• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
 যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন

প্রতীকী ছবি

সম্পাদকীয়

অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি

যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন

  • প্রকাশিত ০৭ অক্টোবর ২০২০

প্রতারকচক্র সক্রিয়। করোনার দুঃসময়ে যখন হিমশিম খাচ্ছে জীবননির্বাহে, ঠিক তখন বিয়ে বিজ্ঞাপন, বিদেশি লটারি, কোম্পানিতে লোভনীয় বিনিয়োগ, জমি ক্রয়, চাকরি দেওয়া ইত্যাদি ফাঁদে সাধারণ মানুষকে নিঃস্ব করার প্রতারণার বিষয়টি উদ্বেগেরই বটে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে এ ধরনের প্রতারকচক্রের কয়েকজন ধরা পড়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ। এই প্রতারকরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা যায়। বিশেষ করে নাসিম রিয়েল এস্টেটের মালিক প্লট দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। এয়ার কার্গোতে চাকরি দেওয়ার নামে লালু হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা। আবার বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক নারী বিশিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় ১০-১৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও লটারি জেতানোর কথা বলে বাংলাদেশিসহ নাইজেরিয়ানদের এক প্রতারকচক্র প্রায় ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

বিশ্বব্যাপী করোনার সময়টি এখন অনেক রূঢ় বাস্তবতার। প্রজন্মের চারপাশে সমাজের পরতে পরতে ভয়ংকর ফাঁদ পাতা। ফলে সমাজে ঘটছে অনাকাঙ্ক্ষিত হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, বিকৃত মানসিকতার নানা অপকর্মসহ ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ ইত্যাদি। এর ভেতরে এ জাতীয় প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সাধারণের ‘মড়ার ওপর খাড়ার ঘাঁ’ বৈ আর কিছু নয়। এসবই সম্ভব হয়, যখন মানুষের ভেতরে আর মন্যুষত্ব বলে কিছু থাকে না। করোনায় বেকারত্ব, কর্মহীনতা, ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা ইত্যাদির ফলে এ ধরনের অপকর্মে যুক্ত হবে মানুষ, পাশাপাশি নিঃশেষও হবে সাধারণ মানুষ কিছু না পাওয়ার বেদনা থেকে। সম্প্রতি ব্র্যাক প্রকাশিত জরিপে দেখা গেছে, করোনার কারণে দেশে ৯৫ ভাগ মানুষের আয় কমেছে। রাজধানীর নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের মধ্যে কাজ হারিয়েছে প্রায় ৬২ শতাংশ। পুরোপুরি কর্মহীন হয়ে পড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ মানুষ। এই দুই শ্রেণির বড় অংশই এখন গ্রামমুখী। কিন্তু স্বস্তি নেই সেখানেও। গ্রামীণ অর্থনীতির ওপর চাপ পড়ায় বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। সুতরাং এসব বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে রাষ্ট্রকে।

সমাজবিদ ও অপরাধ বিজ্ঞানীদের অভিমত, শুধু আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় এসব অপরাধপ্রবণতা সম্পূর্ণ দমন সম্ভব নয়। এ জন্য করোনাকালীন জীবনধারা পরিবর্তনে এগিয়ে আসতে হবে রাষ্ট্রের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালীদেরও। করোনাকালীন বিশ্বব্যাপী সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবদমন মানুষের নৈতিক স্খলন ঘটাচ্ছে, পাশাপাশি তরুণরাও জড়িয়ে পড়ে ছিনতাই-রাহাজানি প্রভৃতি অনৈতিক কাজে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে সামাজিক অপরাধের ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়েছে। ভিডিও গেম দেখে সেই আদলে গ্রুপ বানিয়ে মারামারি করছে কিশোররা। সামান্য হার-জিত নিয়ে উত্তেজিত হয়ে বন্ধুর হাতে নির্মমভাবে নিহত হচ্ছে কিশোর বন্ধুটি। বিশ্লেষকরা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এমনকী সংবাদমাধ্যমে অপরাধের তথ্য জেনে সমাজের মানুষের মধ্যে একই ধরনের অপরাধ করার আরেকটি খারাপ প্রবণতা বাড়ছে। এই সত্যতা এখন আর কোনো বিশ্লেষণ ছাড়াই বলা যায়। অপরাধ দেখে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়াটাই স্বাভাবিক। অতীতেও দেখেছি নামে-বেনামে সংস্থা খুলে জনগণের কাছ থেকে প্রলোভনের ফাঁদ পেতে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা। জমি ক্রয়, চাকরি কিংবা বিয়ের প্রলোভন সমাজে নতুন নয়। কিন্তু যখন সমাজে নানা অস্থিরতা বাসা বাঁধে, তখনই এসব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তবে প্রশ্ন জাগে এই অপরাধপ্রবণতার বিষবাষ্প প্রতিরোধে জাতিগতভাবে আমাদের ভূমিকা কী?

এখন সময় এসেছে, দল-মত নির্বিশেষে করোনাকালীন অবরুদ্ধ সময় পার করার। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি দায়িত্বশীল নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে। ঘৃণ্য প্রতারকচক্রকে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি কর্মহীনতা, বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক মন্দা দূরীকরণ ও বাজারদর স্থিতিশীল করার মাধ্যমে এসব প্রতারকচক্রের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। আশাকরি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads