• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
সবার জন্য চাই নিরাপদ পানি

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

সুপেয় পানির সন্ধানে বিশ্ব

সবার জন্য চাই নিরাপদ পানি

  • প্রকাশিত ১২ জুন ২০১৯

পানির অপর নাম জীবন- শৈশব থেকেই মানুষ এই আপ্তবাক্য জেনেছে জ্ঞানবাহন বইয়ের মাধ্যমে। অথচ জীবন ধারণের এই প্রয়োজনীয় হিস্যাটুকু মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এখন পৃথিবীর প্রতিটি জনপদের মানুষকে। মূলত আমাদের চারপাশের পরিবেশ দূষণ, জলবায়ুর পরিবর্তন এর অন্যতম প্রধান কারণ। আর এর জন্য মানুষই দায়ী। তাদের অপরিকল্পিত নগরায়ণ, গ্রিন হাউজ ইফেক্ট, বনায়ন ধ্বংস, নদী ভরাট ইত্যাদির কবলে পড়ে এখন বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব প্রকট হয়ে উঠেছে।  নিরাপদ পানির অভাবে ধুঁকছে এখন সারা বিশ্ব। তবে বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে বাংলাদেশও। অথচ নদীমাতৃক বাংলাদেশে এর প্রাপ্যতার সংকট হওয়ার কথা ছিল না। একুশ শতকে এসে উন্নত দেশগুলোতেও নিরাপদ পানি সরবরাহ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই হাজার বছর আগে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে ইতালির রোম নগরী ছিল বাকি বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় মডেল। সেই রোম নগরীতেও এখন চলছে পানির ভয়াবহ সংকট। দিনে ৮ ঘণ্টা পানি সরবরাহ বন্ধ থাকে ইউরোপের এ গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে, যা বর্তমান পৃথিবীর জন্য হুমকিস্বরূপ।

ঢাকায় পানির বিপদ এখন ভয়াবহ। প্রতি বছর প্রায় এক মিটার করে নিচে নেমে যাচ্ছে ঢাকার ভূগর্ভস্থ নিরাপদ পানির স্তর। স্বাভাবিক নিয়মে ভূগর্ভস্থ পানির যে স্তরটুকু খালি হয় সেটা আবার পরবর্তী সময়ে প্রাকৃতিকভাবেই পূরণ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু আগে থেকেই অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে অতিমাত্রায় নলকূপ স্থাপন করে ইচ্ছামতো পানি তুলে ফেলাসহ নদীনালা, খালবিল ভরাট প্রয়োজনীয় পানির প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে বিরাট বাধা। ক্রমেই ভূগর্ভের পানি শুধু কমছেই। পানি বিশেষজ্ঞরা জানান, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন এখন জাতিসংঘ স্বীকৃত একটি মানবাধিকার। তথ্য-উপাত্ত অনুসারে এখনো বিশ্বের প্রায় ৯০ কোটি মানুষ নিরাপদ পানি সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশনের অভাবে সৃষ্ট রোগব্যাধিতে প্রতি বছর বিশ্বে পাঁচ বছরের কমবয়সী ১৫ লাখ শিশু মারা যায়।

প্রাচীনকাল থেকে সারফেস ওয়াটার বা মাটির ওপরের পানিই ব্যবহার করে আসছিল মানুষ। কিন্তু জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ও শিল্পায়নের দরুন এ পদ্ধতি ক্রমেই অকার্যকর হতে থাকে। শুরু হয় গভীর কিংবা অগভীর নলকূপের সাহায্যে মাটির নিচের পানি ব্যবহার। কিন্তু এর ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নামতে শুরু করে। এ অবস্থায় বর্তমানে বিশ্ব এক গভীর সংকটের মুখে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও মরুকরণের ফলে পানি সংকট আরো তীব্র হচ্ছে। বিশুদ্ধ পানি সংকটের কারণে বিশ্বের ১০০ কোটির বেশি মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আজ ঝুঁকির মুখে। প্রতি বছর বিশ্বে ২৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায় পানির অভাবে কিংবা দূষিত পানি পান করে। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদীর পানি দূষণের কারণে রাজধানীর এক কোটির বেশি মানুষের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন হুমকির মুখে আমাদের জনস্বাস্থ্য।

অন্যদিকে উপকূলভাগের বিপুল এলাকা লবণাক্ততার শিকার। আর্সেনিক দূষণে নিরাপদ পানির সংকট লাখ লাখ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সমস্যা গভীর হলেও এর সমাধানে সরকার এসডিজির নির্ধারিত সময়সীমা ২০৩০ সালের আগেই বাংলাদেশ সবার জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ বিভাগীয় শহরগুলোতে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূ-উপরিস্থিত নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনায় লবণাক্ত এলাকার সাত হাজার পুকুরের পানি পরিশোধন করে লবণাক্ততামুক্ত করা হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে ৩২ হাজার ৬০০টি গভীর নলকূপ খনন করা হয়েছে। বর্ষায় পানি সংরক্ষণে ৪ হাজার ৭০০টি জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। এসবই বর্তমান বিশ্বে পানি স্বল্পতার ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক খবর। আমরা মনে করি, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে দেশবাসী সুপেয় পানির পাশাপাশি নিরাপদ পানির অংশীদার হয়ে উঠবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads