• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
কার্যকর হোক জীবনমুখী শিক্ষা

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া

কার্যকর হোক জীবনমুখী শিক্ষা

  • প্রকাশিত ১৯ জুলাই ২০১৯

প্রাথমিক পেরিয়ে মাধ্যমিক স্তরে যে শিক্ষার্থীরা আসে তাদের ৪০ শতাংশই ঝরে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তবে অনেক শিক্ষাবিশ্লেষকের মতে, বাস্তবে ঝরে পড়ার হার ৫০ শতাংশের কাছাকাছি হবে। এ বিষয়ে শিক্ষাবিদদের অভিমত, প্রাথমিকে প্রায় শতভাগ শিশু স্কুলে এলেও সমাপনীতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে গড়ে ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে যাচ্ছে। আর উচ্চ মাধ্যমিকে ঝরে যাওয়ার হার গড়ে ২১ শতাংশ। সে ক্ষেত্রে ঝরে যাওয়ার হারে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে মাধ্যমিক পর্যায়ে। এর কারণ হিসেবে শিক্ষাবিদরা বলছেন, প্রাথমিকে শিশুকে স্কুলে আনতে উপবৃত্তির পাশাপাশি স্কুল ফিডিংসহ নানা কর্মসূচি রয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে মেয়েদের উপবৃত্তি ছাড়া তেমন কোনো পদক্ষেপ নেই। বিভিন্ন বিশ্লেষণ তথ্য অনুযায়ী মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ঝরে যাওয়ার পেছনে অন্য কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম দারিদ্র্য ও বাল্যবিয়ে। এ ছাড়া দুর্বোধ্য সৃজনশীল পদ্ধতিতেও অনেক শিক্ষার্থী তাল মেলাতে পারছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দূরত্বের কারণেও গ্রামের অনেক শিক্ষার্থী লেখাপড়া বাদ দিচ্ছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪০.২৯ শতাংশই এসএসসি পরীক্ষার আগে ঝরে যায়। ওই সময় এই স্তরে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৯৭ লাখ ৪৩ হাজার ৭২ জন। এর মধ্যে ৫১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৬২ জন ছাত্রী। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ঝরে পড়ার হার বেশি ছিল। ছাত্রীদের মধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে পেরেছে ৫৪.৮ শতাংশ এবং ছাত্রদের মধ্যে এই হার ৬৬.২৮ শতাংশ। ব্যানবেইসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে প্রাথমিকে ঝরে পড়েছে প্রায় ২০.৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী। একই বছর উচ্চ মাধ্যমিকে এই হার ছিল গড়ে ২০.০৮ শতাংশ।

এখন বোঝা যাচ্ছে শুধু স্কুলে ভর্তির সংখ্যা বাড়িয়ে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার প্রবণতা শতভাগ দেখানো ফলাফলটা আসলে কতটা বাস্তবসম্মত। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় গলদ অনেক। প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই বুনিয়াদি শিক্ষা চালুকরণ দরকার যেমন-কৃষি খামার, কারিগরি শিক্ষা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, মানবীয় মূল্যবোধ, শারীরিক শিক্ষা, সৃজনশীল ও সংস্কৃতি গান, নাচ, আবৃত্তি, লেখালেখি, আঁকাআঁকি প্রভৃতি। তাহলে শিক্ষার প্রথম স্তর থেকেই কার ঝোঁক কোন দিকে বা কার মেধার প্রতিফলন কোন বিষয়ে ভালো হবে, তা চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। অতঃপর মাধ্যমিকে শিশু শিক্ষার্থীদের মেধার লক্ষণ আর আগ্রহের ভিত্তিতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার দিকে ধাবিত করতে হবে। মাধ্যমিকে বুনিয়াদি শিক্ষাকে পেশাভিত্তিক লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে নিতে পারলে, যারা নানা কারণে ঝরে যাবে তারাও কিছু না কিছু কাজ করে জীবনযাপন করতে পারবে। শিক্ষাজীবনের পরবর্তী ধাপগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের লিঙ্ক থাকা দরকার। পেশার লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা ছাড়া শিক্ষার সব পর্যায়ে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে না। মোটকথা, শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে। তাহলে ঝরে পড়া যেমন কমবে তেমনি সবার জন্য উপযোগী কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে। তবে এখন মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়া কমাতে সর্বজনীন শিক্ষাবৃত্তি, স্কুলভিত্তিক উৎপাদনমুখী কার্যক্রম ও অংশীদারত্ব ব্যবস্থাপনায় স্কুল টিফিন, মেয়েদের নিরাপত্তা প্রভৃতি বিষয়ে সুবিধা কার্যকর করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা আর উদ্ভাবনী চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে স্কুলে আয়মূলক কার্যক্রম চালু করার কথা ভাবা যেতে পারে। বাঁশ, বেত, কাপড়, কাঠ যে যা তৈরি করতে পারে, সেসব কাজের ব্যবস্থাপনা করে তাদের উৎপাদিত পণ্যকে ‘স্কুল ক্রিয়েটিভ প্রজেক্ট’-এর আওতায় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, কর্মসংস্থান ব্যাংকের সমন্বয়ে অর্থায়ন ও বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেখান থেকে লভ্যাংশের একটা বড় অংশ পাবে শিক্ষার্থীরা। এতে তাদের সৃজনশীলতা ও কর্মস্পৃহা বাড়বে। পাশাপাশি সামান্য হলেও যা আয় হবে, তা তাদের শিক্ষা ও দৈনন্দিন প্রয়োজন বা শৌখিনতা পূরণে কাজে লাগবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads