• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
করোনা আক্রান্ত পৃথিবীর হালচাল

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

করোনা আক্রান্ত পৃথিবীর হালচাল

  • প্রকাশিত ০২ এপ্রিল ২০২০

জুবায়ের আহমেদ

 

 

ডিসেম্বর ২০১৯-এর শেষের দিকে চীনের উহান প্রদেশে প্রথম নভেল করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। শুরুতে বেশ কয়েক দিন শুধু চীনে করোনা ভাইরাস সীমাবদ্ধ থাকলেও ধীরে ধীরে তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। চীনে করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের খবর প্রকাশ হলেও শুরু থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কিংবা নাগরিকদের মধ্যে করোনা ভাইরাস নিয়ে তেমন শঙ্কা দেখা যায়নি। উল্টো কতক ধর্মান্ধ ও অসেচতন ব্যক্তি করোনা ভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন অযাচিত মন্তব্য করার মাধ্যমে হাস্যরসে নিমজ্জিত ছিলেন। যার ফলে বাংলাদেশেও এখন করোনা ভাইরাসের রোগী বাড়ছে।

এমনকি শুরুতে চীন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও সারা বিশ্ব সতর্কতা অবলম্বন করেনি। ফলে ইতালি, ইরান, স্পেনসহ বহু দেশে করোনা এখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হচ্ছে বহু প্রাণ। গত ৯ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর এ পর্যন্ত ৪৮ জন রোগী শনাক্তের পাশাপাশি ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিদেশফেরত লাখ লাখ মানুষের মাঝে মাত্র গুটিকয়েক প্রবাসী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনামাফিক হোম কোয়ারেন্টাইন (গৃহবন্দি) পালন করছেন। বহু প্রবাসী দেশে এসে অবাধে মেলামেশা করছেন, যাদের পুলিশ আসামি ধরার মতোই পাকড়াও করে কোয়ারেন্টাইনে পাঠাচ্ছে। বিশ্ব পরিস্থিতি কিংবা বাংলাদেশে দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার কারণে বাংলাদেশের পরিস্থিতিও ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে।

করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯-এর কারণে সারা বিশ্বের যত পর্যটনকেন্দ্র আছে, সব বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। থেমে গেছে সারা পৃথিবীর সব আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া খেলাধুলা। সারা বিশ্বের মুসলিমদের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত মক্কা শরিফ ও মদিনায় জামায়াতে নামাজ বন্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়াও বহু দেশ ও শহর লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষকে ঘরে থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। কানাডার সরকারপ্রধান জাস্টিন ট্রুডো ইতোমধ্যে দেশের নাগরিকদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দিয়ে এই সময়ে সব নাগরিকের ভরণপোষণ এবং বেতন প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। এমনকি যারা পরিপূর্ণ নিয়ম মানবে, তাদের বোনাস দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।

মাত্র ৩ মাসের ব্যবধানে থমকে গেছে পুরো বিশ্ব। প্রত্যেকটি দেশে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়ে গেছে। থমকে গেছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যবসা-বাণিজ্য। এমনকি বাংলাদেশের সবচেয়ে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত পোশাকশিল্পেও নেমে এসেছে ধস। বাতিল হয়েছে বিলিয়ন ডলারের অর্ডার। এরই মধ্যে আমাদের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য ও চিকিৎসাসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি করে বিপাকে ফেলছে সাধারণ মানুষকে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখা প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। বাংলাদেশের দরিদ্র শ্রেণির মানুষদের দুমুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকাতেও অনিশ্চয়তার কালো মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাওয়ার বিপরীতে সরকার উপজেলা শহরভিত্তিক লকডাউনের মাধ্যমে এগুলেও সারা দেশ লকডাউনের সিদ্ধান্ত এখনো গ্রহণ করেনি। যার ফলে আল্লাহ না করুক, বাংলাদেশের পরিস্থিতি চীন ও ইতালির চেয়েও ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আশঙ্কা আছে বলে সাধারণ মানুষ মনে করছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে দিন দিন পরিস্থিতি খারাপের দিকে ধাবিত হচ্ছে। খেলাধুলার আসরগুলো স্থগিত ঘোষণা করলেও এখনো জনসমাগম হয়, এমন বহু মাধ্যমে কাজ চলমান রয়েছে, যার ফলে খারাপ পরিস্থিতির আশঙ্কা বিদ্যমান।

১৭২০, ১৮২০, ১৯২০ সালের ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালেও মহামারীতে আক্রান্ত হয়েছে পুরো পৃথিবী। এ নিয়ে নানান মানুষের নানান মত। বাংলাদেশের মানুষজনের অধিকাংশই আল্লাহ ভরসার ওপর স্থির থাকলেও ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়নি এখনো। পবিত্র ইসলাম ধর্মমতে মহামারীর সময়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বা আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকায় মসজিদের পরিবর্তে গৃহে ধর্মকর্ম করার নির্দেশনা আছে। কিন্তু বাংলাদেশের কতক ধর্মান্ধ ব্যক্তি তা মানছে না। অথচ আরব আমিরাত, কুয়েতসহ বহু ইসলামিক দেশে মসজিদের পরিবর্তে ঘরে নামাজ আদায়ের জন্য আজানের মাধ্যমে আহ্বান জানানো হচ্ছে এবং স্বয়ং সৌদি আরবসহ বহু দেশের মসজিদগুলোতে নামাজ বন্ধ করে ঘরে নামাজ পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সারা বিশ্ব এখন করোনা ভাইরাসের প্রভাবে স্তম্ভিত। এখন আর নেই দেশে দেশে কোনো দৃশ্যমান বিরোধ। পৃথিবীর বেপরোয়া মানুষজন এখন শৃঙ্খলায় আবদ্ধ হচ্ছে। করোনা ভাইরাসকে বহু মানুষ গজব হিসেবে আখ্যায়িত করার পাশাপাশি অনেকেই আবার একে আশীর্বাদ হিসেবেও দেখছেন। তারা মনে করছেন, করোনা পুরো পৃথিবীতে শৃঙ্খলা এনেছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস তৈরি হচ্ছে। করোনা ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী বহু মানুষের মৃত্যু হলেও সুস্থ হওয়া মানুষের সংখ্যাই বেশি। তবে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তিদের সমাহিত করার বিধিনিষেধগুলোতেই ভীত মানুষ। সারা পৃথিবীজুড়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, এর থেকে পরিত্রাণের জন্য স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের প্রার্থনা করাসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ থেকে নিরাপদে থাকার জন্য যে বিধিনিষেধ তৈরি করে দিয়েছে, সে অনুযায়ী বর্তমানে দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করার কোনো বিকল্প নেই। দেশের সরকার ও সব নাগরিকের একযোগে সচেতন হওয়া এবং সাধারণ মানুষের প্রয়োজনীয় সব উপকরণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমেই একযোগে করোনা ভাইরাসকে প্রতিহত করতে হবে। সবার ঐক্যবদ্ধতা এবং দায়িত্বশীলতার মাধ্যমেই পৃথিবী আবারো হাস্যোজ্জ্বল হয়ে উঠবে, কেটে যাবে সব শঙ্কা ও ভয়, এই প্রত্যাশা করি।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads