• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

উত্তরবঙ্গের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কিছু কথা

  • প্রকাশিত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আকিজ মাহমুদ

 

 

 

বিগত এক যুগ ধরে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক সকল সূচকে  ঈর্ষান্বিত উন্নতি সাধন করে চলেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির আগে মধ্যমআয়ের দেশে উন্নীত হওয়া দেশের জন্য অনেক বড় একটি মাইলফলক। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন অবধারিত হয়ে ওঠে; যেটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, ব্রিজ-কালভার্ট এবং রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সমপ্রসারণসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের মাধ্যমে  দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। শুধু তা-ই নয়, প্রযুক্তিনির্ভর পৃথিবীতে বাংলাদেশ সর্বক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন করার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি দক্ষ জনবল তৈরি করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রয়াস নিয়েছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে দেশের অগ্রগতি গর্ব করার মতো। কিন্তু দেশের বৃহত্তর উত্তরবঙ্গের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আগের তুলনায় খুব একটা পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে না।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হয় তা হচ্ছে দরিদ্রতা বিমোচনে। বিশ্বব্যাপী দরিদ্রতা বিমোচনে বাংলাদেশ  সরকার বেশ প্রশংসা কুড়াচ্ছে। বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্যের কোঠায় দারিদ্র্য নামিয়ে আনা। যার ধারাবাহিকতায় এরই মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার মর্যাদা লাভ করেছে। এর মানে দেশের মানুষের আয় রোজগার আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।  কিন্তু বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৮ সালের প্রকাশিত প্রতিবেদনে ধনী-দরিদ্র বৈষম্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। দেশে ৬ থেকে ৭ শতাংশ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি পরও উত্তরবঙ্গে দারিদ্র্যের হার কমছেই না। বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশে যে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তা গরিব পরিবারের আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হচ্ছে না। দেশে অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও আসছে না পর্যাপ্ত বিনিয়োগ। উত্তরবঙ্গের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যেটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া উত্তরবঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে এখনো সঠিক পরিবেশ এবং অবকাঠামোগত ব্যবস্থার সমন্বয় ঘটাতে পারেনি সরকার এমনটি অনেকের ধারণা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে রংপুর বিভাগে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ, ছয় বছর পর ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে একই সময়ে রাজশাহী বিভাগে দারিদ্র্য ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে প্রায় ২৯ শতাংশ হয়েছে। এর মানে হলো রাজশাহী অঞ্চলে দারিদ্র্য পরিস্থিতি খুব বেশি বদলায়নি। রাজশাহী বিভাগের দারিদ্র্যের হার প্রায় স্থিতিশীল থাকলেও বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায় জেলাওয়ারি দারিদ্র্যের হার উত্থান-পতন ঘটেছে বিভাগটিতে; যেখানে কেবল নওগাঁ জেলাতেই ৬ বছরে দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

দেশের সর্ব উত্তরের জেলাগুলোতে দরিদ্রতার হারে যে তথ্য বিবিএস থেকে পাওয়া যাচ্ছে তা যেন সময়ের উল্টো চিত্রই তুলে ধরছে। উত্তরবঙ্গের মানুষের ওপর দেশের চলমান উন্নয়নের হাওয়া যে তাদের খুব বেশি আর্থিক সমৃদ্ধি ঘটাতে পারেনি তা উল্লেখিত দারিদ্র্যের হার বিবেচনাতেই বোঝা যায়। ২০১৮ সালে বিবিএসের প্রকাশিত দেশের শীর্ষ ১০টি দারিদ্র্য জেলার মধ্যে কেবল রংপুর বিভাগেরই রয়েছে ৫টি জেলা। এই ৫টি জেলাই আবার দেশে মঙ্গা কবলিত জেলা বলে অধিক পরিচিত।

মঙ্গাপীড়িত উত্তরবঙ্গের এই অঞ্চলের মানুষদের আজো লড়াই করে বাঁচতে হচ্ছে দরিদ্রতার সাথে। দেশে অবকাঠামো ক্ষেত্রে প্রচুর উন্নয়ন ঘটলেও এ অঞ্চলে তা সুফল বেয়ে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে মঙ্গা কবলিত এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ওপর সরকারের আলাদাভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের তুলনায় উত্তরবঙ্গের বিভাগগুলোর মধ্যে বৈষম্য অনেকক্ষেত্রে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনেক কম অংশ বরাদ্দ করা হয় রংপুর বিভাগের জন্য, ২০১২-১৩ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এডিপিতে রংপুর বিভাগের জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ, যেখানে ঢাকা বিভাগের বরাদ্দ ছিল ৩৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। উত্তরবঙ্গের গ্রামীণ অবকাঠামো, চরাঞ্চলের এবং চলনবিলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্ননে এডিপির বরাদ্দ কয়েকগুণ বৃদ্ধি করতে হবে।

কৃষিভিত্তিক উত্তরবঙ্গের কৃষকদেরও একইভাবে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হচ্ছে প্রভাবশালী বাজার নিয়ন্ত্রণ করা অসংখ্য সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। তিস্তাসহ উত্তর অঞ্চলের বেশিরভাগ নদীতে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট দেখা দেয়। যার কারণে জমিতে সেচ ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের বাড়তি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে, বিনিয়োগ বৃদ্ধি করলেও কৃষকদের ফসলের ন্যায্য  মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। ফলে কৃষকদের প্রতি বছর আর্থিক সংকট মাথায় নিয়ে চলতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ এর কারণে উত্তরবঙ্গের অনেক জেলায় নতুন করে দরিদ্রতার হার আরো বৃদ্ধি পাবে। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য এ অঞ্চলের মানুষদের প্রথমেই দারিদ্র্য নামক শোষিত শব্দ থেকে রেহাই দিতে হবে। এজন্য অন্যতম ভূমিকা রাখবে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ‘যমুনা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করে উত্তরবঙ্গের সাথে দেশের অন্য অঞ্চলের মানুষদের মাঝে যদি নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপন করা যায় তাহলেই এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন ঘটবে, মিলবে অর্থনৈতিক মুক্তি’— এমনটাই ভেবেছিলেন মওলানা ভাসানী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হলে উত্তরবঙ্গ তথা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হতে থাকে। অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা উত্তরবঙ্গের কৃষিতে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার ঘটিয়েছে সেতুটি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে কৃষক ও ভোক্তার মাঝে দূরত্ব সৃষ্টিকারী পাইকার ও মধ্যস্ততা ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে, কৃষির মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারছে না এ অঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত কৃষক সমাজ।

২০২০ সালের জুন মাসের শেষে বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ শহর থেকে কর্মহীন হয়ে গ্রামে ফিরে গেছে এবং ৭৩ শতাংশ দরিদ্র বা হতদরিদ্র পরিবার কোভিড-১৯ এর কারণে আয়হীন হয়ে খাদ্য সংকটে ভুগছে, ৫৩ শতাংশ পরিবার ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা, প্রতিবেশী ও  আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে অর্থ ধার করে জীবন বাঁচাচ্ছে এবং ৩৭ শতাংশ পরিবার তাদের সঞ্চিত সম্পদ বিক্রি করে খাদ্য সংগ্রহ করছে। উত্তরবঙ্গের মানুষ যে খুব সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে দিনাতিপাত করছে না তা এই পরিসংখ্যানগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায়।

দেশের উত্তর অঞ্চলে একটি বিশাল শ্রমশক্তি থাকা সত্ত্বেও দেশ তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে। শ্রমশক্তি রপ্তানি এবং দেশের জন্য উপযোগী লোকবল গড়ে তুলতে উত্তরবঙ্গে নেই উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠান। আয়ের উৎস পর্যাপ্ত না হওয়ায় এ অঞ্চলের গ্রামীণ মানুষদের শহরমুখী হতে হচ্ছে। খামার, গৃহপালিত পশুপালন, মৎস্য উৎপাদনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ অঞ্চলের অনেক তরুণের বেকারত্ব দূর করা সম্ভব হবে। তাই সরকারকে ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা এবং সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ সঠিকভাবে এবং সঠিক জায়গায় বরাদ্দ হচ্ছে কিনা তা তদারকি করে দেখা দরকার। উত্তরবঙ্গের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রভাবক হতে পারে এ অঞ্চলের নদীসমূহ। শুধু কৃষি নয়, বরং অসংখ্য নদীনালা বেষ্টিত এ অঞ্চলের অনেক মানুষ নদীকেন্দ্রিক প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ভারত থেকে আসা বেশিরভাগ নদীতে প্রয়োজনীয় সময়ে পানির সংকট একদিকে যেমন এ অঞ্চলের কৃষিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, অন্যদিকে নদীর জীববৈচিত্র্য তথা জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অকাল বন্যা চলনবিলের হাজারো কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ করছে, আবার নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ না থাকায় বৃহত্তর উত্তরবঙ্গের অনেক জেলে এবং সাধারণ মানুষের মৎস্য শিকার কেন্দ্রিক জীবিকা নির্বাহের পথ আজ প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার সম্মুখীন। তাই উত্তরবঙ্গের অর্থনীতির চাকা আরো বেগবান করতে সরকারকে অতি দ্রুত নদীগুলোকে নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা সাজাতে হবে এবং শুষ্ক মৌসুমেও যেন নদীতে পর্যাপ্ত পানি থাকে এর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

উত্তরবঙ্গের নতুন করে সম্ভাবনা জাগানিয়া একটি কৃষি হচ্ছে চা উৎপাদন। সম্প্রতি দেশে চা উৎপাদনের দিক থেকে উত্তরবঙ্গ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। চা উৎপাদন যদি পুরো উত্তরবঙ্গে সম্প্রসারণ করা যায় তাহলে দেশে একদিকে যেমন সবুজ বনায়ন করা সম্ভব হবে, একইসাথে চা রপ্তানিমুখী কৃষি হওয়ায় কৃষকেরাও অধিক মুনাফা অর্জন করতে সামর্থ্য হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দেশে ১০০টিরও বেশি অর্থনৈতিক অঞ্চল দেশব্যাপি গড়ে তোলা হচ্ছে। রংপুর বিভাগে নয়টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়নে অত্যন্ত ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অগ্রধিকার ভিত্তিতে যদি উত্তরবঙ্গের এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো গড়ে তোলা যায় তাহলে মঙ্গা কবলিত এই অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক  মানুষের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার নতুন পথ তৈরি হবে এবং মঙ্গা অনেকটাই কেটে যাবে বলে আশা করা যায়।

শিক্ষাক্ষেত্রে রাজশাহী বিভাগের অবস্থান ভালো হলেও রংপুর বিভাগ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। সরকার উত্তরবঙ্গে শিক্ষার নব জোয়ার সৃষ্টিতে বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সেক্ষেত্রে গবেষণার মান উন্নয়নে কৃষিতে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং প্রয়োগের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে সমপ্রতি নাটোরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে; যেটি খুবই প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ। উত্তরবঙ্গের নারী-পুরুষের লিঙ্গবৈষম্য অনেকটা কমে এসেছে। কৃষিসহ সরকারি-বেসরকারি সকল খাতে এ অঞ্চলের নারীদের এখন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ করা যায়।

‘অভাবে স্বভাব নষ্ট’ বলে একটি প্রবাদ মানুষের মুখে বেশ প্রচলিত। উত্তরবঙ্গের মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা দরিদ্রতা। আর কেবল এই দরিদ্রতার অভাব অনটন থেকেই জন্ম হয় হাজারো সমস্যার। উত্তরবঙ্গের দারিদ্র্য বিমোচন করাই হবে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। যেখানে সরকারকে অবশ্যই অবহেলিত উত্তরবঙ্গের মানুষের উন্নয়নে দেশের অন্যান্য অঞ্চল অপেক্ষা অগ্রাধিকার দিতে হবে। স্বাধীনতা পরবর্তী অধিক জনসংখ্যা এবং শ্রমশক্তি থাকা সত্ত্বেও এ অঞ্চলের মানুষদের আর্থিক উন্নয়ন এবং বেকারত্ব দূর করতে খুব বেশি শিল্প কারখানা ও প্রতিষ্ঠান এ অঞ্চলে গড়ে ওঠেনি। ফলে অন্যান্য অঞ্চল অপেক্ষা এই অঞ্চলে মানুষের আয় রোজগারের পথ কম। ক্রয়ক্ষমতা কম হওয়ায় এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ আধুনিক প্রযুক্তি ক্রয় এবং ব্যবহারে অনেকটা পিছিয়ে। যে কারণে দেশব্যাপী মানুষজন ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ করতে পারলেও এ অঞ্চলের মানুষ ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা খুব কমই উপলব্ধি করতে পারছে।

বন্যা, খরা, নদী ভাঙনের মতো প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার সাথে যুদ্ধ করা উত্তরবঙ্গের মানুষদের জন্য দরিদ্রতা একটি বড় অভিশাপ। এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশের সব মানুষের মোট আয়ের ৩৮ শতাংশই করে উপরের দিকে থাকা ১০ শতাংশ ধনী মানুষ। ছয় বছর আগে তাদের আয়ের পরিমাণ ছিল মোট আয়ের ৩৫ শতাংশের মতো। দেশে ধনী গরিবের মধ্যে এই যে বৈষম্য তা উত্তরবঙ্গে যেন আরো প্রকট হয়ে উঠেছে। সরকারের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন এবং উন্নতির সুষম বন্টন উত্তরবঙ্গের এসব প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে যদি নিশ্চিত না করা যায়, তাহলে উত্তর অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কোনো পরিবর্তনই সাধিত হবে না। দেশ হয়তো একদিন উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাতে সক্ষম হবে কিন্তু ধনী-গরিবের আয়বৈষম্য বেড়েই যাবে। মাথাপিছু আয়ও বাড়বে কিন্তু তা দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে না।

 

লেখক : নিবন্ধকার

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads