• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
যুবদলের বিশ্বজয়কে সাধুবাদ

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ

যুবদলের বিশ্বজয়কে সাধুবাদ

  • প্রকাশিত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বাংলাদেশের ক্রিকেট টেস্ট স্ট্যাটাসের ১৯ বছরে এসে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছে। এ কথাগুলো বলছি এ কারণে যে, ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি ১০০তম টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে পরাজয়ের ভেতর দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সোনায় মোড়ানো একটি দিন আমরা দেখেছি যা দেশের টেস্ট ভাবমূর্তিকে করেছিল উজ্জ্বল। উপরন্তু ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ‘আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি’তে সেমিফাইনাল খেলা এবং একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট র্যাংকিংয়ে কয়েক দফায় ৬ ও ৭ নম্বরে অবস্থান করা আমাদের ক্রিকেট দলের বিরল যোগ্যতারই প্রমাণ। তারই ধারাবাহিকতায় গত রোববার দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেট বিশ্বকাপে শক্তিশালী ভারতকে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ডার্ক লুইস পদ্ধতিতে ৩ উইকেটে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো দেশের যুব ক্রিকেট দল বিশ্বকাপ জয় করে।

এখন আনন্দের বন্যায় ভাসছে সমগ্র বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক পরিসরে এত বড় বিজয় এই প্রথম আমরা অর্জন করতে সক্ষম হলাম। আমাদের এই অর্জন যেন মাঝপথে হোঁচট না খায়, এখন সেদিকেই নজর দিতে হবে। ক্রিকেটে আমাদের মূল দলের নৈপুণ্যও কম নয়। কিন্তু কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়দের মতবিরোধ, ধর্মঘট আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছিল। তবে এর মধুর সমাপন আমাদের আশ্বস্তও করেছে বটে। এই প্রেক্ষিতে বলতে চাই, দেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ যেন নিজেদের কোনো ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ধসে না যায়। আর এ জন্যেই বিসিবি, খেলোয়াড় আর নির্বাচকদের বন্ধুসুলভ মনোভাব এবং সব ধরনের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থেই কাজ করে যেতে হবে।  মনে রাখতে হবে, বিশ্ব ক্রিকেটে আমাদের অর্জনকে ধূলিস্যাৎ হতে দেওয়া যাবে না।

ইংল্যান্ডের ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট দলটি নজর কাড়ার মতো উন্নতি করেছে। তারা তাদের প্রাপ্য প্রশংসা কুড়িয়েছে।’ বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই নজরকাড়া পরিবর্তন লক্ষ করা যায় অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের আসর থেকে। এরপর ওয়ান ডে, টি-টোয়েন্টি কিংবা টেস্ট খেলায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিশ্ববাসীর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে। বিশেষ করে হোম সিরিজগুলোতে সফররত বিদেশি দলগুলোকে একে একে বধ করায় তারা নায়কে পরিণত হয়। কিন্তু ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা। আবার ক্রিকেট ভদ্রলোকেরও খেলা। এই ভদ্রোচিত অনিশ্চয়তার খেলায় হারজিৎ জানান দিয়ে আসে না। সুতরাং এক বছরের ক্রিকেট খেলায় ওয়ান ডে কিংবা টি-টোয়েন্টি সিরিজ অথবা টেস্টে বিপর্যস্ত হওয়া মানেই সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়া নয়। বিষয়টি আমাদের মনে রাখতে হবে। সম্প্রতি শেষ হওয়া ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সরাসরি খেলতে পেরেছিল একদিনের ক্রিকেট র্যাংকিংয়ে তার ৭ নম্বর স্থান ধরে রাখার কারণে। সুতরাং বাংলাদেশ ক্রিকেটের এমন বিস্ময়কর উত্থানে ক্রিকেটের বিশ্ব মোড়লরাও আজ শঙ্কিত, এ কথা বলা যায় নির্দ্বিধায়। আর আজ একুশ শতকের নতুন শতাব্দীর সূচনায় যুব ক্রিকেটের বিশ্বকাপ অর্জন দেশের ভবিষ্যৎ ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করবে। এসব যুবার এখন থেকেই পরিচর্চা জরুরি। এদের থেকেই বেরিয়ে আসবে আগামী দিনের সাকিব, তামিম, মাশরাফি, মুশফিক।

কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এই ধারাবাহিক উন্নতি ধরে রাখতে হলে আমাদের ক্রিকেট বোর্ডকেও গ্রহণ করতে হবে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা। যার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এগিয়ে যাবে সামনের দিকে। সুতরাং ক্রিকেটারদের সমস্যাগুলোকেও গুরুত্ব দিতে হবে এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো আন্তরিকার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। মুজিববর্ষে দেশের যুব ক্রিকেট দলের এই প্রাপ্তি বাঙালির সব অর্জনকে রাঙিয়ে দিয়ে গেল। বিসিবি ও খেলোয়াড় উভয়কেই যুগপৎ সাধুবাদ জানাই। আমরা মনে করি, সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও ক্রিকেট বোর্ড যৌথ প্রক্রিয়ায় আগামীতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের পরিচর্যায় মনোনিবেশ করবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads