• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
প্রয়োজন গ্রাম ও শহরের সেতুবন্ধন

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

উন্নয়নে সমতা

প্রয়োজন গ্রাম ও শহরের সেতুবন্ধন

  • প্রকাশিত ২৯ জুলাই ২০১৯

অর্থনীতির ভাষায় বলা হয়ে থাকে কোনো দেশের যদি সত্যিকার অর্থে উন্নয়ন করতে হয়, তাহলে অবশ্যই গ্রামীণ পর্যায়ের উন্নয়ন সবার আগে দরকার। অথচ আমাদের গ্রামগুলো শহরের তুলনায় সুযোগ-সুবিধার দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। বাস্তবতায় আমরা দেখতে পাচ্ছি যদিও বর্তমান সরকার গ্রামবাংলার সার্বিক উন্নয়নের প্রতি অধিক নজর দিয়েছে, গ্রামীণ এলাকার ব্যাপক উন্নয়নও সাধিত হয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধা, রাস্তাঘাট, অবকাঠামো ও প্রযুক্তির পরশে এখন গ্রামবাংলাও আলোকিত হচ্ছে। তারপরও বলা দরকার, উন্নয়ন সমতার বিচারে গ্রামের প্রতি ক্রমাগত উপেক্ষার কারণেই কৃষকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। কৃষকরা এখন ধান চাষ করতে অপারগতা প্রকাশ করছেন। অনেক প্রচলিত ফসলের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ কমে গেছে। এসবের কারণ কৃষক যথাসময়ে পান না ভর্তুকি, সার, কীটনাশক, তেল, উন্নত বীজ, সেচ সুবিধা। কৃষক পাচ্ছেন না ফসল ঘরে তোলার গ্যারান্টি ও ন্যায্যমূল্য। প্রতি বছর হাওরের ফসল পানির নিচে তলিয়ে যায়। কৃষক ও দেশের খাদ্যের বিরাট হুমকি জেনেও যথাসময় এবং স্থায়ী পরিকল্পনায় বাঁধ নির্মাণ হয় না। এসব সমস্যার সমাধানে দ্রুত, স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

আমরা মনে করি, উন্নয়নে সমতা আনতে হলে গ্রামীণ বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। গ্রাম এলাকায় অন্তত উপজেলা পর্যায়ে শিল্প, কারখানা, গার্মেন্ট, কুটিরশিল্প স্থাপনে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। বেসরকারি উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে জায়গা, ব্যাংক লোন, পরামর্শ ও প্রশাসনিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। গ্রামে জন্মায় সব ধরনের ফল ও ফসল। গ্রাম থেকে গেলে শহরের লোকজন তা ভোগ করার সুযোগ পান। কাজেই গ্রাম যত উন্নত হবে শহরের মানুষও সেই সুবিধার ভাগ পাবেন। কেননা গ্রামের সঙ্গে শহরের বাসিন্দাদের নাড়ির সম্পর্ক বিদ্যমান। অপরপক্ষে কেবল শহর উন্নত হলে গ্রামের মানুষের তা থেকে কোনো লাভই হয় না। এজন্যই শহরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে গ্রামীণ উন্নয়নেও সমতা আনাটা খুবই জরুরি।

আশার খবর হলো, আগেরকার সেই গ্রাম এখন আর নেই। বিদ্যুৎ, সোলার, যোগাযোগ, দ্রুত রেমিট্যান্স প্রেরণের সুযোগ, ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাংকিং সম্প্রসারিত হওয়ায় গ্রামীণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক তৎপরতা বেড়েছে। এ নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তিনি একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ উন্নয়নে একটি মাইলফলক মডেল প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এবারো তিনি ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ স্লোগানে গ্রামবাংলাকে শহরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নয়নের পদক্ষেপ নিয়েছেন।

বলা আবশ্যক, গত এক দশকে বাংলাদেশে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুধু শহরে নয়, গ্রামেও দৃশ্যমান। দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধিতে গ্রামীণ অর্থনীতির অবদান অনস্বীকার্য। কৃষি ক্ষেত্রে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন গ্রামে গ্রামে ঘুরে দেখলেও সবাক হূদয় অবাক হবে চারপাশের পরিবর্তন দেখে। রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা, প্রযুক্তির প্রভাবে গ্রাম-শহরের সেই ব্যবধান ক্রমেই কমে আসছে। গ্রামে অভাব এবং অভাবী মানুষের সংখ্যাও কমেছে।

এখন অবাধ তথ্যপ্রবাহের যুগ। তথ্যই বদলে দিতে পারে গ্রামীণ চেহারা, গতি-প্রকৃতি; সূচনা করতে পারে আর্থিক সমৃদ্ধির নবদিগন্ত। চীনের মতো করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধাসহ তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের ফলে কৃষক অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য বিক্রিতে কয়েকগুণ বেশি লাভ করতে পারবেন। অবাধ তথ্যপ্রবাহের এ সুযোগটি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে সম্ভব হতে পারে। এর ফলে কৃষক ন্যায্যমূল্যের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়েও সমৃদ্ধ ও সচেতন হবেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটলে গ্রামপর্যায়ের তরুণরাও হয়ে উঠবেন কর্মোদ্দীপক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads