• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

সম্পাদকীয়

তারুণ্যের সৃষ্টিশীলতা সময় ও সমাজ

  • প্রকাশিত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

সিনথিয়া সুমি

 

 

মেঘের আড়ালে ঢাকা সূর্যের মতো, এ দেশের মেধাবী ও সৃষ্টিশীল তারুণ্য প্রচারণার ডামাডোল থেকে দূরে থেকে নানা বিষয়ে বিস্ময়কর অবদান রেখে চলেছে। আমরা প্রায়ই হতাশ হই তারুণ্যের দানব রূপ দেখে­-নীতিহীন রাজনীতিতে, সন্ত্রাসে, বিবেকহীন লেজুড়বৃত্তিতে, নিয়ন্ত্রণহীন চাঁদাবাজিতে, মেধাহীন প্রকাশে আর দিশাহীন অনিশ্চিত ভবিষ্যতে। কিন্তু আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় তারুণ্যের ‘মাতৃ’রূপ-যখন তা মানবিক সৃষ্টিশীল রশ্মি ছড়ায় সাধারণের কল্যাণে, সমাজের উন্নয়নে বা দেশ বিনির্মাণে।

এ কথা বলা অন্যায় হবে না, বর্তমানে বিভিন্ন মানবিক সেবামূলক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রয়াস, যেগুলো খুব দরকারি কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যেখানে অপ্রতুল বা ব্যর্থ বা জরাগ্রস্ত সেখানে সৃষ্টিশীল তারুণ্য তাদের মেধা ও আধুনিক কলাকৌশল নিয়ে এগিয়ে এসেছে।

রক্ত সরবরাহের ব্যবস্থার কথাটাই ধরুন, এখন এর একটি ভালো উৎস হচ্ছে বিভিন্ন তরুণ বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত ‘ব্লাড ব্যাংক’। এই ব্লাড ব্যাংকগুলো মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নির্ভর সদস্যের এক একটি তথ্য ভান্ডার, যেগুলোকে ব্যবহার করে খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। এতে রক্তদাতারা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত। প্রায় সকলেই তরুণ। ফলে এটা এর বিকল্প ব্যবস্থা থেকে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য।

রাজধানী ঢাকাসহ নানা শহরে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের পরিবারের শিশুদের মাঝে শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন তরুণ সংগঠনের অবদান চোখে পড়ার মতো। রাষ্ট্র যেখানে এগিয়ে যেতে পারেনি, সেখানে তরুণরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাদের সীমিত সামর্থ্য অথচ অসামান্য মনোবল নিয়ে। তারুণ্য এখানে সৃষ্টিশীল। তারা ব্যবহার করেছে উন্নত প্রযুক্তি, সমন্বয় করছে নানা ধারণার, খুঁজে বের করছে অর্থ জোগানের নানা কৌশল। তারা ব্যবহার করেছে উন্নত প্রযুক্তি, সমন্বয় করছে নানা ধারণার, খুঁজে বের করছে অর্থ জোগানের নানা কৌশল।

একই রকম প্রয়াস চলছে দেশের আনাচে-কানাচে, দুর্গম পাহাড়ে, সুবিধা বঞ্চিত জনপদে, অবহেলিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীতে। তারুণ্য তার মানবিক মাতৃরূপের বর্ণচ্ছটায় আলোকিত করছে, দূর করছে অন্ধকার। অনেক তরুণ প্রতিষ্ঠা করছে স্কুল, দাতব্য প্রতিষ্ঠান-ব্যক্তিগত বা দলীয় উদ্যোগে। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এ দেশের তারুণ্য ঝাঁপিয়ে পড়ছে দ্বিধাহীনভাবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা দুর্গম এলাকার বিশেষ প্রয়োজন সম্পর্কে তথ্য দ্রুত সরবরাহ হচ্ছে আর তার প্রতিক্রিয়ায় দ্রুত সাড়া দিচ্ছে তরুণসমাজ। তারা পৌঁছাতে পারছে স্বল্প সময়ে, স্বল্প খরচে, যথাযথ সাহায্য নিয়ে। ফলে তারা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার একটা ভালো বিকল্প হয়ে উঠছে যেখানে সাধারণ জনগণের আস্থার জায়গাটা অনেক স্থানেই বেশি শক্তিশালী।

এই পথ ধরেই এখন দেশের নানা স্থানে ঘটে যাওয়া অনাচারের তথ্য উঠে আসছে যোগাযোগমাধ্যমে, প্রচার পাচ্ছে মিডিয়াতে। ফলে অনেক ক্ষেত্রে প্রতিকার পাওয়ার পথ সুগম হচ্ছে। এই সব ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখছে তরুণসমাজ। তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার, সম্প্রসারণ, রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে তরুণদের ভূমিকা কিংবদন্তিতুল্য। এই খাত হতে পারে বাংলাদেশের আয়ের মূল উৎস। কাজেই দেখা যাচ্ছে, তরুণসমাজই বর্তমানে দেশের উদ্ভাবনের, মানবিক স্পন্দনের ও সামাজিক সমস্যা সমধানের এক বিরাট বিকল্প শক্তি। বিশেষ করে রাষ্ট্র যেখানে জরাগ্রস্ত ও অনেকটা স্থবির; নেতৃত্ব যেখানে ক্ষমতালিপ্সু, রাজনীতি যেখানে পথভ্রষ্ট, তারুণ্য সেখানে আশা-ভরসার স্থল। সুস্থ-সবল, নির্ভীক, সৎ, নিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও স্বপ্নচারী তারুণ্যের জয় হোক।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads