• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশ জরুরি

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

বিদেশি চ্যানেলের বিরূপ প্রভাব

দেশীয় সংস্কৃতির বিকাশ জরুরি

  • প্রকাশিত ১৫ জুলাই ২০১৯

সংস্কৃতি মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানুষের অধিকার, মূল্যবোধ, ঐতিহ্য এবং বিশ্বাস সংস্কৃতির অঙ্গ। পৃথিবীর বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে নিজস্ব সংস্কৃতি বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু বর্তমান সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের এ যুগে সুস্থ ও নির্মল সংস্কৃতি বিলুপ্ত হওয়ার পথে। বাংলাদেশেও পারিবারিক কলহের উৎস হিসেবে স্টার জলসা, স্টার প্লাস, জি বাংলা ইত্যাদির কারণ জোরালোভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। এসবের নেতিবাচক প্রতিফলনও খবরের কাগজে বের হচ্ছে। আর তাই একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশে এই তিন চ্যানেলের সম্প্রচার দ্রুত বন্ধ করতে হবে বলে দাবি উঠেছে। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে, অতীতের চেয়ে আমাদের দেশে পারিবারিক কলহ আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর অন্যতম কারণ ওই তিন চ্যানেলের বিভিন্ন অনুষ্ঠান। প্রকৃতপক্ষে দেশীয় সংস্কৃতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে এ চ্যানেলগুলো।

এমনকি ‘অ্যাসোসিয়েটেড চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অব ইন্ডিয়া’র এক জরিপে জানা যায়, টিভি অনুষ্ঠানে লাগামহীন যৌনতা ও সহিংসতা প্রদর্শনে রাশ টানতে একটি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ চায় ৬৩ শতাংশ ভারতীয় বাবা-মা। জরিপের ফলাফলে দেখানো হয়, শিশুদের ১০ শতাংশ সহিংস আচরণের জন্য টিভি অনুষ্ঠানের চমৎকার প্রদর্শন দায়ী। জরিপে বলা হয়, চার থেকে ছয় বছরের শিশুরা বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর চেয়ে টিভি দেখতেই বেশি পছন্দ করে। ৭৬ শতাংশ বাবা-মা বিশ্বাস করে টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের কারণেই চার থেকে আট বছর বয়সী শিশুরা অভিভাবকদের শ্রদ্ধা করে না। এই হলো ভারতের অবস্থা। ভারতে আগ্রাসী প্রভাব এখন আমাদের দেশেও পড়তে শুরু করেছে। বলতে দ্বিধা নেই আকাশ সংস্কৃতির অপছায়া এখন গ্রাস করে নিচ্ছে শিশুদের দুরন্তপনা ও স্বপ্ন সুখের শৈশবকে। চার দেয়ালের ভেতর তার জন্য সব বন্দিত্বের আয়োজন! টেলিভিশন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ভিডিও গেম আর মোবাইল গেম রীতিমতো ভূতের আছর হয়ে চেপেছে শিশুদের মনে। অনেক বাবা-মায়ের অভিযোগ ইন্ডিয়ান চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান নিয়ে। শিশুরা এখন অকপটে যেসব হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শিখছে যা শুনে বাবা-মায়েরা বোকা বনে যাচ্ছেন। তারা নিজেরাও জানে না এসব ভাষার মানে কি!

সারা পৃথিবীতে সাম্রাজ্যবাদীরা সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালিয়ে অপসংস্কৃতির মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না অপসংস্কৃতির কারণে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে হাজার বছর এগিয়ে গিয়েও ধ্বংসমুখ সভ্যতায় পরিণত হতে চলেছে ইউরোপ-আমেরিকা। বিয়ে প্রথা ভেঙে গিয়ে এক বিষাক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে দেশগুলোতে। খুন, ধর্ষণ, আত্মহত্যা, বিকৃত যৌনাচার, মাদকাসক্তি ও অপরাধ সংস্কৃতি তাদের জীবনকে নরকের কুণ্ডে পরিণত করেছে। এখন পরিণতির দণ্ড হিসেবে তারা নিজেদের হাতে তৈরি সাংস্কৃতিক দানবের হাতে বন্দি হয়ে পড়েছে। অপরদিকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো বিদেশি সংস্কৃতিকে গ্রহণ করে নিজস্ব সংস্কৃতি হারাতে বসেছে। দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে সুকৌশলে তাদের বস্তাপচা অপসংস্কৃতিগুলো গরিব ও মুসলিম দেশগুলোর ওপর চালিয়ে দিচ্ছে। পরিণতির প্রতিফলন আমরা কি দেখছি? বিনোদনে, সাহিত্যে পশ্চিমবঙ্গীয় ঢং। পোশাকে, খাওয়ায়, পরিভাষায় আমাদের কতিপয় প্রজন্মের পরিচয় কিম্ভূতকিমাকার। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার আমাদের সম্ভবনাময় যুবসমাজ। বাংলা চ্যানেলকে তারা দেখতেই পারে না। এসব কারণে ভেঙে যাচ্ছে পরিবার প্রথা, বেড়ে যাচ্ছে অবাধ যৌনাচার। পারিবারিক জীবনের সুন্দরতম দিকগুলো উপেক্ষা করে মানুষদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে অন্ধকারের দিকে।

ভারতীয় চ্যানেলে প্রচারিত অপসংস্কৃতির এই আগ্রাসন থেকে বাঙালির চিরায়ত সভ্যতা বাঁচাতে আমাদের মিডিয়াকে বিশেষ ভূমিকা নিতে হবে এখনই। লক্ষ করা যাচ্ছে, আমাদের দেশীয় মিডিয়াগুলোও ভারতীয় চ্যানেলের অনুকরণে বিভিন্ন অপরাধ অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান তৈরি করছে। এসব বন্ধ করে দেশীয় সংস্কৃতির অনুষ্ঠান নির্মাণে কাজ করতে হবে। দেশের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। আর এসব বাস্তবায়নে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে রাষ্ট্রকে। দেশ ও জাতিকে রক্ষায় কঠোর হাতে দমন করতে হবে অপসংস্কৃতি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads