• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

নববর্ষ ২০২০

বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে

  • প্রকাশিত ০১ জানুয়ারি ২০২০

প্রকৃতিতে এখন শীতের আমেজ। মৌসুমের শুরুতেই শৈত্যপ্রবাহ সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে করে তুলেছে ব্যাহত। এমন পরিবেশে নতুন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে পথচলা শুরু হলো খ্রিস্টীয় নতুন বছর ২০২০ সালের। নতুন বছর উপলক্ষে পাঠক, এজেন্ট, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী— সবাইকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রযোজন, গ্রেগরি প্রবর্তিত বর্ষপুঞ্জির আধিপত্য আসলেই অপ্রতিরোধ্য— আমাদের প্রতিদিন তো বটেই, জাতীয় জীবনেও এ পঞ্জিকার অবস্থান অত্যন্ত সুদৃঢ়। ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ, ২১ ফেব্রুয়ারি— আমাদের জাতিসত্তার এই দিনগুলো বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়ে থাকে আজকের গ্রেগরিয়ান বর্ষপুঞ্জিকা অনুযায়ী। আর তাই তো জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ ইংরেজি নববর্ষ উদযাপনে মেতে ওঠে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, বছরটি কেমন কাটবে? উত্তরে বলা যায়, ইতিবাচক আশা নিয়ে নতুন বছরে শুরু হোক আমাদের নতুন পথচলা।

২০২০ এখন মহাকালের অংশ। আর তাই তো বিগত বছরের একটা হিসাবনিকাশ আমাদের সামনে উঠে আসে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনায় সরব ছিল মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও বাংলাদেশে এই শরণার্থীর বিষয়টি। এ নিয়ে বিভিন্ন ফোরামও হয়ে ওঠে সরব। বছর শেষে ভারতের কাশ্মীরে বিশেষ সুবিধা বাতিলে ৩৭০ ধারা রদ এবং নাগরিকপঞ্জি হিসেবে খ্যাত এনআরসি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এর পাশাপাশি উত্তেজনার জন্ম দেয় তুরস্কে সৌদি কনসুলেটে সৌদি সাংবাদিক খাশোগির হত্যাকাণ্ড। তার ওপর ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিভিন্ন ইস্যুতে বছরজুড়েই বালখিল্য সংলাপ।

অন্যদিকে বছরজুড়েই দেশের রাজনীতি ছিল উত্তাপহীন। তবে মাঝেমধ্যেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর দাবি আদায়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অসহযোগিতা প্রকট হয়ে ওঠে। এমনকি, বছরের শেষ সময়ে এসে নতুন সড়ক আইন বাস্তবায়নেও তাদের বিধিনিষেধ জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তা ছাড়া খাদ্যপণ্যের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে, আর কাঁচা বাজারের অবস্থা ছিল হিসেবের বাইরে, রীতিমতো আতঙ্কের। তার ওপর পেঁয়াজের ঝাঁজ এত বেশি ছিল যে বাঙালির রসুই ঘরে পেঁয়াজের বিকল্পও ঠাঁই করে নিয়েছিল অনায়াসে। অন্যদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেলেও নতুন বিনিয়োগের সূচক আশানুরূপ ছিল না। তার সঙ্গে যোগ হয় গুজব সংস্কৃতি। এর কারণে অহেতুক অনেক সাধারণ মানুষকে দিতে হয়েছে প্রাণ। যার মধ্যে নারীও বাদ যায়নি। তবে বছরের শেষে এসে নুসরাত হত্যার বিচার সকল হত্যা খুন ধর্ষণের ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করেছে বলে মনে করি। একই সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সকল দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি জাতিকে নতুন আশায় উজ্জীবিত করেছে। ক্যাসিনো হোতাদের ধরপাকড়; বিভিন্ন সেক্টরে সরকারি কর্তাব্যক্তিদের দুর্নীতির কারণে বিচারের আওতায় আনা; রাহাজানি, চাঁদাবাজিতে যুক্ত নিজ দলের কর্মীদের আইনের আওতায় আনা— একটি পরিচ্ছন্ন নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের কথা বলে। পাশাপাশি চলছে উন্নয়নের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। পদ্মা সেতু, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে মেট্রোরেল ইত্যাদি বড় বড় প্রকল্প সাধারণ মানুষকে করে তুলেছে সত্যই আশাবাদী।

দেশের মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়। এই পথচলার লক্ষ্য দারিদ্র্য কমিয়ে আনা, আর্থিক অসমতা বা বৈষম্য দূর করা। বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের উদ্দেশ্য তো নিচের মানুষদের ওপরে উঠে আসা। সে কাজটি এখন চলছে জোরেশোরে। ওপরের সঙ্গে নিচের ব্যবধান কমল কি না অথবা কতখানি কমল— এই প্রশ্নগুলো তাই সমান জরুরি। আশা করি, বিশ্বে মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশের উন্নতির পাশাপাশি ধনী-দরিদ্রের আর্থিক বৈষম্য কাটিয়ে নতুন বছরে সম্পদের সুষম বণ্টনে জাতীয় নেতৃত্ব সফলকাম হবে। আমরা এও আশা করি, বছর শেষে আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গায় গণহত্যার যে বিচার শুরু হয়েছে, তার সুষ্ঠু ও সঠিক রায় আমরা পাব এবং বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে সহায়ক হবে। নতুন বছরে নতুন স্বপ্ন ও উদ্যম নিয়ে দেশ ও জাতি এগিয়ে যাক, এই প্রত্যাশা করি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads