• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

ইয়াবার বাহক রোহিঙ্গা

এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন

  • প্রকাশিত ০৪ অক্টোবর ২০১৯

অমানুষিক নির্যাতনের মুখে নিজ দেশ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য অসহনীয় বোঝা ছাড়া আর কীইবা হতে পারে। যদিও ধর্মানুভূতি ও মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। তারপরও দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট, পরিবেশের ভারসাম্যতা, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ, ইয়াবাসহ নানা রকম মাদকের বিস্তারে এ দেশের জন্য হুমকিও বটে। উন্নত দেশের পথে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা ইস্যুটি মানবীয় হলেও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধার কারণ। 

খবরে এসেছে, গত দুই বছরে ইয়াবাসহ অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জানা যায়, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই মাদক ব্যবসায়ীদের টার্গেটে ছিল রোহিঙ্গারা। এমন আশঙ্কা ও আলোচনা রোহিঙ্গারা দেশে প্রবেশের পর থেকেই শুরু হয়েছে। বাস্তবে তা-ই ঘটল। তাই এখন  ইয়াবা এবং রোহিঙ্গা দুটোই দেশের জন্য বিপজ্জনক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

রোহিঙ্গারা জীবিকার স্বার্থে এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজকে অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছে। আর এ সুযোগটি মাদক কারবারিদের জন্য সোনায় সোহাগায় পরিণত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মাদক যেভাবে নেশার কবলে যুবক সমাজকে নষ্ট করছে, রোহিঙ্গারাও নানান কাজের ছুতোয় দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা অবশ্যই জীবন বাঁচানো জন্য যেকোনো পথ বেছে নেবে এটাই বাস্তবতা। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, সাময়িক লাভের জন্য এদেশের কিছু অসাধু ব্যক্তি তাদের নানারকম অসামাজিক ও অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়াচ্ছে। যার খেসারত দিতে হবে পুরো জাতিকে। একটি কথা মনে রাখা উচিত, রোহিঙ্গারা যেমন এদেশের নয়, তেমনি এই দেশটিও তাদের নয়। সুতরাং এই দেশের প্রতি তাদের ভালোবাসা না থাকাটাই স্বাভাবিক বিষয়। অস্বাভাবিক হলো, এদেশের মানুষ ব্যক্তিস্বার্থে তাদের ব্যবহার করলে প্রিয় মাতৃভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

রোহিঙ্গারা দেশে প্রবেশের পর থেকে পার্বত্য অঞ্চলের পরিবেশে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অস্থায়ী আভাস ও জীবন বাঁচানোর স্বার্থে তারা অকাতরে গাছ কেটে সাবাড় করেছে। পরিবেশের জন্য এই ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। এরই পাশাপাশি আশ্রিত এলাকায় স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়েছে। পরিবেশ দূষণের ফলে স্বাস্থ্য সমস্যাও প্রভাবিত করেছে আশপাশে। আবার রোহিঙ্গা নারীরা এদেশের যুবসমাজের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কেও জড়াচ্ছে। এর ফলে অসামাজিক কার্যকলাপের বিস্তৃতির পাশাপাশি মরণব্যাধি এইডসসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে বলে বিভিন্ন সময়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। আর এখন ইয়াবার বাহক হয়ে আরেক মরণ নেশা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা। 

তাই রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আমাদের আরো সাবধান হতে হবে এখনই। কোনো অবস্থাতেই যেন তারা ক্যাম্পের বাইরে যাতায়াত করতে না পারে। আবার রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও যেন বাঙালিরা অবাধে মেলামেশা না করতে পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ খুবই আবেগ ও উসকানিপ্রবণ। ধর্মীয় অনুভূতি অযাচিতভাবে আমাদের অতিমাত্রায় স্পর্শকাতর করে তোলে। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রেও মুসলিম বিষয়টি তেমনি পরিলক্ষিত হয়েছে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে- সবার আগে দেশের অস্তিত্ব ও নিরাপত্তা। তাই আমাদের এই আবেগ সংবরণ করতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুটি আমাদের একক ইস্যু নয়। এটি একটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ইস্যু। তাই আমাদের আবেগকে পুঁজি করে কোনো অবস্থাতেই যেন অন্য দেশ বেনিফিশিয়ারি না হয়, সেদিকে আমাদের মনোযোগ থাকা চাই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে যেভাবে বাংলাদেশকে জোরালো বার্তা দিচ্ছে, সেভাবে মিয়ানমারের প্রতি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে জোরালো ভূমিকা নেই। কিন্তু এই প্রশংসার ঝুলি নিয়ে কী করবে বাংলাদেশ? মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি ঠিক থাকলেও ভাবতে হবে, রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ঠাঁই দিতে গিয়ে আমরা আবার নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ব না তো? এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads