• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

সম্পাদকীয়

দল হিসেবে কতটা সফল বিএনপি

  • মহিউদ্দিন খান মোহন
  • প্রকাশিত ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি কতটুকু সফল তা নিয়ে পর্যালোচনার সময় বোধকরি এসেছে। দলটি এবার একচল্লিশ থেকে বিয়াল্লিশ বছরে পা রাখছে। তাই গত একচল্লিশ বছরে দলটির সাফল্য-ব্যর্থতার একটি নিকাশ করা যেতেই পারে। বর্তমান সময়ে দল হিসেবে বিএনপিকে আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ মনে হলেও, দলটির সফলতা কিন্তু কম নয়। প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের উনিশ দফা কর্মসূচির অনেক কিছুই দলটি হয়তো বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কিংবা জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকেও কিছুটা হয়তো বিচ্যুত হয়েছে। তাই বলে বিএনপিকে ব্যর্থ বলে চিহ্নিত করা যাবে না। বিশেষত এদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনে দলটি যে অসামান্য অবদান রেখেছে, তা স্বীকার না করলে অবিচার করা হবে। একজন সামরিক শাসকের হতে গোড়াপত্তন হলেও বিএনপি গণতন্ত্রের পতাকাকেই উড্ডীন রাখতে সচেষ্ট থেকেছে। এ সময়ের মধ্যে দলটি অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়েছে, সম্মুখীন হয়েছে বহু ঘাত-প্রতিঘাতের। বিভিন্ন কর্নার থেকে দলটিকে বিপর্যস্ত করার চেষ্টাও কম হয়নি। একাধিকবার ভাঙনের শিকার হয়েছে, দল ছেড়েছেন অনেক ডাকসাইটে নেতা। তাদের কেউ কেউ আবার ফিরেও এসেছেন। নানা রকম ঝড়-ঝঞ্ঝা মোকাবেলা করে দলটি এখনো টিকে আছে। সাংগঠনিক দুর্বলতা থাকলেও জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের সমর্থন এ দলটির প্রতি এখনো আছে। এটাও স্বীকার্য যে, বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বাইরে বিএনপিই দেশের সবচেয়ে বড় দল।

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান নিজেই স্বীকার করেছিলেন, সামরিক শাসন স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নয়। অচিরেই তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার অঙ্গীকারও করেছিলেন। আর তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালের ডিসেম্বরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের ডেকেছিলেন বঙ্গভবনে অলোচনা করতে। সেদিন তৎকালীন ন্যাপ নেতা মশিউর রহমান যাদুমিয়া স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, দেশে গণতন্ত্র চালু করতে হলে সামরিক আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল করতে হবে। মূলত ওই পরামর্শসভার পরই জিয়াউর রহমান তার রাজনৈতিক পদযাত্রা শুরু করেন।

১৯৭৮ সালের গোড়ার দিকে রাষ্ট্রপতি জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল-জাগদল। পৃষ্ঠপোষকতা দিলেও তিনি নিজে ওই দলে সম্পৃক্ত হননি। কারণ তার লক্ষ্য ছিল সুদূরপ্রসারী। আওয়ামী লীগকে মোকাবেলা করতে হলে যে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম দরকার, তিনি সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই ওই বছর ৩ জুন অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে সামনে রেখে জাগদল, ভাসানী ন্যাপ (মশিউর), ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, মুসলিম লীগ, লেবার পার্টি ও তফসিলী জাতি ফেডারেশন সমন্বয়ে গঠিত হয় জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট। এই ফ্রন্ট গঠনের নেপথ্য কুশীলব ছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়া। পরে তিনি এই ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সে সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কয়েকটি দল মিলে গঠিত হয়েছিল গণতান্ত্রিক ঐক্য জোট। ওই জোটের প্রার্থী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল (অব.) এমএজি ওসমানী। গুরু-শিষ্যের এ ভোটযুদ্ধে জিয়াউর রহমান জয়ী হন বিপুল ভোটাধিক্যে। এরপরই জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টভুক্ত দলগুলোর সমন্বয়ে তিনি বিএনপি গঠন করেন এবং সে দলের চেয়ারম্যান হন।

গঠিত হওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই বিএনপি সারা দেশে ব্যাপক জনসমর্থন পায়। এর মূল কারণ ছিল রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ইতিবাচক ভাবমূর্তি। জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষের কাছে অপরিচিত ছিলেন না। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিকামী বাঙালির কাছে পরিচিতি পান তিনি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় নভেম্বরে সংঘটিত ক্যু পাল্টা ক্যু দেশবাসীকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। সে সময় রাষ্ট্রক্ষমতার পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। তিনি অত্যন্ত দক্ষ হাতে সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন, সামাজিক অস্থিরতা দূর করতেও সক্ষম হন। ফলে জনসাধারণের মধ্যে জিয়াউর রহমানের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়। এরপর ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে গ্রামে-গঞ্জে তার ছুটে বেড়ানো এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে তার উদ্যোগ তাকে তাদের কাছাকাছি নিয়ে যায়। সেনাশাসক জিয়াউর রহমান পরিণত হন জনপ্রিয়  রাজনীতিকে। তার এ ইতিবাচক ভাবমূর্তিই বিএনপিকে অসম্ভব দ্রুততায় জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য দলে পরিণত করে। তাছাড়া রাষ্ট্রক্ষমতার পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত দল হিসেবে বাড়তি সুবিধাও পায় বিএনপি।

চেয়ারম্যান হিসেবে জিয়াউর রহমান বিএনপিকে নেতৃত্ব দিতে পেরেছিলেন মাত্র দুই বছর আট মাস। ১৯৮১ সালের ৩০ মে নিহত হন তিনি। তার এ স্বল্পকালীন নেতৃত্বে বিএনপি বেশ শক্তিশালী একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। জিয়াউর রহমান নিজেও বুঝেছিলেন, তার দলে বিভিন্ন ধরনের সুবিধাবাদীরা জায়গা করে নিয়েছে। তাই তিনি দলকে পরিচ্ছন্ন করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় বর্ধিত সভার বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের দলে কিছু সুযোগসন্ধানী ও দুষ্কৃতিকারী ঢুকে পড়েছে। খুব শিগগিরই আমরা এদের চিহ্নিত করে দল থেকে বের করে দেব।’ কিন্তু সে সময় তিনি আর পাননি।

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপি সংকটের মহাসমুদ্রে পড়ে। সে সময় অনেকেই বিএনপির টিকে থাকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল, বিভিন্ন দল ও সমাজের কর্নার থেকে আসা মানুষগুলো ব্যক্তিস্বার্থের দ্বন্দ্বে বিভক্ত হয়ে পড়বে। তবে ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি জিয়াপত্নী খালেদা জিয়া বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণের মাধ্যমে দলের নেতৃত্বে আসায় বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায় দলটি। এর মাত্র আড়াই মাসের মাথায় সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ সামরিক আইন জারি করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে নেন। ফলে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পুনরায় সংকটে পড়ে বিএনপি। ১৯৮৩ সালে রিয়াজউদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়া, শামসুল হুদা চৌধুরী ও ডা. এম এ মতিন বিএনপিকে দ্বিখণ্ডিত করেন। পরবর্তীকালে এরা তিনজন এরশাদ সরকারের মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টিতে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন।

বিএনপিকে পর্যুদস্ত করতে এরশাদ কম চেষ্টা করেননি। বিভিন্ন সময়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, কর্নেল জাফর ইমাম, আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ ছোটবড় বহু নেতাকে ভাগিয়ে নেন। এমনকি শাহ আজিজুর রহমান, আবদুল আলীম, কে এম ওবায়দুর রহমান, ব্যারিস্টার আবুল হাসনাতরাও দল থেকে বেরিয়ে যান। তারপরও বিএনপি নিঃশেষ হয়ে যায়নি। সবচেয়ে বিস্ময়কর ছিল, নয় বছরের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পর প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে দলটির সরকার গঠন। রাষ্ট্রপতি জিয়ার প্রতি মানুষের সহানুভূতি এবং নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে জনমনে গড়ে ওঠা বেগম জিয়ার ইতিবাচক ভাবমূর্তির কারণে বিএনপি এ সাফল্য পায়। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছে। এদেশের মানুষের একটি বড় অংশ বিএনপির প্রতি অনুরক্ত। তারা বিএনপিকে আশা-ভরসাস্থল মনে করে। সরকারে গিয়ে বিএনপি বেশকিছু কল্যাণমূলক কাজও করেছে। যেগুলোর বিস্তারিত এখানে উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন। তবে ২০০১ সালে সরকারে আসার পর দলটি বেশকিছু ভুল করে, যার খেসারত এখন দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৭ সালের নির্বাচনে এরশাদকে নিয়ে টানাটানি করতে গিয়ে দলটি তালগোল পাকিয়ে ফেলে। যার প্রেক্ষাপটে ওই বছরের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করে সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ রাষ্ট্রক্ষমতার চাবিটি অলিখিতভাবে নিয়ে নেন। ওই সরকারের করা মামলায় খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ হন ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর। তার অগেই গ্রেপ্তার হন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দুই দলের বহু সংখ্যক নেতা দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হন। জরুরি অবস্থার সরকার দল দুটিকে নিয়ে খেলতে থাকে নানান খেলা। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার চক্রান্তও চলতে থাকে। এরই অংশ হিসেবে একই বছরের ২৫ জুন বিএনপি মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে দিয়ে উত্থাপন করানো হয় তথাকথিত সংস্কার প্রস্তাব; যার মূল উদ্দেশ্য ছিল খালেদা জিয়াকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে অপসারণ। তবে দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সমর্থন না পাওয়ায় তাদের সে চেষ্টা সফল হয়নি। বেগম জিয়া জেলে যাওয়ার আগে আবদুল মান্নান ভূঁইয়াকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি এবং বহিষ্কার করে মহাসচিবের দায়িত্ব দেন স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে। সেই বিপদসংকুল সময়ে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে দলকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন। যদিও পরবর্তীকালে তিনি এবং তার অনুসারীরা দলে উপেক্ষার শিকার হয়েছেন। সে ক্ষোভে কেউ কেউ দল থেকে দূরেও সরে গেছেন।

বিএনপির একচল্লিশ বছরের পথচলায় বর্তমানের মতো দুঃসময় আর পার করেনি। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে যে দলটি সিংহের মতো বলীয়ান হয়ে এগোতে শুরু করেছিল, আজ তা জরাগ্রস্তের মতো কোনোমতে হেঁটে চলেছে। দলটিতে এখন আর প্রাণচাঞ্চল্য নেই। নেতাকর্মীরা হতোদ্যম। পারস্পরিক সন্দেহ-অবিশ্বাস দলটিকে সাবলীল হতে দিচ্ছে না। সমন্বয়হীনতার কারণে কোনো কর্মসূচি নিয়েই তারা এগোতে পারছে না। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত দলটিকে নিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত গন্তব্যে। উনিশ মাস ধরে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতের রায়ে আছেন কারাগারে। তাকে মুক্ত করার জন্য দলটি এ পর্যন্ত কিছুই করতে পারেনি। প্রচার করা হয়েছিল, বিএনপির এমপিরা শপথ নিয়ে সংসদে গেলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ত্বরান্বিত হবে। কিন্তু ওটা যে ওই কয়জনের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার নিমিত্তেই নেতাকর্মীদের প্রবোধ দেওয়া হয়েছিল তা এখন পরিষ্কার। অপরদিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হয়ে অবস্থান করছেন সুদূর লন্ডনে। বলতে গেলে বিএনপি এখন চরম নেতৃত্বশূন্যতায় ভুগছে, যে জন্য দলটি সামনে এগোতে পারছে না।

বিএনপির সাফল্য-ব্যর্থতার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব-নিকাশ এ স্বল্প পরিসরে সম্ভব নয়। তবে এটা বলা যায় যে, জনমনে যে আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে বিএনপি যাত্রা শুরু করেছিল, আজ বিয়াল্লিশ বছরে এসে তা অনেকটাই হতাশায় পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বিএনপি নেতৃত্ব যদি অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে পথচলা শুরু করে, তাহলে দলটির পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে। আর  যদি পুরনো ভুলের চক্রেই ঘুরপাক খেতে থাকে, তাহলে বিপর্যয় তাদের আরো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবে।

 

লেখক : সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads