• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
মূল্যবোধের বিকাশই পারে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

মূল্যবোধের বিকাশই পারে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে

  • প্রকাশিত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার পিপিএম

 

অন্যের ক্ষতিসাধনের মধ্য দিয়ে একশ্রেণির মানুষ আছে, যারা আনন্দ লাভ করেন। কিন্তু তাতে কী আনন্দ আছে মোটেও, ভেবে দেখেছে কজন? আমি তোমাকে বলি, তুমি অন্যের ক্ষতি করে অনেক বেশি মজা পাও, এটি কোনো আরোপিত মজা নয়। সত্যি সত্যি এ মজা তুমি উপভোগ কর। দেখেছি তোমায়, তুমি একটি ভালো কাজ করে যে আনন্দ লাভ কর, তার চেয়ে অনেক বেশি গুণ মজা পাও তাতে।

তোমার জীবনে একবারও ভেবে দেখেছ কি, যে পরিমাণ ক্ষতি করে তুমি মজা লাভ করেছ তার শতভাগের এক ভাগ ভালো কাজ করেও কি তুমি এমন মজা সংগ্রহের চেষ্টা করেছ? নাকি এভাবে ভাবতে শেখনি কোনো দিনই? মন্দ ভাবতে ভাবতে তোমার জীবনের সমস্ত ভাবনার জগৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে! অনিচ্ছাসত্ত্বেও কি তোমার মধ্যে এই ভাবনা একবারও তোমাকে জিজ্ঞেস করেনি, যে মজায় আজ তুমি নিজেকে পুলকিত করছ, সেটি আসলে তোমার জীবনের অন্তিম পরিণতির অজ্ঞাত ক্রন্দন পরিণতি সৃষ্টি হতে পারে?

একবারও কি তোমার বোধে এতটুকু উপলব্ধি সাড়া দেয়নি? এতগুলো মন্দ কাজের বিপরীতে পাওয়া সুখ যদি ভালো কাজের বিপরীতে অর্জন করতে, তুমিই হতে এই সমাজের এই রাষ্ট্রের এই বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর একজন মানুষ! সবাই তোমাকে নিয়ে খুশি হতো। তোমার জীবনের সমস্ত অনাচার অত্যাচার কিংবা বিপদ-আপদ তোমাকে কখনো ছুঁয়ে দেখতে পারত না। নাকি পরিবার, সমাজ, সংসার, শিক্ষাক্ষেত্র তোমার চারপাশের পরিবেশ, তোমার বেড়ে ওঠার সঙ্গ, কেউ তোমার এই বোধের উপলব্ধিতে একটু সাড়া জাগানোর চেষ্টা করেনি একবারও? ভেবে দেখেছ, তুমি আসলে যা করছ তার বিনিময় তুমি নিজেকে উত্তম করে ভাবার বিন্দুসম কোনো সুযোগ তোমার আর আছে কিনা?

আসলে কী জানো, তুমি কতটা অধম, কতটা নীচ, কতটা ক্ষতিকর, অমানবিক, কতটা অসাধু! চেতনার যে স্রোত তোমার শরীরে প্রবাহিত, তার সমস্তটুকুই শাপের নিলাভ বিষে জর্জরিত হয়ে গেছে! যেন কাউকে কামড় দিয়ে সে বিষ ছড়িয়ে দিতেই তোমার প্রশান্তি! জানি তুমি বেওয়ারিশ নও, তবু সত্যি যদি কোনো দিন কারও কাছেই ভালো কোনো কাজ করার উপায় জেনে না থাক, আমি তোমাকে বলে রাখি, তুমি তোমার এই অন্ধকারের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পার নিজেকে। তুমি তোমার কাছে একবার ক্ষমা চাও অর্থাৎ নিজেকে আগে ক্ষমা করা শেখ আর যাদের ক্ষতি তুমি করেছ তাদের কাছে একবার ক্ষমা চাও। উভয়ের জন্য ক্ষমা চাও তুমি তোমার স্রষ্টার কাছে আরও একবার। আর যে কটা দিন বেঁচে থাক, দেখ তো কয়েকটি ভালো কাজ করে জীবনের সমাপ্তি ঘটাতে পার কিনা? অন্তত একটি অতি উত্তম কাজের বিপরীতে তোমার সব ঘটনার দায়মুক্তি পেতে পার, এমন একটি কাজ তুমি কায়মনোবাক্যে করতে চাও, এমন প্রত্যয় নিজের কাছে ব্যক্ত কর। অন্তত আজ থেকে যা কিছুই কর, শুধু ভেবে দেখ, কতটুকু ভালো আর কতটুকু মন্দ করছ তুমি। আর এই পার্থক্যই তোমাকে মন্দ কাজ করা থেকে ধীরে ধীরে যেমন মুক্তি দেবে, তেমনি প্রশান্তি লাভ করাবে।

মূল্যবোধসম্পন্ন উত্তম কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের মঙ্গল কামনায় যদি উপায় না বুঝতে পার, তাহলে যে কাজটি দেখলে নিজের কাছে ভালো মনে হয়, যে মানুষকে দেখলে তোমার সম্মান দিতে ইচ্ছে করে, যে শিশুকে দেখলে তোমার মধ্যে শিশু-আত্মার জন্ম লাভ করে, তুমি তেমনটা হয়ে নিজের মধ্যে বোধ তৈরি কর। আমার বিশ্বাস, তুমি একদিন উত্তম মানুষ হবেই হবে। এই বিশ্বদরবারে অনেক পছন্দের মানুষ হবে, স্নেহ ভালোবাসা আদরের মানুষ হবে আর এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তোমার এই পরিবর্তনের আলো গ্রহণ করে নতুন প্রজন্মের কাছে এই বাণী ছড়িয়ে দেবে, এই ভালোবাসা ছড়িয়ে দেবে, যা দিয়ে মন্দ তার অস্তিত্ব হারাবে চিরতরে।

আর তোমার এই ভালো কর্মের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হবে একেকজন বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ । তাতেই কেবল রক্ষা পেতে পারে দেশ, রক্ষা পেতে পারে এ দেশের মানুষ। নির্মিত হবে শান্তিময় বিশ্বের উদাহারণ, সে তোমার আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশ!

 

লেখক : পুলিশ সুপার, গীতিকবি ও প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads