• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
 প্রয়োজন স্থায়ী ও টেকসই সমাধান

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

রোহিঙ্গা সংকটে চীনের মধ্যস্থতা

প্রয়োজন স্থায়ী ও টেকসই সমাধান

  • প্রকাশিত ০৩ জুলাই ২০১৯

মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে তার নাগরিক হিসেবে মনে করে না। মূলত এ দ্বন্দ্বের সূত্রপাত থেকে গত সত্তর দশকের শেষ থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটতে থাকে। ৭০ দশক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে অত্যাচার নির্যাতনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। যা আঞ্চলিক রাজনীতির পাশাপাশি বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থাকেও সংকটাপন্ন করে তুলেছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এই রোহিঙ্গারা শরণার্থী ক্যাম্পের বাইরে পাহাড়ি গ্রামগুলোতে বসতি স্থাপন করেছে, স্থানীয় শ্রমবাজার নষ্ট করছে, বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে অভিবাসন এবং সম্প্রতি বঙ্গোপসাগর দিয়ে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের মতো অনৈতিক কাজে তারা জড়িয়ে পড়েছে।

এমতাবস্থায় বাংলাদেশ বরাবরই রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে দ্বিপক্ষীয় আলোচনাকে প্রাধান্য দিলেও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো সাড়া মেলেনি। এমনকি রোহিঙ্গা ইস্যুকে ‘সংকট’ হিসেবে স্বীকার করে নাগরিকদের ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগও নেয়নি দেশটি। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান চীন সফর এ সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখবে। এ প্রসঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য চীনের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হবে। তবে স্মরণ করা যেতে পারে, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সৃষ্ট সংকটের শুরুতে তা নিরসনে চীন মধ্যস্থতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। সে সময় বাংলাদেশ সফররত চীনের বিশেষ দূত সান গোসিয়াং চীন সরকারের এ আগ্রহের কথা ব্যক্তও করেছিলেন।

এ কথা সত্য, মিয়ানমারের সঙ্গে চীনের সম্পর্কই সবচেয়ে গভীর। অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকসহ অনেক ক্ষেত্রেই চীন মিয়ানমারকে শক্তি জোগায়। চীন মিয়ানমারের পাশে থাকার কারণেই মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চাপ প্রয়োগ করেও লাভ হচ্ছে না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও মিয়ানমারকে প্রোটেকশন দিচ্ছে চীন। আর এ কারণেই রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানে চীনের সহযোগিতা খুবই জরুরি। এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেমনটি বলেছেন চীনকে এই বার্তা দেওয়া আবশ্যক যে, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান না হলে সন্ত্রাসী তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে। আর তা ঘটলে, মিয়ানমারে চীনের যে বিনিয়োগ বা বাংলাদেশে চীনের যেসব কার্যক্রম শুরু হয়েছে, সেসব হুমকির মুখে পড়বে। উপরন্তু দীর্ঘদিন রোহিঙ্গা সংকট জিইয়ে থাকলে উগ্রবাদের উত্থানের পাশাপাশি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে চীনের বিনিয়োগ প্রত্যাশা ব্যাহত হবে। তাছাড়া এখনই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ছে। এর ফলে আমাদের দেশের সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার মুখে পড়েছে। এসব থেকে আমাদের দ্রুত পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজন রোহিঙ্গা শরণার্থীর প্রত্যাবাসন।

ইতঃপূর্বে বাংলাদেশ সফরে আসা চীনের বিশেষ দূত সান গোসিয়াংও বলেছিলেন, মিয়ানমার সরকার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হলেও অনেক বিষয়ে তারা সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভরশীল। এ প্রেক্ষাপটে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সংহতি গড়ে একসঙ্গে কাজ করলে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশের আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত। সুতরাং মিয়ানমারের ওপর দীর্ঘদিনের প্রভাব কাজে লাগিয়ে চীন যদি রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে অনুঘটক হিসেবে দৃঢ় ভূমিকা রাখে, তাহলে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই একে স্বাগত জানাবে।

এমতাবস্থায় দেশের মানুষ বিশ্বাস করে, অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বিষয়ের পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে চীনের ওপর কূটনৈতিক দূরদর্শিতা প্রয়োগ করবেন এবং চীনও বাংলাদেশের কথা রাখবে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য মিয়ানমারকে বলবে। তবে ভুলে গেলে চলবে না রোহিঙ্গাদের বৈধ নাগরিকত্বের বিষয়টি। আর এক্ষেত্রে মিয়ানমারের প্রয়োজন ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন। আর এ কথাও ভুলে গেলে চলবে না যে, রোহিঙ্গাদের বৈধ নাগরিকত্ব প্রদানই রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী ও টেকসই সমাধান বয়ে আনতে পারে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads