• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান নেতা

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান নেতা

  • শাহ আহমদ রেজা
  • প্রকাশিত ১৮ মার্চ ২০২০

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রধান নেতা ‘বঙ্গবন্ধু’ শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে নিশ্চয়ই বিস্তারিত বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৯৭১ সালের মার্চে যখন স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা হয় তখন বঙ্গবন্ধু ছিলেন পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি। তারও আগে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীকে সভাপতি করে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৫৩ সালের এপ্রিল অধিবেশনে শেখ মুজিব দলের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন (উল্লেখ্য, ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ১৯৫৫ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে দলের নাম রাখা হয়েছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’)। নিজের উপস্থাপিত ৬ দফাকেন্দ্রিক বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে দল দ্বিখণ্ডিত হলে ১৯৬৬ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে ‘পূর্ব পাকিস্তানের’ জন্য সংরক্ষিত ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিতেছিলেন ১৬৭ আসনে। আওয়ামী লীগ পরিণত হয়েছিল একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলে। কিন্তু ‘পশ্চিম পাকিস্তানি’ শাসক গোষ্ঠী এবং সেনাবাহিনী শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বসে। ৮৮টি আসনে জিতে ‘পশ্চিম পাকিস্তানের’ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল পাকিস্তান পিপ্লস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো দুই প্রদেশের দুই সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ ও পিপ্লস পার্টির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের উদ্ভট দাবি তুলে ধরেন। উল্লেখ্য, এই ভুট্টো সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।

ওদিকে ভুট্টোর উদ্ভট দাবিকে অজুহাত বানিয়ে সামরিক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ থেকে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় সমগ্র ‘পূর্ব পাকিস্তানে’ স্বাধীনতার আওয়াজ ওঠে। প্রধান নেতা ‘বঙ্গবন্ধু’ হরতালের ডাক দেন এবং ৭ মার্চ পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে জানাবেন বলে জানিয়ে রাখেন। উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে মওলানা ভাসানী ‘বঙ্গবন্ধু’র প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার লাখ লাখ মানুষের সমাবেশে দেওয়া ভাষণে বঙ্গবন্ধু ইয়াহিয়া খান এবং ‘পশ্চিম পাকিস্তানি’দের তীব্র সমালোচনা করার পাশাপাশি ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধু একই সঙ্গে কৌশল হিসেবে ক্ষমতা হস্তান্তর ও সামরিক আইন প্রত্যাহারসহ চার দফা দাবি ও পূর্বশর্ত হাজির করেছিলেন। ৯১ বাক্যের ওই ভাষণে ‘আপনি আসুন’, ‘আপনি দেখে যান’ ধরনের কথার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি ঢাকায় আসারও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।

পরিস্থিতির চাপে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৫ মার্চ ঢাকায় আসতে বাধ্য হন। পরদিন ১৬ মার্চ থেকে ঢাকাস্থ প্রেসিডেন্ট হাউজে ইয়াহিয়া খান এবং পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে পর্যায়ক্রমিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এসব বৈঠকেও বঙ্গবন্ধু তার ৭ মার্চের চার দফা দাবি ও পূর্বশর্ত তুলে ধরেছিলেন। বিশেষ করে সামরিক আইন প্রত্যাহার এবং আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়ে ইয়াহিয়া খানকে শেখ মুজিব বলেছিলেন, চলমান ঘটনাপ্রবাহ এবং জনগণের মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ দুটির কম কোনো কিছুই পরিস্থিতির জন্য যথেষ্ট হবে না। জবাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেছিলেন, সংবিধান প্রণয়নের আগে সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হলে আইনগত শূন্যতা ও জটিলতার সৃষ্টি হবে। এই পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু দু’পক্ষের আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইয়াহিয়া খানও সম্মত হয়েছিলেন। 

১৬ মার্চ সন্ধ্যা থেকে মুজিব-ইয়াহিয়ার উপদেষ্টাদের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়েছিল। আওয়ামী লীগের পক্ষে সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ ও ড. কামাল হোসেন এবং ইয়াহিয়া খানের পক্ষে লে. জেনারেল শরীফ উদ্দিন পীরজাদা, বিচারপতি এ আর কর্নেলিয়াস ও কর্নেল হাসান এসব বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। প্রথম বৈঠকে আইনগত শূন্যতা ও জটিলতার প্রশ্নে পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিরা বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে জেনারেল ইয়াহিয়া খান এমন একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা আদেশ জারি করতে পারেন, যা সামরিক আইন প্রত্যাহার এবং সংবিধান গৃহীত হওয়ার মধ্যবর্তী সময়কে আইনসম্মত করবে।

জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ১৭ মার্চের একান্ত বৈঠকে কৌশল পরিবর্তন করে নতুন এক প্রস্তাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের’ জাতীয় পরিষদ সদস্যরা প্রথমে পৃথক পৃথক অধিবেশনে মিলিত হয়ে দুই অঞ্চলের জন্য দুটি সংবিধান রচনা করবেন এবং পরে এক যৌথ অধিবেশনে ওই দুটির ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান রচনা করা হবে। দু’পক্ষের উপদেষ্টাদের বৈঠকে তথ্যটি জানিয়ে জেনারেল পীরজাদা বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট এ ব্যাপারে একটি ঘোষণায় স্বাক্ষর করতে সম্মত হয়েছেন— যে ঘোষণাকে সামরিক আইন প্রত্যাহার ও নতুন সংবিধান গ্রহণের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সাংবিধানিক ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। দু’পক্ষের ১৭ মার্চের বৈঠকে এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, প্রস্তাবিত ঘোষণার খসড়া তৈরি করার আগে উভয় পক্ষের আইন উপদেষ্টারা শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে এক যৌথ বৈঠকে মিলিত হবেন। ১৯ মার্চ আলোচনায় ‘অগ্রগতি’ হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়েছিল।

২০ মার্চ শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়া খান নিজেদের উপদেষ্টাদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠকে মিলিত হন। এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবিত ঘোষণায় নিচের তিনটি মৌলিক বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হবে— (১) সামরিক আইন প্রত্যাহার, (২) নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং (৩) পূর্বাঞ্চলীয় অংশের (‘পূর্ব পাকিস্তান’) জন্য ব্যাপকভিত্তিক স্বায়ত্তশাসনের ব্যবস্থা। উভয় পক্ষ এ ব্যাপারে বিশিষ্ট আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ এ কে ব্রোহীর অভিমত নিতে সম্মত হন। পরদিনই এ কে ব্রোহী এক লিখিত অভিমতে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগের প্রস্তাব অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাপনা হিসেবে ঘোষণা জারি করলে আইনগত শূন্যতার সৃষ্টি হবে না এবং আইনসম্মতভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করা যাবে। 

২১ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত ঘোষণার খসড়া আওয়ামী লীগের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এই খসড়ায় ‘পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের’ জাতীয় পরিষদ সদস্যদের পৃথক পৃথক অধিবেশনের প্রস্তাব ছিল। খসড়ার অন্য এক প্রস্তাবে বলা হয়, প্রদেশগুলোতে মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার দিন থেকে সামরিক আইন প্রত্যাহূত হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। আওয়ামী লীগ খসড়া ঘোষণাটিকে ‘অসম্পূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে নিচের দুটি প্রশ্নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছিল— (১) প্রেসিডেন্টের ঘোষণাটি অবিলম্বে প্রচার করতে হবে; এবং (২) যেহেতু মন্ত্রিসভা গঠনে বিলম্ব ঘটতে পারে সেহেতু প্রদেশগুলোতে নতুন গভর্নর নিযুক্তি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অথবা প্রেসিডেন্টের ঘোষণা প্রচারিত হওয়ার সাতদিনের মধ্যে সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে হবে। 

২২ মার্চ প্রেসিডেন্ট হাউজে আগের দিন ঢাকায় আগত জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর হঠাৎ সাক্ষাৎ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তার প্রস্তাব মেনে নেওয়ার জন্য ভুট্টোকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রের আগে প্রদেশগুলোতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং সামরিক আইন প্রত্যাহারের প্রশ্নে ভুট্টো বলেছিলেন, তেমন কোনো আয়োজন বা সমঝোতা অনুমোদনের জন্য হলেও প্রথমে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে হবে। উল্লেখ্য, ২২ মার্চই ২৫ মার্চ থেকে অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দ্বিতীয়বারের মতো স্থগিত ঘোষিত হয়েছিল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতারা ২২ মার্চ সারাদিন প্রেসিডেন্টের ঘোষণা চূড়ান্ত করার কাজে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছিলেন। ২৩ মার্চ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবিত ঘোষণার খসড়া পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। সেদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত উপদেষ্টাদের বৈঠক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। ২৪ মার্চের সর্বশেষ বৈঠকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেশের নাম ‘কনফেডারেশন অব পাকিস্তান’ রাখার নতুন এক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ইয়াহিয়ার পক্ষ এতে তীব্র আপত্তি জানায়। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টারা বিষয়টি বঙ্গবন্ধু এবং ইয়াহিয়া খানের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব তোলেন এবং ঘোষণার অন্য দিকগুলো নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত করার জন্য চাপ দেন। কিন্তু সান্ধ্য বৈঠকে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধিদের জানানো হয়, ইয়াহিয়ার প্রতিনিধিরা আগে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে পরে আওয়ামী লীগকে অবহিত করবেন। জেনারেল পীরজাদা জানিয়েছিলেন, তিনি পরদিন অর্থাৎ ২৫ মার্চ ‘কোনো এক সময়ে’ ড. কামাল হোসেনকে টেলিফোনে জানাবেন, কখন তারা আবার বসবেন এবং কবে প্রেসিডেন্টের ঘোষণাটি প্রচার করা হবে।

এভাবেই মুজিব-ইয়াহিয়ার এবং তাদের উপদেষ্টাদের মধ্যকার অলোচনার সমাপ্তি ঘটেছিল। বঙ্গবন্ধুসহ আওয়ামী লীগ নেতারা ২৫ মার্চ সারাদিন অপেক্ষায় কাটিয়েছিলেন। কিন্তু জেনারেল পীরজাদা কোনো টেলিফোন করেননি, প্রচারিত হয়নি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সেই ঘোষণাটিও— যার জন্য উভয় পক্ষের উপদেষ্টারা পরিশ্রম ও আলোচনা করেছিলেন। অভিজ্ঞতা বর্ণনাকালে ড. কামাল হোসেন লিখেছেন, ‘আমি যখন (২৫ মার্চ) রাত ১০টা ৩০ মিনিটে শেখ মুজিবের কাছ থেকে শেষবারের মতো বিদায় নিই, তখনো তিনি জানতে চেয়েছিলেন, তেমন কোনো টেলিফোন আমি পেয়েছি কি-না। আমি তাকে জানিয়েছি, আমি কোনো টেলিফোন পাইনি’ (ড. কামাল হোসেনের বিবরণী, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র’, ১৫শ খণ্ড)। এখানে ড. কামাল হোসেনের সঙ্গী ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের বিবরণীও উল্লেখযোগ্য। তিনি জানিয়েছেন, জেনারেল পীরজাদার টেলিফোন না আসার কথা জেনে বঙ্গবন্ধু বিমর্ষ হয়ে পড়েন। কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম অনুরোধ করলেও বঙ্গবন্ধু তাদের সঙ্গে বাড়ি ছেড়ে যেতে রাজি হননি।

এখানে ড. কামাল হোসেনরা চলে যাওয়ার পর কী ঘটেছিল তা জানার জন্য বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের বর্ণনা উল্লেখ করা দরকার। তিনি জানিয়েছেন, ‘...রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে তারা (পাক সেনারা) গুলি ছুড়তে ছুড়তে উপরে এলো। ...তারপর মাথাটা নিচু রেখে নেমে গেলেন তিনি (বঙ্গবন্ধু ) নিচের তলায়। মাত্র কয়েক মুহূর্ত। আবার উঠে এলেন উপরে। মেজো ছেলে জামাল এগিয়ে দিল তার হাতঘড়ি ও মানিব্যাগ। পাইপ আর তামাক হাতে নিয়েই বেরিয়ে গেলেন তিনি ওদের সাথে’ (দৈনিক বাংলা, ২৬ মার্চ, ১৯৭২)।

উপরের বিভিন্ন তথ্য ও ঘটনার ভিত্তিতে বলা যায়, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেষ পর্যন্তও নিয়মতান্ত্রিক ও আইনসম্মত পথে সংকটের সমাধান করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। সর্বতোভাবে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতাকে অনিবার্য করার লক্ষ্য নিয়ে একের পর এক বিভিন্ন প্রস্তাবের মাধ্যমে সংকটকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন, যখন আর এক পাকিস্তানকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। এজন্য প্রথমে তিনি প্রদেশগুলোতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব উপস্থিত করেছিলেন, যা মেনে নেওয়ার অর্থই হতো ‘পূর্ব পাকিস্তানের’ স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া। কিন্তু ইয়াহিয়া-ভুট্টোরা বঙ্গবন্ধুর কৌশল সম্পর্কে বুঝতে পেরেছিলেন। এজন্যই পাকবাহিনী গণহত্যার অভিযানে নেমেছিল। অন্যদিকে গণহত্যার প্রতিবাদে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ।

 

লেখক : সাংবাদিক এবং ইতিহাস গবেষক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads