• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা

  • সাঈদ চৌধুরী
  • প্রকাশিত ২৩ মার্চ ২০২০

চারদিকে কত অনিয়ম নিয়ে লেখা যায়? অনিয়ম নিয়ে লিখতে বসলে হতাশ হয়ে লেখা বাদ দেওয়া মানুষের সংখ্যাও কম হবে না বর্তমানে। প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি নামক অসুস্থতা এমনভাবে গ্রাস করেছে এখন সত্য সুন্দর কথাগুলোকেই পরাজিত করতে চায় কোনো কোনো মানুষ! স্কুলের একটি ডাস্টার ক্রয় থেকে দুর্নীতি শুরু হয়ে শেষ হয় বিমান কেনা ও বিমান ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতি পর্যন্ত! দুর্নীতির খাত বেড়েছে মানুষের কথার ভাঁজেও।

সমগ্র দেশের অর্থনীতি কিছু মানুষের চালিকার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ার পেছনেও এই দুর্নীতিই বড়। তবু মানুষ এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে সম্ভাবনা নিয়ে জীবন শুরু করতে পারছে। বিশ্বের বুকে বুক চিতিয়ে জানান দিয়ে বলছে আমরা বাঙালি জাতি পিছিয়ে পড়ার জন্য স্বাধীন হইনি। অভ্যন্তরীণ অনিয়ম আর দুর্নীতির জায়গায় এখনো আমরা অনেক পিছিয়ে। সত্যকথা, নৈতিক মূল্যবোধের জায়গা ও মানুষের অধিকার প্রাপ্তিতে যে ধরনের সুযোগ দেখা যায়, তা সত্যিই আমাদের দেশের জন্য বেমানান।

একটি ভালো কথা বা ভালো কাজের কথা কাউকে বলতে যান, দেখবেন যাকে ভালো কথা বা ভালো কাজের কথা বলতে গেছেন, সে-ই এগুলো আপনার চেয়েও বেশি জানে ও বেশি মেনে চলে— এটা প্রকাশ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে। একটি সামাজিক আন্দোলন এগিয়ে নিতে চাইলেও প্রথম আপনার শুনতে হবে ‘এগুলো করে তোমার লাভ কী, বাড়িতে গিয়ে বসে থাকো’ এ ধরনের কথা।

দুর্নীতিবিরোধী কাজ করে যাচ্ছি অনেক দিন থেকে। কোথাও দাঁড়িয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে দেখুন, কেউ কেউ সরাসরিই বলে ফেলবে—দুর্নীতিবিরোধী কাজ যারা করে তারাই বেশি দুর্নীতিবাজ। কোনোভাবেই কোনো মানুষকে এ কথা বোঝানো সম্ভব নয় আপনি-আমি ঠিক থাকলেই দুর্নীতি কমবে। অর্থনৈতিক গতিশীলতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মতামত যেন বেড়েই চলছে। সরকারপ্রধান দেশ চালানোর সময় হাজারো প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দেশ চালান। সামান্য ইস্যু খুঁজে খুঁজে বলা হয় সরকার ব্যর্থ। একটি ঘরে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও সে বিষয়টি সরকারের দায়ে গিয়ে পড়ে। নিজেদের চর্চার জায়গাগুলোতে আমরা এখনো উন্নত হতে পারিনি। যখন রাস্তা দিয়ে গাড়িতে চড়ে কোথাও যাচ্ছি, তখন প্লাস্টিকের বোতলটি সুন্দর করে ফেলে চলে যাই, আর বর্ষার সময় আমরাই বলি ড্রেন কেন জ্যাম হয়ে আছে।

শুধু এখানেই নয় প্রতিটি ক্ষেত্রে একই উচ্চারণ—কিছু হবে না। যখন এই নেগেটিভ উচ্চারণগুলো মানুষ করে তখন আমি ৭ মার্চের রেসকোর্স ময়দানে ফিরে যাই বারবার। তখন আমি বঙ্গবন্ধুর জেলে থাকার দিনগুলোর কাছে ফিরে যাই। একটি মানুষ আর তার একটি উচ্চারণে একটি দেশ স্বাধীন হয়েছিল। আর সে স্বাধীনতার শক্তিতেই আমরা এখন বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। একটি অস্ত্রহীন, শক্তিহীন ও ভঙ্গুর করে রাখা জাতির রক্তের অস্ত্র এত ধারালো হতে পারে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ওই ডাক না শুনলে আমরা যেন তা বুঝতামই না!

সে জাতিই তো আমরা! এখনো অনিয়ম হলে তা বন্ধে শুধু একটি ডাকেরই অপেক্ষা। আমরা যখন কেউ কোনো ভালো কাজে ডাকে, মানুষকে তখন বিবেকের তাড়নাটা যেভাবে আসে তা বঙ্গবন্ধুর ওই ঐতিহাসিক ডাকগুলোর কারণেই। মহামানব একদিন জন্মগ্রহণ করেছেন পৃথিবীতে, কিন্তু প্রতিদিন নতুন করে জন্মগ্রহণ করাতে শিখিয়ে গেছেন তার জীবনের প্রতিটি পিক্ততে। যতবার মুক্তিকামী মানুষ পৃথিবীতে আসবে ততবার বাঙালি জাতির মহানায়ককে মুক্তিকামী জনতার নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেই তাদের দলনেতার আসনে শ্রদ্ধাভরে বসাবে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। শিশু দিবসও ঘোষণা করা হয়েছে এ দিনটাকে। তবে এবার ভিন্ন দিক হলো শতবর্ষ উদ্যাপন। আমাদের এ মহানায়ক একদিন পৃথিবী ছেড়ে এমনিই চলে যেতেন হয়তো, কিন্তু তার অবদানের জায়গাটি হাজার বছরই বেঁচে থাকত এবং সে উদাহরণই এবার আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। করোনার ভয়ে ভীত বিশ্বে বাংলাদেশ এখনো টিকে আছে। সাহসিকতার অপারসম্ভাবনা নিয়ে দেশটি এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির নায়ক বঙ্গবন্ধু যে উদ্দীপনা এ জাতির হূদয়ে মেখে দিয়ে গেছেন, তারই যেন শৈল্পিক রূপ এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে আমাদের চাওয়ার জায়গাটি আরও বড় হয়েছে, আমাদের নির্দেশনার ক্ষেত্রটি আরও প্রসারিত হয়েছে এবং সবচেয়ে আশার বিষয় হলো, আমাদের এখন আর জনসংখ্যা নিয়ে ধুঁকতে হয় না। দেশ-বিদেশে আমাদের মানুষেরা কাজ করছে আর আমরা পাচ্ছি একটি গতিশীল অর্থনীতি। এখন শিশুদের নিয়ে বেশি কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শিশুজীবন থেকেই যেমন কর্মদীপ্ত মানুষ ছিলেন, প্রতিবাদী ছিলেন, ছিলেন নেতৃত্বের উদাহরণ, আমাদের শিশুদেরও এমন করে গড়ে তুলতে হবে।

একমাত্র শিশুদের যদি আমরা সঠিক উপায়ে, নৈতিকতার মধ্যে, কাজের মানুষ হিসেবে বড় করে তুলতে পারি; তবে দেশ এগোবেই। ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে একটু বেশি ভাবতে হবে সরকারকে। রাস্তায় এক বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে থাকা নারীর সংখ্যা অনেক। রাস্তায় বড় হওয়া কন্যাশিশুরা ধর্ষিতও হয় বেশি, ছেলেশিশুরা হয় নেশাগ্রস্ত। এ বিষয়গুলো আমাদের জন্য শঙ্কার। তাই আজকের এই মহান দিনে সরকারের কাছে, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাওয়া একটাই—শিশুদের, বিশেষ করে ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে আপনার ভাবনাটা জরুরি। দুর্নীতি বন্ধে জিরো টলারেন্স অব্যাহত রাখুন, বিচার বিভাগকে এমনভাবে কাজ করতে বলুন, যাতে কেউ বিনা বিচারের সমক্ষীণ না হয় এবং পরিবেশের টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি চিন্তা করুন শিক্ষার সপষ্টতা নিয়ে। তবেই আমরা পাব বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা, মানুষ হাসবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে। পৃথিবী যত দিন আছে তত দিনই বাংলার মহামানব জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আমাদের আদর্শের জায়গায় থাকবেন।

এখানেও কিছু কথা রয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে কেউ সুবিধা নেয় কি না, সেটা খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের জাতির নায়কের ছবি দিয়ে অবমাননাকর যেকোনো ধরনের ব্যানার তৈরি করে ফেলবে যে কেউ, এটাও মানা যায় না। স্কুলে স্কুলে বঙ্গবন্ধু কর্নার করা হচ্ছে এটা ভালো উদ্যোগ; সঙ্গে সঙ্গে প্রতি জেলায় বঙ্গবন্ধুর সব বই লাইব্রেরিগুলোতে রাখার ব্যবস্থা করার জন্য সরকারপ্রধানের কাছে অনুরোধ রাখছি। ইতিহাসকে ছড়িয়ে দিতে চাইলে আমাদের এ কাজগুলো করতে হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার চরম সাহসী প্রতিটি উচ্চারণ পুঁজি করেই আমি ও আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদের পাঠ নেই প্রতিনিয়ত, দেশ পরিবর্তনে কথা বলার সাহস পাই, মানুষকে নিয়ে ভাবার অনুপ্রেরণা পাই, সর্বোপরি লক্ষ স্থির করি একটি সভ্যতার শ্রেষ্ঠ জাতি গঠনের। জন্মদিনের গভীর শ্রদ্ধা দেশ প্রতিষ্ঠার কবি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

 

লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি

শ্রীপুর, গাজীপুর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads