• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে

ফাইল ছবি

সম্পাদকীয়

বজ্রপাতের আধিক্য

সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে

  • প্রকাশিত ২৯ জানুয়ারি ২০২০

আর মাত্র দুই মাস পরে ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে কালবৈশাখি, ঝড়-ঝঞ্ঝা শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে বজ্রপাতের আধিক্য এবং এতে অসংখ্যা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে দেশে কমপক্ষে ১,৭৬০ জন মানুষ নিহত হন। ২০১৬ সালে মাত্র ৪ দিনে বজ্রপাতে ৮১ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৮ সালে নিহত হন ৩৫৯ জন। অন্যদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, বুয়েট, দুর্যোগ ফোরাম, গণমাধ্যম ও একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল পর্যন্ত বজ্রপাতে ২ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। শুধু গত বছর কেবল ৭ মাসে সারা দেশে বজ্রপাতে ২৪৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছেন ৯৭ জন। নিহতদের মধ্যে ২০২ জন পুরুষ, ৩০ জন নারী, ৬ জন শিশু ও ৮ জন কিশোর-কিশোরী।

এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বজ্রপাতের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ। অন্য দেশের তুলনায় এখানে মৃত্যুর হারও বেশি। কিন্তু এর প্রভাব আমাদের দেশে কেন এত বেশি তা খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা, একসময় সেই ব্রিটিশ শাসনামলে বজ্রপাত থেকে রক্ষায় মাটির নিচে পুঁতে রাখা ছিল ধাতব পিলার। কিন্তু আমাদের অসাধু মানসিকতার কারণে কিছু লোভী ব্যবসায়ী সেগুলো রাতের আঁধারে তুলে নিয়ে গেছে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার লক্ষ্যে। আবার বর্তমানে আমরা যথাযথ বিল্ডিং কোড ব্যবহার না করে বাড়ি নির্মাণের ফলে বজ্রপাত হানা দিচ্ছে যত্রতত্র, যেখানে আর্থিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। উপরন্তু নগরায়ণের নামে সর্বত্র বন উজাড় ও বৃক্ষ নিধনের ফলে বজ্রপাত এখন আমাদের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। বজ্রপাতের আধিক্যের জন্য এখন এই তিনটিকে মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। 

এই পরিস্থিতিতে গত বছরই সরকার বজ্রপাতের প্রভাব হ্রাসে সারা দেশে ৫০ লাখ তালগাছের চারা রোপণের উদ্যোগ নেয়। এরই মধ্যে ৩৮ লাখ চারা রোপণ করা হয়েছে। তবে তালগাছ খুব ধীরে বাড়ে। এ জন্য সরকার বিকল্প পদ্ধতি বা ব্যবস্থা নিয়েও ভাবছে। কিন্তু এই ভাবার কাজটি দ্রুত শেষ হওয়া দরকার। বাকি তালগাছের চারা রোপণের বিষয়টিরও সমাধান জরুরি। সরকার যদিও অবকাঠামোগত ও অ-অবকাঠামোগত দুই ধরনের সমাধানের উদ্দেশ্যে গবেষণার ওপর জোর দিয়েছে, কিন্তু এর পাশাপাশি আমাদের হাতে-কলমেও কিছু কাজ দ্রুততার সঙ্গে করা অতীব আবশ্যক। এ ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে সবার আগে। আর এ জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যবইয়ে প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্তকরণ, বজ্রপাতের আগাম বার্তা দিতে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা এবং আগাম সতর্কবার্তা পাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ ও জনগণকে অবহিতকরণ জরুরি ভিত্তিতে করতে হবে। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি ও প্রদর্শন, সচেতনতামূলক গান তৈরি, বিল্ডিং কোডে বজ্রপাত বিষয়ে নির্দেশনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণে সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় বজ্রপাত বিষয়ে সচেতনতা কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রকল্প গ্রহণে সরকারের নির্দেশনা থাকতে হবে ।

আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, বজ্রপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধির সঙ্গে বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের যোগসাজশ রয়েছে। তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লে বজ্রপাতের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় ১২ শতাংশ। সুতরাং বজ্রপাত হ্রাসে সমন্বিতভাবে আমাদের উদ্যোগ অব্যাহত রাখা দরকার। আমরা এখন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় রোল মডেল। তথাপিও সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকেও যুক্ত হতে হবে। এ বিষয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। পূর্বাভাস আরো বাস্তবসম্মত এবং তথ্যনির্ভর হলে ঝুঁকি এমনিতেই কমে আসবে। আর এই পূর্বাভাস স্থানীয় জনগণকে বোঝার ক্ষেত্রে সচেতন করতে হবে। আশা করি, এই বিষয়গুলো সব পক্ষই অনুধাবন করে বজ্রপাত রোধে সমন্বিতভাবে কাজ করবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads