• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

সম্পাদকীয়

শুভ হোক নতুন বছর : ২০২১

  • প্রকাশিত ৩১ ডিসেম্বর ২০২০

হাদিউল হূদয়

 

 

 

ব্যক্তিজীবনে আমি সবচেয়ে সুখী, খুবই আশাবাদী এবং স্বপ্নবাজ একজন মানুষ। আপন করি অল্পতেই, বিশ্বাস করেই স্বপ্ন দেখি, মানুষকে দেখতেও পছন্দ করি। শুধু স্বপ্ন দেখাতে নয়, তা বাস্তবে রূপান্তর করতে সর্বাধিক চেষ্টা করি। ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজ করতে পারি না! কিন্তু অনেক সময় ইচ্ছার বিরুদ্ধেও কাজ করতে হয়, যা কখনো ভালো হয় না। ফলে কাজটাও ভালো হয়ে ওঠে না। ভালো কিছু করতে গেলে বাধা আসে, আসবে, আসতেই পারে। তাই বলে পথ চলা থেমে থাকেনি, থাকবেও না। নানা চড়াই-উতরাই আর বাধা-বিপত্তি পেরিয়েই ক্ষুদ্রতার ঊর্ধ্বে উঠতে হয়, হচ্ছে। সেজন্য ২০২১ সালকে আমি দেখতে চাই একটি নবযাত্রার বছর হিসেবে। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে একটি বছর পার করে এসেছি। বিদায়ী বছরের সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়নের চেয়ে নতুন বছরকে ঘিরে আমি বেশি আশাবাদী হতে চাই।

মানুষ পরিবর্তনশীল। নিজেকে সবসময় পরিবর্তন করে, পরিবর্তন করতে চায়, বিভিন্নভাবে। সে প্রভাব সর্বক্ষেত্রেই, সবসময়, সর্বত্র। মানবসভ্যতার সূচনা থেকেই শুরু হয়েছে এই পরিবর্তন, ঘটে বদলে যাওয়ার যাত্রা। সেই যাত্রা মানুষ থামায়নি, থামবেও না। কিন্তু পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার গতি এতটাই বেগবান হয়েছে যে, একে আর ‘ধীরগতি’ বা বাতাসের ‘মৃদুমন্দ’ গতির সঙ্গে তুলনা করা যাচ্ছে না।

এসেছে নতুন বছর। আমাদের সামনে সেই অখোলা বছরের হিসাবের খাতা। তাতে আছে ৩৬৫ পৃষ্ঠা। বারোটি পর্ব। পহেলা জানুয়ারি ঘড়ির কাঁটা রাত বারোটা স্পর্শ করা মাত্রই শুরু হয়ে যাবে জীবনের কাব্যলেখা। সুখ-দুঃখ, ভালো-মন্দ, হাসি-কান্না, প্রেম-বিরহ, আনন্দ-বেদনা, প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি দিন, বিভিন্ন দিবস, সপ্তাহ, মাস ও বছরজুড়ে চলবে এই লেখনী। কী লেখা হবে এই খাতায়! সেই দায় তোমার। একান্তই তোমার। কেননা কলমটি যে তোমারই হাতে।

বিগত কয়েক বছর ধরে তথ্যপ্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে মানবসভ্যতা যে বেগে বিকশিত হচ্ছে, তার তুলনা ইতিহাসে নেই। আর এ কারণেই এই পরিবর্তন হয়ে যাওয়াকে আমরা কোনোমতেই উপেক্ষা করতে পারব না। প্রযুক্তির ফলে জাগ্রত অতৃপ্ত বাসনা সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো, কারো কারো জীবনে সে কোনোদিনও অগ্ন্যুৎপাত/বজ্রপাত ঘটায় না, আবার কারো জীবনে সে হঠাৎ করে লাভা উদগীরণ করে দেয়। সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণ, নির্যাতন, শিশু হত্যার ঘটনা আমাদের হতবিহ্বল করেছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দেশে কিছু অমনুষ্য চেতনার মানুষ এসব বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। তাদের ঘৃণা করি। ধর্ষণ, নির্যাতন, শিশু হত্যার ঘটনায় সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ কামনা করি।

২০২০ সাল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বছর পালিত হয়েছে। যেকোনো মহৎ ব্যক্তির জন্মশতবর্ষেরই একটি বাড়তি মাহাত্ম্য থাকে, থাকে অনেক আনুষ্ঠানিকতার আচার। সমগ্র জাতি বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করবে বছরব্যাপী নানা আয়োজন, কর্মসূচি, প্রকাশনা, আলোচনা ইত্যাদির মাধ্যমে। মুজিববর্ষকে হূদয়ে ধারণ করে বাংলাদেশ সরকারের নানা কর্মসূচিকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু মহামারী করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বাংলাদেশে শুরু ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে। এ কারণে মুজিববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা হয়েছে সীমিত আকারে। এক অজানা আতঙ্কে প্রতিটি প্রহর কাটছে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের। দেশে দেশে প্রতিযোগিতা চলছে বর্বরতার, বীভৎসতার। একটি ঘটনাকে আরেকটি ঘটনা এসে ঢেকে দিচ্ছে, অসহায় হয়ে পড়েছি আমরা। অসহায়ত্ব ঘিরে রাখছে আমাদের। জিম্মি হয়ে আছি সমাজের অনৈতিকতার কাছে, দুর্বৃত্তায়নের কাছে। করোনা এবং সমাজের দুর্বৃত্তায়নার মধ্যেও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আদর্শের যথাযথ বাস্তবায়ন হোক। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক লড়াই ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এবং শোষণ ও বৈষম্য বিলোপের জন্য। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বৈষম্য বিলোপ এবং দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই হবে তার প্রতি আমাদের সর্বোত্তম শ্রদ্ধা নিবেদন। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি অমলিন থাকুক, তার কর্ম ও আদর্শ আমাদের পথচলার পাথেয় হোক।

‘মুজিববর্ষ’ পালনের ভেতর দিয়ে নিঃসন্দেহে দিনবদলের কর্মসূচির মূল্যায়ন হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ঘোষিত দিনবদলের কর্মসূচিতে বলেছিলেন, নতুন প্রজন্মের যে তরুণ-তরুণীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষ্যে প্রণীত ভিশন-২০২১ আমরা তাদেরই উৎসর্গ করছি। বিশ্বায়নের এ যুগে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য অপার সম্ভাবনাময় নতুন প্রজন্মের ভোটার তথা তরুণ-তরুণীদের শ্রম, মেধা, জ্ঞান ও মননকে আমরা কাজে লাগাতে চাই। নতুন প্রজন্মকে তাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ ও জাতিগঠনের এই মহৎ কর্মযজ্ঞে শামিল হওয়ার জন্য আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের বর্তমান তোমাদের ভবিষ্যতের জন্য উৎসর্গ করছি। দেশবাসীর কাছে আমাদের আহ্বান, আসুন সব ভেদাভেদ ভুলে আবার আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জেগে উঠি, দিনবদলের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হই। শোষণ-বঞ্চনা, বৈষম্য ও দুঃশাসনের চির অবসান ঘটাই। একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ও সহিষ্ণু সমাজ গড়ে তুলি। সুখী সমৃদ্ধিশালী সোনার বাংলা গড়ে তোলার সংগ্রামে নবজাগরণ সৃষ্টি করি। ‘মুজিববর্ষ’ সামনে রেখে যদি এ ধরনের নবজাগরণ সৃষ্টি করা যায়, তবেই বর্ষটি পালন জাতির জীবনে সফল ও সার্থক হয়ে উঠবে। আমরা এই কামনা করি।

রাজনৈতিক সহিংসতা, নানা দুর্যোগ-দুর্ঘটনা আর ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ইংরেজি ২০২০ সাল। মহাকালে মিলিয়ে গেল আরো একটি খ্রিস্টীয় বছর। সেন্ট গ্রেগরি প্রবর্তিত ক্যালেন্ডারের হিসেবে ২০২০ সাল শেষ হয়ে যাবে আজ। নতুন বছরটি আনন্দে, শান্তিতে ভরে উঠুক— এই প্রত্যাশা। আমাদের ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক। পুরাতন বছরের ব্যর্থতা ও গ্লানিকে পেছনে ফেলে নব উদ্যমে আমরা সোনালি ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাব। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ সোনার বাংলা গড়ে উঠুক। নতুনের আহ্বানে পুরাতন বছরের সব জঞ্জাল ধুয়ে-মুছে যাক। নতুন বছর আমাদের সবার জীবনে অনাবিল সুখ, সমৃদ্ধি ও শান্তি বয়ে আনুক।

আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে।/তবুও শান্তি, তবুও আনন্দ, তবুও অনন্ত জাগে।— কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের এ কথার মতোই দুঃখ-কষ্ট সবকিছু কাটিয়ে নতুন জীবনের দিকে যাত্রার প্রেরণা নেবে মানুষ। নতুন বছরটি যেন সমাজ জীবন থেকে, প্রতিটি মানুষের মন থেকে সকল গ্লানি, অনিশ্চয়তা, হিংসা, লোভ ও পাপ দূর করে। আমাদের প্রিয় স্বদেশ যেন সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে পারে।

 

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads