• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
চাই অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি 

ফাইল ছবি

সম্পাদকীয়

ঢাবি ছাত্রীর শ্লীলতাহানি

চাই অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি 

  • প্রকাশিত ০৯ জানুয়ারি ২০২০

আবারো ধর্ষণকথা! ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছিল নুসরাত নামের মেয়েটি। তার হত্যার বিচারও আমাদের নরপিশাচদের টলাতে পারেনি। আবারো রাজপথ উত্তাল হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায়। বিক্ষুব্ধ গোটা সমাজ। এর দায় মূলত কার? আমাদের বিবেক? কেনই বা নয়? আমাদের পরিবার, প্রতিষ্ঠান, সমাজ থেকে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় এই দুর্বৃত্তরা আজ বেপরোয়া।  

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ধর্ষণ বেড়ে গেছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে, একই সঙ্গে বাড়ছে হত্যা। একইভাবে বাড়ছে নিষ্ঠুরতা। অথচ এই অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় তেমন আনা যাচ্ছে না বললেই চলে। ফলে তারা অপ্রতিরোধ্য। সুতরাং আমাদের ঘরের নারীরা আজ আর নিরাপদ নয়। রাস্তাঘাট, হাট-মাঠ, বাস-ট্রেন, স্কুল-কলেজ, কর্মস্থল কিংবা আপন গৃহস্থল—কোথায় কার কাছে বাংলার নারী নিরাপদ? আজ তাই নির্যাতিত সহপাঠীর বিচার চাইতে এসে শিক্ষার্থীরা বলছে ধর্ষককে জনসমক্ষে ফাঁসি দিতে হবে। হয়তো এটাই পারে ধর্ষকের মনে ভয় জাগ্রত করতে। 

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭৩২ জন। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে দ্বিগুণ যা নিঃসন্দেহে ভয়াবহ এবং উদ্বেগের কারণও বটে। ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জনকে। আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০ জন নারী। নারীর প্রতি সহিংসতার অন্য চিত্রগুলোও ভয়াবহ। ২০১৯ সালে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ২৫৮ জন নারী। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৭০ জন। ২০১৯-এ যৌন হয়রানির শিকার ১৮ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। প্রতিবাদ করতে গিয়ে চারজন নারীসহ ১৭ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ৪৪ পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। উপরন্তু গত বছর যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ১৬৭ জন নারী। তাদের মধ্যে নির্যাতনে নিহত হন ৯৬ জন এবং আত্মহত্যা করেন তিনজন। আর পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৪২৩ জন নারী।  উপরোক্ত খতিয়ানই বলে দিচ্ছে, নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি বৈ কমছে না। এমতাবস্থায় আমাদের কাছে বাংলাদেশে ধর্ষণকে একটি রোগ বা ব্যাধি হিসেবেই মনে হচ্ছে। এর ফলে বাড়ছে আত্মহননের প্রবণতা। অকালে হারিয়ে যাচ্ছে ভবিষ্যৎ আশার আলো। ধর্ষণের ফলে একজন নিরপরাধ মেয়ের জীবনে যে ক্ষতি হয়, সারা জীবন ভালো কাজ করে গেলেও সেই কালো দাগটি ওই মেয়ের জীবন থেকে মুছে দেওয়া সম্ভব নয়। আর সেই ধ্বংসযজ্ঞে পুড়তে থাকে মেয়েটির পরিবারও। মূলত পারিবারিক অবহেলা, অপসংস্কৃতি, ভুল শিক্ষা, ধর্ম-জ্ঞান না থাকা, সামাজিক বৈষম্য, ব্যক্তিত্বহীনতা, বেকার সমস্যা ইত্যাদি ধর্ষণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে মনে করি। একটি ছেলেকে পারিবারিকভাবে সঠিক শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হলে সেই ছেলে কখনো বিপথগামী হতে পারে না। ধর্ষণ রোধে অপসংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত হতে হবে আমাদের। জাগতিক শিক্ষার সঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসন ও নৈতিক শিক্ষা জরুরি। তবেই মানুষ তার বিবেক দ্বারা পরিচালিত হবে। পাশাপাশি সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করতে হবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে। কেননা বেকার সমস্যা ধর্ষণপ্রবণতা বৃদ্ধির একটি কারণ। সুতরাং আমাদের যুবসমাজকে প্রায়োগিক কাজে নিয়োজিত করতে হবে।

ধর্ষণ আজ শুধু ব্যাধি নয়। এটি দেশ ও জাতির জন্য অনেক বড় অভিশাপ। এই অভিশাপের কালো অধ্যায় থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হবে। আর সেই গুরুদায়িত্বটি আমাদের সবার। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ধর্ষণ নামক ব্যাধি ও অভিশাপ থেকে আমাদের সমাজ রক্ষা পেতে পারে। আর তাই এ মুহূর্তে ধর্ষণ রোধে চাই সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ। অতএব নির্যাতিত ঢাবির ছাত্রীর ধর্ষকের বিচার হতে হবে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী জনসমক্ষে অতিদ্রুত এবং দৃষ্টান্তমূলক।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads