• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
প্রার্থীদেরও সচেতনতা দরকার

ফাইল ছবি

সম্পাদকীয়

সিটি নির্বাচনে পলিথিনযুক্ত পোস্টার

প্রার্থীদেরও সচেতনতা দরকার

  • প্রকাশিত ২৭ জানুয়ারি ২০২০

পরিবেশদূষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যখন হুমকিতে রয়েছে, সেই তখন বর্তমান সিটি নির্বাচনে মেয়র কাউন্সিলরদের পলিথিন মোড়ানো বা লেমিনেটেড পোস্টার দেখে নগরবাসী রীতিমতো বিস্মিত! তাদের মনে প্রশ্ন, এই কি আমাদের শিক্ষিত, সচেতন আগামীর নগর পরিকল্পনাবিদ? আমরা এদেরকেই নির্বাচিত করব। অথচ এরাই নগর উন্নয়নে পরিবেশসম্মত রাজধানী উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছেন।

আমাদের মনে রাখতে হবে, পরিবেশদূষণের ক্ষেত্রে বর্তমানে বাংলাদেশ উচ্চমাত্রায় রয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের মূল কারণ। যার ফলে আমাদের এখন বায়ু, পানি, মাটি— সবক্ষেত্রেই দূষণ প্রক্রিয়া মাত্রাতিরিক্ত। এর মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে জনজীবনে ব্যবহূত পলিথিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নগর পরিকল্পনাবিদগণ বলছেন, পরিবেশদূষণে ক্যানসারের মতো নীরব ঘাতক হচ্ছে এই পলিথিন। বিভিন্ন সময়ে পলিথিন ব্যবহার বন্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া হলেও কার্যত তা কোনো কাজে আসেনি। এর বিপরীতে পাটের ব্যাগ ও বস্তা ব্যবহারে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কার্যক্রম পরিচালনারও উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়নি। এর নানাবিধ কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পাটের ব্যাগ ও বস্তার ব্যাপক প্রচলনে এর সহজলভ্যতা আমাদের চোখে পড়েনি।

ইতঃপূর্বে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক আইন-২০১০ অনুযায়ী ধান, চাল, গম, ভুট্টাসহ এখন পর্যন্ত ১৭টি পণ্যে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরিবেশের সুরক্ষা ও দেশের পাটশিল্পের প্রসারে সরকারের এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। একসময় বিশ্বব্যাপী পাটজাত পণ্য, বিশেষ করে পাটের বস্তা ও থলের ব্যাপক কদর ছিল। এটি পরিবেশসম্মত। সময়ের ব্যবধানে বিকল্প হিসেবে পলিথিনের মোড়ক ও প্লাস্টিকের (পিপি) ব্যাগ-বস্তা বাজার দখল করেছে। কিন্তু তা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অবশ্য পলিথিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আইনি সুরক্ষার পাশাপাশি পাটের বস্তা ও থলের মান উন্নয়নও জরুরি।

২০০২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে রাজধানীতে এবং পরে ১ মার্চ থেকে সারা দেশে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। এ জন্য পরিবেশ আইন ১৯৯৫ সংসদে সংশোধনও করা হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ সংশোধন করে পলিথিন উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়, ‘কেউ যদি পলিথিন সামগ্রী উৎপাদন, আমদানি বা বাজারজাত করে, তবে তার শাস্তি হবে ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ড। আর কোনো ব্যক্তি যদি নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন সামগ্রী বিক্রি বা বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রদর্শন, গুদামজাত, বিতরণ ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে, তবে সে ক্ষেত্রে তার শাস্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডই প্রযোজ্য হতে পারে।

এখন আমাদের নির্বাচন কমিশন প্রচারণার শেষ পর্যায়ে এ বিষয়ে প্রার্থীদের সতর্ক হতে আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু পরিবেশের যে ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে। কার্যত ভোটের সময় পোস্টার লাগানোর লোকের অভাব না হলেও ভোট শেষে তা অপসারণে খোদ সিটি করপোরেশনের গাফিলতিও অতীতে দেখা গেছে। তার মানে এবারের এই বিপুল সংখ্যক পলিথিনযুক্ত পোস্টার কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? সেই খাল-বিল, নদী-নারা কিংবা ডাস্টবিন-ভাগাড়ে। তার অর্থ দাঁড়ায় মাটি দূষণ ও পানি দূষণের পাশাপাশি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, যা থেকে রাজধানীবাসীর মুক্তি মিলছে না কিছুতেই। আমাদের আগামীর মেয়র ও কাউন্সিলররা তাকেই বড় করে তুললেন।

আমরা মনে করি, এই অপরাধের জন্য সরকার পলিথিনযুক্ত পোস্টার ব্যবহারের প্রার্থীদের আইনানুযায়ী জরিমানা করবেন, যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে আগামীর জন্য। এই অপরাধবোধ থেকে প্রার্থীরাও সচেতন হবেন এবং নির্বাচিত হয়ে পরিবেশদূষণ রোধে কাজ করতে উৎসাহিত হবেন। আশা করি, দেশ ও মানুষকে পরিবেশদূষণের হাত থেকে রক্ষায় সরকার যথযাথ পদক্ষেপ নেবে এবং পাশাপাশি পাটের ব্যাগ ও বস্তার ব্যাপক প্রসার ঘটাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads