• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
নগরবাসীর যাতায়াত নির্বিঘ্ন করুন

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

অ্যাপভিত্তিক পরিবহনসেবা

নগরবাসীর যাতায়াত নির্বিঘ্ন করুন

  • প্রকাশিত ২৭ জুন ২০১৯

রাজধানী ঢাকার সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনের লাগামহীন নৈরাজ্য সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলছে দিনকে দিন। সরকার পরিবহন সেক্টরকে একটি নীতিমালার মধ্যে আনার উদ্যোগ যতবারই নিয়েছে, ততবারই পরিবহন মালিক সমিতি যদি মনে করে তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তখনই তারা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে মধ্য ও নিম্নআয়ের মানুষের সড়কে চলাচল আজ অবধি সহজ ও সুগম হয়ে ওঠেনি। এ পরিস্থিতিতে ঢাকার রাস্তায় অ্যাপভিত্তিক নতুন পরিবহনসেবা— উবার ও পাঠাও আমাদের আশান্বিত করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি এক্ষেত্রেও দুর্নীতির অপসংস্কৃতির খবর পাওয়া গেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। এটি আজ সাধারণ যাত্রীদের শঙ্কারও কারণ বটে।

ভুয়া কাগজপত্রে শত শত চালক ও গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করে রাইড শেয়ারিং সেবা পাঠাও ও উবার রাজধানীতে ট্রিপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে ভয়ংকর অপরাধ ও নাশকতার আশঙ্কা করা অমূলক নয়। কিছুদিন আগেই খবরে প্রকাশ যে, চট্টগ্রামে এক উবার চালক তার এক নারী যাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছিল। বনানীর আলোচিত ধর্ষণ ঘটনায় ব্যবহার করা হয়েছিল উবারের গাড়ি। এদিকে পাঠাওয়ের মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটছে প্রায়ই, পঙ্গু হচ্ছেন অনেকে। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে একেক সময় একেক ধরনের ভাড়া দেখানোর অভিযোগও রয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যানুযায়ী, পাঠাও মোটরসাইকেলের কারণেই রাজধানীতে দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। তিন বছর ধরে রাজধানীতে চলছে রাইড শেয়ারিং সেবা। আর পর্যায়ক্রমে কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই বিস্তার ঘটেছে এই রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোর। অথচ বিদ্যমান যানগুলোর ভেতরে গণপরিবহন বলুন আর সিএনজিচালিত অটোরিকশাই বলুন— কোনো কিছুতেই নগরবাসীর যথাযথ পরিবহনসেবা মিলছিল না। গণপরিবহনগুলোর সিটিং সার্ভিসের নামে স্বেচ্ছাচারিতার কাছে জনগণ দীর্ঘকাল ধরেই জিম্মি। অন্যদিকে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের অন্যায় আবদার ও আচরণ নগরবাসীকে অনেকটা মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছিল। ঠিক এ সময় ঢাকার রাস্তায় চলতে শুরু করে উবার ও পাঠাওয়ের মতো অ্যাপভিত্তিক পরিবহন। নির্দিষ্ট ভাড়ায় প্রয়োজনের সময় এই অ্যাপভিত্তিক পরিবহনগুলো সাধারণ মানুষের যাতায়াতকে করে তোলে সুগম, স্বস্তিদায়ক ও আরামপ্রদ।

বিপরীতে এমন কোনো অটোরিকশাচালক পাওয়া দুষ্কর, যে মিটারে যেতে রাজি থাকে। দরদাম ঠিক করতে হবে। আবার কখনো যদি কেউ রাজি হয়, সেও দাবি করে ভাড়ার সঙ্গে ৩০-৪০ টাকা বাড়িয়ে দিতে। উপরন্তু মিটারের কারসাজি তো রয়েছেই। এখন প্রশ্ন হলো, মিটারে চলতে কেন চালককে রাজি করাতে হবে; যাত্রী উঠবেন, মিটার অনুযায়ী ভাড়া পরিশোধ করবেন, ইচ্ছা হলে বকশিশ দেবেন, এটাই তো নিয়ম। এ নিয়ম মেনেই তো রাস্তায় নেমেছে তারা। অথচ তাদের গন্তব্যে না যাওয়ার নখরা তো রয়েছেই। অথচ আইন মোতাবেক যাত্রীর পছন্দ অনুযায়ী গন্তব্যে যেতে তারা বাধ্য ছিল।

উবার কিংবা পাঠাও নামক অ্যাপভিত্তিক এই পরিবহনে কোনো ঝামেলা নেই, নেই ভাড়া আর গন্তব্য নিয়ে বাদানুবাদ। পরিবহনও উন্নত মানের। ফলে মিলছে আরামদায়ক ভ্রমণ। সুতরাং অ্যাপভিত্তিক পরিবহনসেবার চাহিদা বাড়ছেই। আর তাই বর্তমানে ন্যায়-অন্যায়ের হিসাব কষতে বসেছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকরা। আমরা মনে করি, সিএনজিচালকরা তাদের অহেতুক অজুহাতগুলোকে পরিত্যাগ করে সোজা পথে এলে তাদের জন্যই মঙ্গল হবে। আবার রাজধানীবাসীকে সুস্থ পরিবহনসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারও হাতে নিয়েছে নানা ধরনের উদ্যোগ। তারই ফলে ১ জুলাই থেকে রাইড শেয়ারিং কোম্পানিগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বিআরটিএ’র সঙ্গে আমরাও আশা করি যে, নিবন্ধন সম্পন্ন হলে অ্যাপভিত্তিক এই পরিবহনগুলোর নানা ধরনের অনিয়ম সমাধান হবে অচিরেই। আমরা এও মনে করি, এ ধরনের অ্যাপভিত্তিক পরিবহনগুলোকে ঢাকার রাস্তায় চলাচলে সহজ ও সুগম করে তুলতে সরকার দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। নগরবাসীর চলাচলের দুর্ভোগ লাঘবে এখনই এদিকে দৃষ্টি দিন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads