• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

তৈরি পোশাক খাত এবং কিছু কথা

  • সাঈদ চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২৫ নভেম্বর ২০১৯

বাংলাদেশ শিল্পে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। অনেক ধরনের বড়, মাঝারি ও ছোট শিল্পে ভরপুর এখন বাংলাদেশ। পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের সাফল্য ও প্রাপ্তি ঈর্ষণীয়। রপ্তানি আয়ের দিক থেকে শ্রমিক উন্নয়নে এবং গ্রিন ফ্যাক্টরির বিস্তারণে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও পোশাক খাত বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে বলে বারবারই মনে করা হচ্ছে। গত মাসের একটি পত্রিকার খবর অনুযায়ী, গত দুই থেকে তিন মাসে প্রায় ২৯টি ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়েছে বিভিন্ন কারণে। প্রশ্ন হলো, এই ফ্যাক্টরিগুলোর শ্রমিকদের এখন কি অবস্থা এবং কেন এই ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ হলো!

শ্রমিকরা বেকার হয়ে যাওয়ার ফলে অর্থনৈতিক একটি চাপে পড়ছে এদের পরিবার এবং নষ্ট হচ্ছে সারা দেশের মূল অর্থনৈতিক অবকাঠামো। এখন দেখতে হবে কেন এই পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ হচ্ছে এবং কীভাবে আমাদের এখান থেকে বের হয়ে আসা যায়। সম্প্রতি দৈনিক ইত্তেফাকের তথ্যমতে, পোশাক কারখানাগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা যেমন বেড়েছে তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেড়ে চলেছে নতুন নতুন বাজার। তার মধ্যে ইথিওপিয়া এবং ভিয়েতনামের নাম বেশি উঠে আসছে। ভিয়েতনামের দিকে ক্রেতাদের বেশি আকর্ষণের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে লিড টাইম কম হওয়া, উন্নত অবকাঠামো, ভালো বন্দর সুবিধা, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার সক্ষমতা।

এর মধ্যে চীনারা তাদের ফ্যাক্টরিগুলো সরিয়ে স্থানান্তর করেছে ভিয়েতনামে। শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশের কোনো কোনো উদ্যোক্তাও ঝুঁকে পড়ছে ভিয়েতনামে বিনিয়োগের ব্যাপারে। এখন এত সমস্যার মধ্যে আমাদের দেশের কিছু সমস্যাও রয়েছে। আগে যেসব ফ্যাক্টরিগুলো গড়ে উঠেছিল, সেখানে আধুনিক প্রযুক্তি, গ্রিন বিল্ডিং কাঠামো এবং সাসটেইনেবিলিটির বিষয়গুলো তেমনভাবে পরিলক্ষিত ছিল না। তার সঙ্গে অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্সের মতো বিষয়গুলোর কারণেই ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়েছে অনেক।

বর্তমানে সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে কাজ করছে হিগ ইনডেক্স। যে বিষয়গুলো এখানে আসছে, সে বিষয়গুলো আগে থেকেই সরকারের দপ্তরগুলো নজরে রাখলে ফ্যাক্টরি চালাতে এবং নির্মাণে এখন অসুবিধায় পড়তে হতো না। দেদার ফ্যাক্টরি নির্মাণ করে তা থেকে যদি ভবিষ্যতে বারবার বন্ধের পাঁয়তারা হয়, তার থেকে আগে থেকেই গ্রিন বিল্ডিং ও সাসটেইনেবিলিটির বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন ছিল। আন্তর্জাতিক বাজার ধরার জন্য যেকোনো উপায়ে এখন সরকারের কাজ করা প্রয়োজন।

আমাদের দেশে যাদের অডিটিং কোম্পানি রয়েছে তাদেরও এক্ষেত্রে ভূমিকা থাকা প্রয়োজন বলে মনে করি। আন্তর্জাতিক যে অডিটগুলো হয়ে থাকে সেখানে একটি ফ্যাক্টরি সম্পর্কে নেগেটিভ অ্যাপ্রোচ লেখার আগে ভেবে দেখা উচিত—এ বিষয়টি কি আসলেই নেগেটিভ কি না অথবা নির্দিষ্ট সময়ে ফ্যাক্টরিগুলো এর থেকে বের হয়ে আসতে পারবে কি না। যেসব ফ্যাক্টরির ইতোমধ্যে গ্রিন ফ্যাক্টরি হয়েছে সরকারের উচিত হবে এদের নিয়ে বারবার তাদের সহযোগিতার ব্যাপারে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া। যারা এখনো গ্রিন হয়নি বা হতে পারছে না তাদের বিষয়েও সরকারের নজরদারি ও সহযোগিতা বাড়াতে হবে। কোনো ফ্যাক্টরিকে একেবারে বন্ধ না করে কীভাবে তাদের উৎপাদন ব্যবস্থা সঠিকভাবে চালানোর ব্যবস্থা করা যায়, সে বিষয়গুলোও খেয়াল করতে হবে। একটি-দুটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেকোনো ফ্যাক্টরির বিরুদ্ধে সামগ্রিক ব্যবস্থা নেওয়ার আগে তা সমাধান করা যায় কি না-সে বিষয়টিও ভাবতে হবে বারবার।

বলা হচ্ছে, আমাদের দেশের লিড টাইম অনেক বেশি যাচ্ছে। ভিয়েতনাম কম সময়ে কাজ করে দিতে পারলে আমাদের শ্রমিকরাও সেটা করতে সক্ষম। কোন জায়গায় টেকনিক্যালি আমরা হেরে যাচ্ছি, সে বিষয়গুলো আরো সূক্ষ্মভাবে ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন। কমপ্লায়ান্সের ক্ষেত্রেও আমাদের সরকারের তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো প্রয়োজন। বিজেএমইএর সভাপতি বলেছেন, আমাদের সবার এগিয়ে আসতে হবে। তবে আমি বলতে চাই, বাজার ধরে রাখতে আমাদের আরো সক্রিয় হতে হবে। সরকারের কাছে আন্তরিক অনুরোধ রাখছি যেখানে যেখানে তৈরি পোশাকশিল্প রয়েছে, সে জায়গাগুলোকে গ্রিন জোনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করুন। সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে তদারকির চেয়েও প্রয়োজন কনসালটেন্সি। যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান পিছিয়ে পড়ছে, সেগুলোকে আধুনিক করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে এখনি। 

বলা হচ্ছে, ডলারের বিপরীতে টাকার মানকে বিবেচনায় নেওয়া হোক। রপ্তানি বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনে বিভিন্ন দেশের উচ্চপদের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো প্রয়োজন। অনেক বিদেশি মানুষ এদেশে এসে আমাদের সূত্র নিয়ে অন্য দেশে তা বিল্ড-আপ করে তাদের সমৃদ্ধ করে দিচ্ছে কি না, সে বিষয়টিও বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। শুল্কমুক্ত সুবিধার বিষয়ে আরো কাজ করতে হবে। তৈরি পোশাকশিল্প বাঁচাতে হবে। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের আরো বেশি সক্রিয়তা এবং শিল্প মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো। রেমি হোল্ডিং, কলম্বিয়া ওয়াশিং প্লান্টের মতো আন্তর্জাতিকমানের ফ্যাক্টরি আমাদের হতে হবে এবং আমরাই তৈরি পোশাকে শীর্ষে থাকব, এটাই প্রত্যাশা। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, শ্রীপুর, গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads