• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণসহ প্রতি পাতায় মূল্য সংযোজন

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্যবস্থা নিন

  • প্রকাশিত ০৭ অক্টোবর ২০১৯

নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের খবর ইদানীং বেশ জোরেসোরে উচ্চারিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে ওষুধের দামের ক্ষেত্রে ভোক্তা সাধারণ যে প্রতারিত হচ্ছেন সেই খবরও এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ভোগ্যপণ্যে ফরমালিন, হোটেল-রেস্তোরাঁর অনিরাপদ খাবার, পরিবেশদূষণ—নানাভাবে আজ দেশের মানুষ নাজেহাল হচ্ছে। এরই মধ্যে জীবন রক্ষাকারী যে ওষুধ, সেখানেও দেখা দিয়েছে সন্দেহ আর অবিশ্বাস। এক কথায়, মারাত্মক জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের আপামর সাধারণ মানুষ। কিছুদিন আগেও ‘ভেজাল ওষুধের বাধাহীন দৌরাত্ম্য’ শীর্ষক সংবাদ শিরোনাম হয়েছিল গণমাধ্যমগুলোতে। সুতরাং এমন পরিস্থিতিতে জনসাধারণের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

শুধু রাজধানী নয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এই ভেজাল ওষুধের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে জনসাধারণ। অথচ গত বছরই দৈনিক বাংলাদেশের খবরের আরো একটি প্রতিবেদন ছিল ‘অনুমোদনহীন ওষুধের দোকানের ছড়াছড়ি’। সেখানে বলা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত অনুমোদনহীন ওষুধের দোকানের রমরমা ব্যবসার কথা। দেখা গেছে, আমাদের দেশে প্রায় সব মানুষই অল্পস্বল্প রোগে দ্বারস্থ হন নিজ নিজ এলাকায় গড়ে ওঠা ফার্মেসির ওপর। কিন্তু আমরা কেউই জানি না, ফার্মেসিতে যারা কর্তব্যরত তাদের রোগ ও ওষুধ সম্পর্কে কতটুকু ধারণা রয়েছে। অথচ এরাই নিঃসংকোচে দিয়ে যাচ্ছে রোগের ব্যবস্থাপত্র। বর্তমানে বাংলাদেশের নগর-মহানগর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এই একই চিত্র দেখা যায়। তা ছাড়া ট্রেড লাইসেন্স বা নামমাত্র প্রশিক্ষণ নিয়েই গড়ে ওঠা ওষুধের দোকানে নিজের নামের আগে ‘ডাক্তার’ লিখছেন দোকান মালিক। অনেক ক্ষেত্রে ওষুধের দোকানদার নিজেই চিকিৎসকের ভূমিকা পালন করছে। এরাই নিয়মিত চিকিৎসা দিচ্ছে রোগীদের। আবার নামসর্বস্ব কোম্পানির ওষুধে মুনাফা বেশি হওয়ায় তারা ওইসব ওষুধ বিক্রিতে অধিক আগ্রহী। ফলে তাদের চিকিৎসায় পঙ্গুত্ববরণ করেছেন একাধিক রোগী। এমনকি, প্রাণহানিরও শঙ্কা রয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রে।

সুতরাং সেবার নামে প্রাণঘাতী ভেজাল ওষুধ বিক্রি, অচিকিৎসক কর্তৃক রোগের ভুল ব্যবস্থাপত্র প্রদান এবং অনুমোদনহীন ফার্মেসির ব্যবসা কঠোর আইনের আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি। সারা দেশে ওষুধ বাণিজ্যের এই অরাজক পরিস্থিতির জন্য কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র মুখ্য ভূমিকা রাখছে বলে জানা গেছে। নকল ওষুধ প্রস্তুত ও ভেজাল ওষুধ বিপণনে রাজধানীর মিটফোর্ডকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট, ফার্মেসি সংগঠন, বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কোনো কোনো নেতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উপরন্তু সরকারের মাঠপর্যায়ে থাকা ড্রাগ সুপারদের যোগসাজশে দেশজুড়ে সংঘবদ্ধভাবে গড়ে উঠেছে নকল ভেজাল ওষুধের বিশাল নেটওয়ার্ক।

অথচ এই সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট বিভাগ নানা উদ্যোগ নিলেও ভেজাল কারবারিদের প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারছে না সাধারণ মানুষ। ভেজাল ওষুধ তৈরির কারবারি ও বিক্রেতাদের যথাযথ শাস্তি না হওয়াই এর অন্যতম কারণ। তা ছাড়া ওষুধ সম্পর্কিত জনসচেতনতামূলক প্রচারে নানা বাধা-বিপত্তি থাকায় ক্রেতা জানতেও পারছে না তারা আসলে কী কিনছেন। মূলত ক্রেতাকে রক্ষায় কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। কার্যত কোটি টাকার বিনিয়োগ, বিপুল মানুষের কর্মসংস্থান এবং বিদেশে রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা আমাদের ওষুধশিল্প নিজ দেশেই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না।

বর্তমানে দেশ উন্নত বিশ্বের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। আমাদের ল্যাবরেটরিগুলোও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। এমনকি, ওষুধশিল্পের এমন অরাজকতার ভেতরেও দেশে প্রতিষ্ঠিত মডেল ফার্মেসিগুলো যাবতীয় নকল-ভেজাল ওষুধের দৌরাত্ম্য থেকে ভুক্তভোগীদের রেহাই দিতে কাজ করে চলেছে। এমন পরিস্থিতিতে ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ওষুধের প্রতি পাতায় মূল্য সংযোজন করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে সুপারিশ করছি। অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনাসহ সঠিক দামে ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিতের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত করা এখন সময়ের দাবি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads