না যাওয়া সেই বিড়ম্বনার অন্যতম বড় উদাহরণ। সকালে বাস নির্দিষ্ট গন্তব্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও বাস ছাড়া হয় না। এতে যাত্রীদের পড়তে হয় ভোগান্তিতে।

ঈদের আগে যাত্রাপথে আরো একটি বিড়ম্বনার নাম সড়কের বেহাল দশা। যেসব রাস্তা চলাচলের উপযোগী নয়, সেসব রাস্তা হয়ে উঠে সাধারণ মানুষের জন্য যেন অস্বস্তির আরেক নাম। এখন বৃষ্টির মৌসুম। তাই যেসব রাস্তার অবস্থা ভালো নয় তা এখনই ঠিক করে নেওয়া জরুরি। কেননা বৃষ্টির কারণে এসব অনুপযোগী রাস্তায় পানি জমে পরিণত হয় ছোট ছোট খালে। তাই সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত এখনই এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। কেননা সাধারণ মানুষের এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এর থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় আছে বলেও অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে না। ট্রেন, লঞ্চ ও বাসযাত্রায় এই অসাধু চক্র থেকে সাধারণ মানুষের মুক্তি একান্ত কাম্য। কারণ আধুনিক সমাজব্যবস্থার অন্যতম পূর্বশর্তই ভোগান্তিহীন, নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থার নিশ্চয়তা। 

 

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads