• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশের নারী অগ্রগতির চালচিত্র

  • ফয়জুন্নেসা মণি
  • প্রকাশিত ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

উন্নয়নে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও সাফল্য বিশ্বে নারী অগ্রগতিতে নতুন বার্তা দিচ্ছে বাংলাদেশ। সত্যিই বাঙালি নারীদের জাগরণের ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল আমাদের ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে। দিন অনেক বদলে গেছে। নারী এখন আর শুধু গৃহকর্মে সুনিপুণ কিংবা সাহিত্যে সৃজনী পদচারণায় সীমাবদ্ধ নন। একথা স্বীকার করতেই হবে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের বিকাশে নারীর শ্রমই অন্যতম নিয়ামক শক্তি। বাংলাদেশে কৃষি ও শিল্প শ্রমে নারীর ভূমিকা অগ্রগণ্য। আধুনিক সময়ের সঙ্গে পাল্টে গেছে নারীদের দৃষ্টিভঙ্গি। তারই প্রতিফলন সাধারণ পেশার বাইরে চ্যালেঞ্জিং ও ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত হয়ে নারীরা বহির্বিশ্বেও বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করছেন। নানামাত্রিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছেন বাংলাদেশের নারীরা। সার্ক অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে নারী নিগ্রহের তুলনায় অনেক এগিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, নারীদের উন্নয়নে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া এবং নারীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ প্রশংসার দাবিদার। বাংলাদেশের বেসরকারি সেক্টরে মূল ধারার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন নারী উদ্যোক্তারা। তারা নিজেদের শিক্ষা, মেধা আর সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে ছোট, মাঝারি ও বড় শিল্প গড়ে তুলছেন। পোলট্রি, দুগ্ধ খামার, ফিশারি, পাটপণ্য উৎপাদন, বুটিক, হ্যান্ডিক্র্যাফটস, আইসিটি ফার্ম, অনলাইন বিপণন থেকে শুরু করে নতুন নতুন সৃজনী, এমনকি উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে সফলতার অনন্য স্বাক্ষর রাখছেন নারীরা। তাদের এসব উদ্যোগের ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থান এবং নতুন নতুন পণ্য বাজারও সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলার নারীরা এখন পুরুষদের সমানতালে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য সামলিয়েও আগের মতোই ঘর-সংসার আর সেবাযত্নে সব তাল ঠিক রাখছেন। প্রায় শতবর্ষ আগে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন উন্নয়নে নারীদের অংশীদারিত্বের যে পথ দেখিয়ে গেছেন সেই পথ ধরেই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় অধিষ্ঠিত হয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন। এখন সবখানে নারীর ভূমিকা প্রায় সমানে সমান। কোথায় নেই নারীর সগর্ব অবস্থান? শিক্ষাঙ্গন থেকে রাজনীতি, বাণিজ্য থেকে শিল্পকর্ম, সাংবাদিকতা থেকে সৈনিক, ঝুঁকিপূর্ণ মিশন থেকে সেবাধর্মে—সবখানে আছে নারীর সমুজ্জ্বল ভূমিকা। বাংলার নারীরা শুধুই এগিয়ে যাচ্ছেন তা নয়, অর্থনীতির চাকাকে গতিময় করছেন এবং বাংলাদেশকে সঙ্গে করে বিশ্বময় সফলতার নতুন নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করছেন। এই গৌরবময় অগ্রযাত্রা আর থামার নয়। সিপিডির এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে-পরিবার পরিপালন, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যাসহ সংসার ও আবাসকে গতিশীল রাখার ক্ষেত্রে নারীর নীরব অবদানের অর্থমূল্য ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। সুতরাং দেশের উন্নয়নে নারীর ভূমিকা বহুমাত্রিক এতে কোনো সন্দেহ নেই। নারীদের শিক্ষা ও দক্ষতা যত বাড়বে পেশাদারিত্বে দায়িত্বশীল অংশগ্রহণ এবং দেশের উন্নয়নে নিজেদের মেধাকে ততই কাজে লাগাতে পারবে। নারী শিক্ষায় অগ্রগতি, ঝরে পড়ার হার কমে যাওয়াসহ শিক্ষার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোল মডেল এখন বাংলাদেশ।

‘নারীর ক্ষমতায়নে’ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ সদর দপ্তরে কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অব উইমেন (সিএসডব্লিউ)-এর ৬১তম সেশনে কান্ট্রি স্টেটমেন্ট পর্বে একথা বললেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ এমপি। একথার বাস্তব অস্বীকার করার সুযোগ নাই। বাংলার নারীরা শুধুই এগিয়ে যাচ্ছেন তা নয়, অর্থনীতির চাকাকে গতিময় করছেন এবং বাংলাদেশকে সঙ্গে করে বিশ্বময় সফলতার নতুন নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করছেন। এই গৌরবময় অগ্রাত্রা আর থামবার নয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী। প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু নারী উন্নয়ন আর জাগরণেই নয়, তিনি নারীর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় বিশ্বে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী। জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীসহ প্রায় সব পেশায় ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল পর্যায়ে, এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে বাংলাদেশের নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। বহুমাত্রিক পেশায় নারীর অংশগ্রহণ ক্রমেই বাড়ছেই। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেই পুরুষের পাশাপাশি নারীদের যুগপৎ অংশগ্রহণে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে সাহায্য করেছে।

বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে গৌরবময় ও সম্মানজনক আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বাংলার মেধাবী নারীরা। ব্যারিস্টার স্বপ্নারা খাতুন প্রথম বাংলাদেশি যাকে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ জজ হিসেবে নিয়োগ দেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টির এমপি নির্বাচিত হয়েছেন রুশনারা আলী, রেজওয়ানা সিদ্দিক টিউলিপ, রূপা হক। ‘বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো’ আসনের এমপি রুশনারা আলীকে ট্রেড এনভয় নেটওয়ার্কের বাংলাদেশবিষয়ক বাণিজ্যদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ‘নিউ হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্গ’ আসন  থেকে লেবার পার্টির প্রতিনিধিত্ব করছেন টিউলিপ সিদ্দিক। অটিজম বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তিনি গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসনও বটে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর কর্মকাণ্ডেও বাংলাদেশের নারীরা দক্ষতার সঙ্গে প্রশংসনীয় দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন আইভরি কোস্টে ৫৬ সদস্যের একটি মেডিকেল কন্টিনজেন্টে কর্নেল ডা. নাজমা বেগম নারী কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দেন। নারী সাফল্যের আরেকটি অর্জন নাজনীন সুলতানার বাংলাদেশের প্রথম নারী ডেপুটি গভর্নর নিযুক্ত হওয়া। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান এশিয়ার নোবেলখ্যাত র্যামন ম্যাগসাসে পুরস্কার পেয়ে বাংলাদেশের নারীর কৃতিত্বকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করেছেন। কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডে এসটি জোনস শহরে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব উইমেন পুলিশের ৫০তম বার্ষিক সম্মেলনে ‘আইএডব্লিউপি-২০১২’ পুরস্কারে ভূষিত হন বাংলাদেশি কৃতী নারী আবিদা সুলতানা। বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী ৫০ উদ্যোক্তার তালিকায় বিশ্বখ্যাত নারী উদ্যোক্তার স্বীকৃতি পেয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক সুমাইয়া কাজী। খেলাধুলায় ও কসরতের সাহসী কর্মযজ্ঞে পিছিয়ে নেই নারী। হিমালয় শৃঙ্গ এভারেস্ট জয় করার মতো দুঃসাধ্য কাজ করে দেখিয়েছেন প্রথম বাংলাদেশি নারী নিশাত মজুমদার। টেবিল টেনিস খেলোয়াড় জোবেদা রহমান লিমু কিংবা দাবা সাম্রাজ্ঞী রানী হামিদ, সালমা খাতুন এবং ভারতে আয়োজিত এসএ গেমসে অংশগ্রহণকারী প্রমীলা ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত দেশের ক্রীড়াঙ্গনের সেরা তারকা।

নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বের শীর্ষ দশে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) রাজনীতিতে অংশগ্রহণ, অর্থনৈতিক সমতা, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্যতার ভিত্তিতে বাংলাদেশকে নারীর উন্নয়নে একটি আদর্শ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ডব্লিউইএফের গবেষণা মূল্যায়নে কেবল নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বিচারে বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক বড় বড় দেশকে পেছনে ফেলে এসেছে। রাজনীতিতে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাস করে আঞ্চলিক নেতৃত্বে সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণ ওমেন ইন পার্লামেন্টস (ডব্লিউআইপি) গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে। এসব মূল্যায়নের কারণ প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকারসহ সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। কাজেই বাংলাদেশের নারীরা এখন শুধুই নারী হিসেবে নয়, তাদের মূল্যায়ন নক্ষত্রতুল্য। রাজনীতিতে নারীর বর্ধিত অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য ইউনিয়ন কাউন্সিল ও উপজেলা পরিষদে এবং পৌরসভায় সংরক্ষিত নারী আসন এক-তৃতীয়াংশে উন্নীতকরণ এবং সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থায় নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে।

আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সিদ্ধান্তে এত দ্রুত তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নারী ক্ষমতায়িত হয়েছে।’ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রকাশিত বৈশ্বিক লিঙ্গবিভাজন সূচক  গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স-২০১৮ অনুযায়ী বিশ্বে লিঙ্গবৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। নারীর ক্ষমতায়নে অনন্য ভূমিকার জন্য  আন্তর্জাতিক নারী দিবসে শেখ হাসিনাকে ‘লাইফ টাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’-এ ভূষিত করে ‘ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান উইমেন’। তিনি স্বাস্থ্য খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদানের জন্য ‘সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। নারী শিক্ষার উন্নয়ন এবং ব্যবসায়িক উদ্যোগে ভূমিকার জন্য গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি নারীকে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়িত করতে জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ৫০-এ উন্নীত করেছেন। সরাসরি নির্বাচনেও অন্য দেশের সংসদের চেয়ে বাংলাদেশের সংসদে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৯৯৬ সালে আইন পরিবর্তন করে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় সরকার পর্যায়ে ১২ হাজার নারী প্রতিনিধিত্ব করছেন, ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন ৫০০। তারা সবাই জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে সদর্পে ভূমিকা রাখছেন। আরো একটি লক্ষণীয় ব্যাপার, কৃষি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। বাণিজ্যিক কৃষি এবং খাদ্য নিরাপত্তায় নারীর সরাসরি অংশগ্রহণও বাড়ছে। তাই এখন আর একথা বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে, নারীদের শিক্ষা ও দক্ষতা যত বাড়বে পেশাদারিত্বে দায়িত্বশীল অংশগ্রহণ এবং দেশের উন্নয়নে নিজেদের মেধাকে ততই কাজে লাগাতে পারবে। তারই প্রতিফলন লক্ষ করা যাচ্ছে বাংলাদেশে। ১৯৯৬ সালের পর থেকেই দেশের নারী শিক্ষায় ইতিবাচক অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে। মেয়েদের শিক্ষার চাহিদা ও অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা এবং আগ্রহ তৈরি হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের এই অংশগ্রহণের সুফল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অচিরেই আরো প্রভাব বিস্তার করবে, এটি এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। আরো উল্লেখ করা প্রয়োজন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি থেকে শিল্পনির্ভর অগ্রযাত্রায় নারীর অংশগ্রহণ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জরিপ অনুযায়ী স্বাধীনতার পাঁচ দশকে গ্রামীণ অর্থনীতিতে অকৃষি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ কর্মসূচির মূল সুবিধাভোগী নারীরা হওয়ায় ফলে অকৃষি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বহুলাংশে বেড়েছে। আবির্ভূত হয়েছে অনেক মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ। এর ফলে কর্মসংস্থান এবং স্বাবলম্বন বৃদ্ধি পেয়েছে।

নারী শিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে জাতিসংঘের অন্যতম বিশেষায়িত সংস্থা ইউনেস্কো কর্তৃক বিশেষ স্মারক ‘ট্রি অব পিস’ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। বিশেষভাবে লক্ষণীয়, সেনাবাহিনীসহ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন শাখাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে উচ্চপদগুলোতেও নিযুক্ত হচ্ছেন নারীরা। জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নারীরা প্রশাসনের সচিবসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত হচ্ছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্ববাসীর বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পরিচালনায় নারীরা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। আধুনিক বিশ্বের উপযোগী হয়ে নারীরা সাংবাদিকতায় অকুতোভয় ভূমিকা রাখছেন। প্রথমবারের মতো দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। বুয়েটের প্রথম নারী উপাচার্য হয়েছেন খালেদা একরাম। দেশের প্রথম নারী বিচারপতি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন নাজমুন আরা সুলতানা। দেশের প্রথম নারী ডেপুটি গভর্নর হিসেবে নাজনীন সুলতানা নারীসমাজের কৃতিত্বকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার পুলিশ সপ্তাহের প্যারোডে নেতৃত্ব দিয়ে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। দেশে প্রথম নারী ছত্রীসেনা হিসেবে সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন জান্নাতুল ফেরদৌস সফলভাবে ১ হাজার ফুট উঁচু থেকে অবতরণের সম্মান অর্জন করেন। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নারীরা বাণিজ্যিক জাহাজে নাবিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বিভিন্ন জাহাজে মেরিন অফিসার পদে যোগ দেন। দেশের প্রথম নারী ট্রেনচালক হিসেবে উম্মে সালমা সিদ্দিকার পথ ধরে বর্তমানে রেল চালনায় যোগ দিয়েছেন আরো অনেক নারী। বন বিভাগের বিশাল সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষা, বন্য প্রাণীসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রেখে প্রথম ‘ওয়াংগারি মাথাই’ পুরস্কার অর্জন করেন খুরশিদা বেগম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফা ইসহাক ‘জাতীয় পরিবেশ অলিম্পিয়াড-২০১২’-এর ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ন্স’ হয়েছেন। নারীদের অগ্রযাত্রায় এমন সফলতার কাহিনী বলে শেষ করা যাবে না। জয়তু বাংলার নারী।

 

লেখিকা : কবি ও শিক্ষিকা

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads