• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
দেশজুড়ে হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইন সফল হোক

ছবি : বাংলাদেশের খবর

সম্পাদকীয়

দেশজুড়ে হাম-রুবেলা ক্যাম্পেইন সফল হোক

  • প্রকাশিত ১৮ মার্চ ২০২০

আতিক সিদ্দিকী:

১৮ মার্চ শুরু হলো ৯ মাস বয়স থেকে ১০ বছরের কম বয়সী দেশের সব শিশুর জন্য হাম-রুবেলার টিকা ক্যাম্পেইন। ভাইরাসজনিত একটি মারাত্মক রোগের নাম হাম। এটি একটি জটিল সংক্রমণ রোগ। আক্রান্ত রোগীর হাঁচি, কাশির মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগ কেবল যে শিশুদের হয় তা নয়, সব বয়সের মানুষেরই এ রোগ হতে পারে।

সাধারণত শিশুদের মাঝে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুঝুঁকিও বেশি। এর ফলে নিউমোনিয়া, অপুষ্টি, ডায়রিয়া, অন্ধত্ব, এনকেফালাইটিস এবং বধিরতার মতো জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। আমাদের বিশেষ করে শিশুদের সুরক্ষা দিতে এখন উপায় হিসেবে হামের টিকা দিতে হবে।

নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রম চলার পরও বর্তমানে আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়া মানেই দেশে শিশুদের হামে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। এ তথ্য থেকে আরও জানা যায়, হাম রুবেলায় আক্রান্ত শিশুদের ৮০ ভাগই ১০ বছরের কম বয়সী। নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করার পাশাপাশি হাম রুবেলা থেকে শিশুদের সুরক্ষা দিতে ৯ মাস থেকে ১০ বছরের কম বয়সী সব শিশুকে এমআর টিকা প্রদান করার জন্য এই ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়েছে।

১৮ থেকে ২৪ মার্চ প্রথম সপ্তাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে টিকাদান ক্যাম্পেইন চলবে। আর ২৪ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে কমিউনিটি পর্যায়ে এই ক্যাম্প পরিচালিত হবে। এই ক্যাম্পেইন প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত একনাগাড়ে চলতে থাকবে। তবে স্কুল ক্যাম্পেইন পরিচালনার ক্ষেত্রে স্কুলের সময়সূচির ওপর ভিত্তি করে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

দেশে পোলিও নির্মূল অভিযান সফল হয়েছে। সামগ্রিক বিবেচনায় বাংলাদেশে ইপিআই তথা টিকাদান কর্মসূচি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আপাতদৃষ্টিতে সফলতার মুখ দেখলেও এখনো পরিপূর্ণভাবে সফল হয়েছে বলা যাবে না। পরিচালিত এই কার্যক্রম জনগণের কাছে প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এবং এর অগ্রগতি বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় ভালো করেছে। যে কারণে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশের স্বাস্থ্য খাত জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রতি ৬ হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য পরিচালিত হচ্ছে একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক।

পোলিও নির্মূলের মতো বিশ্বের সব দেশ এখন হাম রুবেলা থেকে তাদের শিশুদের মৃত্যুঝুঁকি রোধে উদ্যোগ নিচ্ছে। এই রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০০৬ সালে ক্যাচআপ এবং ২০১০ সালে ফলোআপ ক্যাম্পেইন করায় সে সময় হামের প্রকোপ অনেকটাই কমে এসেছিল। হামের টিকার সঙ্গে রুবেলা টিকা সংযোজন করা হয় ২০১২ সালে। হামের টিকার সঙ্গে রুবেলা টিকার সংযোজনে এখন এমআর টিকা দেওয়া হচ্ছে। ২০১৪ সালে হাম রুবেলা দূরীকরণে এমআর ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হয়েছিল। এই ক্যাম্পেইন পরিচালনার ফলে হাম রুবেলার প্রদুর্ভাব অনেকটাই কমে এসেছিল। এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতেই এই ক্যাম্পেইন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শিশুরা লেখাপড়া করে, সেখানেই এই ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হবে। যেসব শিশু স্কুলে যায় না তাদের এবং ওই স্কুলে টিকাদানের দিন অনুপস্থিত ছিল এমন শিশুদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে নিয়মিত টিকাদান কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়াও প্রতিটি উপজেলা, পৌরসভায় ১টি এবং সিটি করপোরেশনগুলোর প্রতিটি ওয়ার্ডে ১টি করে স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া খোলা থাকবে। দুর্গম এলাকাগুলোতে ক্যাম্পেইন চলাকালে প্রতিটি ইউনিয়নে ১টি, উপজেলায় ৩টি, পৌরসভায় ২টি এবং সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে অতিরিক্ত টিকাদান কেন্দ্র টিকাদান করবে। এই কর্মসূচিতে দোকান, বাজার, কারখানা, কর্মরত মায়েদের শিশু, বেদেবহরের শিশু, স্টেশন বা বাসস্ট্যান্ডে ঘুমায়, জেলখানায় বা হাসপাতালে মায়েদের সঙ্গে থাকে এমন শিশু, পথশিশু, বস্তিতে বসবাস বা পতিতালয়ের শিশুদের এসব অতিরিক্ত টিকাদান কেন্দ্রে এমআর টিকা দেওয়া হবে।

এই ক্যাম্পেইনের আগে ৯ মাস থেকে ১০ বছরের কম বয়সী সব শিশুর রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হয়েছে। শিশুর টিকাদান সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে টিকাদান কার্ড ব্যবহার করা হবে। টিকাদানকাজে নিয়োজিত স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনাকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবীদের রেজিস্ট্রেশনকৃত সব শিশুকে টিকাদান শেষে টিকাদান কার্ডের ঘর সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। শিশুর বাবা-মাকে টিকাদান কার্ড সঙ্গে নিয়ে আসার জন্য কর্মীদের অনুরোধ করা হয়েছে। ক্যাম্পেইন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য মাঠকর্মীদের স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে কিন্ডারগার্টেন, ডে-কেয়ার, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, উপ-আনুষ্ঠানিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অনাথ আশ্রম, এতিমখানা অথবা যেসব প্রতিষ্ঠানে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান পরিচালনা করা হয়, সেসব প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নির্ধারিত ফর্মে মাইক্রোপ্লানিং সম্পন্ন করা হয়েছে ইতোমধ্যেই। এই বিশাল কর্মকাণ্ড সম্পাদনের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠপর্যায়ে কর্মরত সব কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবীকে দক্ষ করার জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে। শিশু রেজিস্ট্রেশন, মাইকিং, পোস্টার, ব্যানারসহ প্রচারণার নানা উপকরণ সাংবাদিক, ধর্মীয় নেতা, চিকিৎসা পেশাজীবী, শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন পরিষদ, বাজার, হাসপাতাল, সব গুরুত্বপূর্ণ অফিস এবং জনসমাগমস্থলে প্রচার-প্রচারণাসহ এসব কাজ সম্পাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও মোবাইল মাইকিং এবং স্থানীয় মসজিদ থেকে ওয়াক্ত নামাজের আগে ও পরে এই ক্যাম্পেইন সম্পর্কে প্রচারণার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

উল্লেখ করা প্রয়োজন শিশু এর আগে এমআর অথবা হামের টিকা নিয়েছে অথবা এই হাম বা রুবেলা রোগে আক্রান্ত হয়েছে এমন শিশুকে উল্লেখিত নির্দিষ্ট বয়সের মধ্যে হলে ওই শিশুকে রেজিস্ট্রেশন এবং হাম রুবেলার টিকা দিতে হবে। এ কথা ভাবলে হবে না যে, শিশুটিকে এর আগে টিকা দেওয়া হয়েছে, তাই আর পুনরায় টিকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শিশুটি ইতোমধ্যেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল তাই আর টিকা দিতে হবে না, এটা সঠিক নয়। এই বিষয়টি শিশুর অভিভাবকদের ভালো করে বুঝিয়ে শিশুদের হাম ও রুবেলা টিকাদান কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। এ জন্যই দেশের জনসমাজকে সচেতন করতে আগে থেকেই মাঠকর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে।

এই ক্যাম্পেইন পরিচালনার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে যেমন সচেতনতার সৃষ্টি হবে, তেমনি এই কাজে নিয়োজিত কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের দক্ষতা বাড়বে এবং টিকাদান কার্যক্রম অনেক বেশি জোরদার ও সফলতার মুখ দেখবে। হাম-রুবেলার মতো অত্যন্ত জটিল সংক্রামক রোগের বিস্তার এবং আদরের সোনামণিদের সুরক্ষা দিতে সরকারের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই।

 

লেখক : সাংবাদিক

atiquesiddiquee@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads