• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সম্পাদকীয়

অসমাপ্ত আত্মজীবনী : আদর্শবাদিতা জীবন সিঞ্চিত সুধা

  • প্রকাশিত ১৯ মার্চ ২০২১

ড. মো. গোলাম সারওয়ার

 

 

 

আত্মজীবনীর সাহায্যে একজন লেখক তার নিজের জীবনকে কালের সঙ্গে মিলিয়ে নেন। জীবন ও কালের যে সংযোগ নির্মিত হয় তাতে পাঠক উপকৃত হন, কালের সাঁকো তৈরি হয়। নির্মিতির এই ধারায় কাল কখনো ব্যক্তি প্রোজ্জ্বল হয়ে ওঠে আপন বৈশিষ্ট্য দ্বারা। বৈশিষ্ট্যের চমৎকারিত্বের গুণে ব্যক্তি তার আপন কালের অন্য ব্যক্তিদের চৌম্বকত্বের বিপরীত মেরুর আকর্ষণধর্ির্মতার গুণ হেতু অঙ্কন করেন শিল্পিত উপায়ে। ফলে উপায়হীনভাবে কাল ধরা পড়ে তুলির ডগায়। শিল্প নির্মাণের উপকরণ হওয়ার কারণে জীবনের সত্যাসত্য বাস্তবিকতার নিরিখে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর সুযোগ লাভ করে। কালোত্তীর্ণ জীবন সমাজের কাছে অনুকরণীয় হয়ে ওঠে, আদর্শিক প্রেরণার আধার হয়ে প্রচারিত হয়, নব প্রজন্মের বাতিঘর হয়ে জীবন ও কালকে একাকার করে সঞ্চারিত হতে থাকে প্রজন্মান্তরে। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনীর জীবন ও আমাদের নিকট তেমনই আদর্শের বাতিঘর।

আদর্শের প্রশ্ন তুলেই বইটি শুরু করেছেন বঙ্গবন্ধু। বন্ধুবর্গ ও স্ত্রী যখন জেলে বসে জীবনী লিখতে উৎসাহিত করেছেন, তখন বঙ্গবন্ধুর সন্দেহ হয়েছে, তার স্মৃতিকথা আদৌ কারো কাজে লাগতে পারে কি না, তাই ভেবে। শেষে শুরু করেছেন এই বলে যে, ‘শুধু এইটুকু বলতে পারি, নীতি ও আদর্শের জন্য সামান্য একটু ত্যাগ স্বীকার করতে চেষ্টা করেছি।’ (অসমাপ্ত আত্মজীবনী, ঢাকা : দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ২০১২ পৃ. ১)। বইটি পড়লে বোঝা যায়, তিনি যে-কোনো একটি আদর্শবাদী কর্মকাণ্ডে যুক্ত, এই বোধ থেকেই তার পরিবার তাকে আজীবন সমর্থন জুগিয়েছে। তিনিও জানতেন তার কাজ ‘আদর্শবাদী’ বলেই তিনি তার পরিবারের শুধু সমর্থন নয়, আর্থিক সাহায্যও পাবেন। ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম লীগ সরকারের জেল থেকে সদ্য মুক্ত হওয়ার স্মৃতিতে ও সম্পর্কেই লিখেছেন : ‘আমার টাকার দরকার, বাড়ি না গেলে টাকা পাওয়া যাবে না। বৃদ্ধ মা, আর স্ত্রী ও মেয়েটিকে (শেখ হাসিনা) দেখতে ইচ্ছে করছিল।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ১২৩)। পিতা শেখ লুৎফর রহমানের ইচ্ছে ছিল, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হয়েছে, পুত্র এবার অর্থকরী কিছু করুক, আইন পড়ুক। বলেও ছিলেন : ‘যদি ঢাকায় না পড়তে চাও, তবে বিলাত যাও। সেখান থেকে বার অ্যাট ল ডিগ্রি নিয়ে এসো। যদি দরকার হয় আমি জমি বিক্রি করে তোমাকে টাকা দিব।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ১২৫)। শেখ মুজিব রাজি হননি। আব্বাকে বুঝিয়েছেন : ‘যে পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেছিলাম, এখন দেখি তার উল্টা হয়েছে।’ (প্রাগুক্ত, পৃ.১২৫-৬)। তাই মুসলিম লীগের বিরুদ্ধেই লড়াই করা প্রয়োজন। তাই তিনি সংসার কর্তব্যে অপারগ। পিতা তখন বললেন : ‘আমাদের জন্য কিছু করতে হবে না। তুমি বিবাহ করেছ, তোমার মেয়ে হয়েছে, তাদের জন্য তো কিছু একটা করা দরকার।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ১২৬)। মুজিবের উত্তর : ‘আপনি তো আমাদের জন্য জমিজমা যথেষ্ট করেছেন, যদি কিছু না করতে পারি, বাড়ি চলে আসব। তবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া চলতে পারে না।’ (প্রাগুক্ত, পৃ.১২৬)। শুধু পিতাই নন, স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা, ওরফে রেণু, তিনিও ‘কষ্ট করে পয়সা জোগাড় করে রাখতেন শেখ মুজিবের জন্য। পারিবারিক ত্যাগের কিছু দুঃখের অথচ সহাস্য ও মধুর বর্ণনাও দিয়েছেন শেখ মুজিব। ঢাকা জেল, ফরিদপুর জেল হয়ে পুলিশি পাহারায় গোপালগঞ্জ মহকুমায় নিয়ে আসা হলো তাকে মামলার আসামি হিসেবে। তিনি লিখছেন : ‘গোপালগঞ্জে যেয়ে দেখি থানার ঘাটে আমাদের নৌকা। আব্বা, মা, রেণু, হাচিনা ও কামালকে [পুত্র] নিয়ে হাজির।... গোপালগঞ্জ থেকে আমার বাড়ি চৌদ্দ মাইল দূরে। এক বৎসর পরে আজ ওদের সাথে আমার দেখা। হাচিনা আমার গলা ধরল আর ছাড়তে চায় না। কামাল আমার দিকে চেয়ে আছে, আমাকে চেনেও না আর বুঝতে পারে না, আমি কে? মা কাঁদতে লাগল। আব্বা মাকে ধমক দিলেন এবং কাঁদতে নিষেধ করলেন।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ১৮৩)। ১৯৫১ সালের অক্টোবরে মওলানা ভাসানীসহ শেখ মুজিব পুনর্বার জেল গেলেন (প্রাগুক্ত, পৃ. ১৯৫)। মুক্তি পেলেন ১৯৫২-এর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে। ততদিনে ভাষা আন্দোলনের রক্তভেজা ২১ ফেব্রুয়ারি ঘটে গেছে। শেখ হাসিনা ছোটো। তার আব্বার সঙ্গে শেখ মুজিব বাড়ি পৌঁছোতেই ‘হাচু আমার গলা ধরে প্রথমেই বলল, ‘আব্বা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, রাজবন্দিদের মুক্তি চাই।’ ২১ ফেব্রুয়ারি ওরা ঢাকায় ছিল, যা শুনেছে তাই বলে চলেছে। কামাল আমার কাছে আসল না, তবে আমার দিকে চেয়ে রইল।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ২০৭)। তার পরের কয়েকটি লাইনে স্বামী-স্ত্রীর বেদনাবিদ্ধ মিলনের সুন্দর একটি ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন বঙ্গবন্ধু : ‘রেণু খুব চাপা, আজ যেন কথার বাধা ভেঙে গেছে।... বাচ্চা দুইটা ঘুমিয়ে পড়েছে। শুয়ে পড়লাম। সাতাশ-আটাশ মাস পরে আমার সেই পুরানা জায়গায়, পুরানা কামরায়, পুরানা বিছানায় শুয়ে কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠের দিনগুলির কথা মনে পড়ল।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ২০৭)।

পিতা শেখ মুজিবের সঙ্গে পুত্র শেখ কামালের (ইনিও ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই নিহত হয়েছিলেন) নৈকট্যের সূত্রপাতের ছবিটিও যেন একটি স্নিগ্ধ কৌতুক ও করুণরসের মিশ্রণে তৈরি : ‘একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। এক সময় কামাল হাচিনাকে বলছে, ‘হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি’। আমি ও রেণু দুজনই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, ‘আমি তো তোমারও আব্বা’। কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে রইল।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ২০৯)। প্রায় তিনশ পাতার এই বইতে দাম্পত্যের ও পারিবারিক জীবনের এমন সব ছবি বিরল। কিন্তু বোঝা যায় বঙ্গবন্ধুর এই জেল-ঘোরা বহির্মুখী জীবনের প্রতি তার পিতামাতা ও স্ত্রীর যে নিঃশর্ত প্রায় নিঃশব্দ সমর্থন, তা শুধু পুত্রের ও স্বামীর প্রতি অন্ধ আনুগত্যের ফসল নয়, কোনো এক আদর্শবাদিতা তাদের মধ্যেও সঞ্চারিত হয়ে তাদের ত্যাগকে অর্থময় করে তুলেছিল।

বইটি মূলত জনজীবনের স্মৃতি। বঙ্গবন্ধুর চোখে, জনজীবনের ক্ষেত্রে, সবচেয়ে আদর্শ পুরুষ ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বা তার ভাষায় ‘শহীদ সাহেব’। শহীদ সাহেব ছাড়াও এই বইতে ঘুরেফিরে এসেছে আরো ছোটো-বড়ো বাঙালি নেতার কথা। যারা ফজলুল হক বা মওলানা ভাসানীকে নিয়ে ভবিষ্যতে গবেষণা করবেন, তাদের কাজে দেবে এই বই। ভাসানী ও ফজলুল হকের স্মৃতিতে শ্রদ্ধার সঙ্গে মাঝে মাঝে সমালোচনার সুরও এসে মিশেছে। কিন্তু স্পষ্ট করেই লিখেছেন: ‘... তবুও তাঁকে আমি শ্রদ্ধা ও ভক্তি করতাম। কারণ, তিনি জনগণের জন্য ত্যাগ করতে প্রস্তুত।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ১২৮; পৃ. ২৮৬, ২৫১, ২৫৩)। ভাসানীর উপস্থিত ও কৌশলী বুদ্ধি সম্বন্ধে তারিফ করে একটি ঘটনার স্মৃতিচারণা করেছেন বঙ্গবন্ধু। সময়টা আওয়ামী লীগের সৃষ্টির গোড়ার দিক, অর্থাৎ ১৯৪৯/৫০, যখন ‘মওলানা সাহেব, শামসুল হক সাহেব ও আমি  (শেখ মুজিব) ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর মহকুমায় প্রথম সভা করতে যাই।’ মওলানা সাহেব প্রধান বক্তা কিন্তু বক্তৃতা শুরু করার ঠিক পূর্বমুহূর্তে পুলিশ এসে ১৪৪ ধারা জারি করে দিল। মওলানা দমেননি। দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, ‘আমি বক্তৃতা করতে চাই না, তবে আসুন আপনারা মোনাজাত করুন আল্লাহ আমিন।’ বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, ‘মওলানা সাহেব মোনাজাত শুরু করলেন। মাইক্রোফোন সামনেই আছে। আধঘণ্টা পর্যন্ত চিৎকার করে মোনাজাত করলেন, কিছুই বাকি রাখলেন না, যা বলার সবই বলে ফেললেন। পুলিশ অফিসার ও সেপাইরা হাত তুলে মোনাজাত করতে লাগল। আধঘণ্টা মোনাজাতে পুরা বক্তৃতা করে মওলানা সাহেব সভা শেষ করলেন। পুলিশ ও মুসলিম লীগওয়ালারা বেয়াকুফ হয়ে গেল।’ (প্রাগুক্ত, পৃ.১২৮)।

ভিন্ন রাজনীতির লোক হওয়া সত্ত্বেও ‘শেরে বাংলা’ ফজলুল হক সম্বন্ধে শ্রদ্ধাশীল বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর যৌবন কেটেছে শহীদ সাহেবের নেতৃত্বে মুসলিম লীগের সংগঠক হিসেবে। পরবর্তীকালে তিনি আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। বঙ্গবন্ধু যখন শহীদ সাহেবের পক্ষে, হক সাহেব তখন মুসলিম লীগ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন, শহীদ সাহেবকেও তিনি বিপক্ষই মনে করেন। (প্রাগুক্ত, পৃ.৩৫-৭)। হক সাহেব পরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মেলালেও তার পার্টি স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখেছেন। কিন্তু তার পূর্ব-প্রজন্মের অনেকের মনেই যে হক সাহেবের একচ্ছত্র আধিপত্য, সেই প্রসঙ্গেরও পূর্ণ স্বীকৃতি আছে শেখ মুজিবের স্মৃতিতে। লিখেছেন, একদিন তিনি ও তার আব্বা রাত দুটো পর্যন্ত রাজনীতির আলোচনা করেন। পিতা খুশি হলেও বলেন : ‘শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক সাহেবের বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তিগত আক্রমণ না করতে।’ তার মাও একদিন বলেন : ‘বাবা যাহাই কর, হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছুই বলিও না।’ (প্রাগুক্ত, পৃ.২২)। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু লিখছেন, একদিন তার ‘নিজের ইউনিয়নে’ই হক সাহেবের মুসলিম লীগ ত্যাগের ও শ্যামা-হক মন্ত্রিত্বের সমালোচনায় উদ্যত হন তিনি। ‘হঠাৎ একজন বৃদ্ধ লোক যিনি আমার দাদার খুব ভক্ত, আমাদের বাড়িতে সকল সময়ই আসতেন, আমাদের বংশের সকলকে খুব শ্রদ্ধা করতেন-দাঁড়িয়ে বললেন, ‘যাহা কিছু বলা বলেন, হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছুই বলবেন না। তিনি যদি পাকিস্তান না চান, আমরাও চাই না। আমাদের গরিবের বন্ধু হক সাহেব।’

বঙ্গবন্ধুর কাছে আদর্শ পুরুষ হলেন শহীদ সাহেব। শহীদ সাহেব হলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু। এই বইয়ের আগাগোড়াজুড়ে আছেন শহীদ সাহেব। বঙ্গবন্ধু যিনি কেবল ঘটনারই বিবৃতি দিয়েছেন, তাই নয়, অকুণ্ঠভাবে প্রকাশ করেছেন সোহরাওয়ার্দী সাহেব সম্বন্ধে তার নিজস্ব মানসিক ও মানবিক নানা অনুভূতি। হয়তো জনজীবনের প্রসারিত ও উন্মুক্ত ক্ষেত্রে শহীদ সাহেব ছিলেন তার ব্যক্তিগত অনুভূতির জায়গা। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘শহীদ সাহেব ছিলেন উদার, নীচতা ছিল না, দল-মত দেখতেন না, কোটারি করতে জানতেন না, গ্রুপ করারও চেষ্টা করতেন না। উপযুক্ত হলেই তাকে পছন্দ করতেন এবং বিশ্বাস করতেন। কারণ, তার আত্মবিশ্বাস ছিল অসীম। তার সাধুতা, নীতি, কর্মশক্তি ও দক্ষতা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে চাইতেন। এজন্য তাঁকে বার বার অপমানিত ও পরাজয়বরণ করতে হয়েছে।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৭)। বঙ্গবন্ধুর মতে, ‘দোষ অনেকটা বাঙালিদেরই, বাঙালিরা শহীদ সাহেবকে প্রথমে চিনতে পারে নাই।’ (প্রাগুক্ত, পৃ.৪৮)। তার কারণ, বাঙালিদের ‘নীচতা’। ‘আমাদের বাঙালির মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটি হল ‘আমরা মুসলমান’, আর একটি হল, আমরা বাঙালি।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৭)।  ‘পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা’ এই বাঙালির ‘রক্তের মধ্যে রয়েছে।’ (প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৭)। এই ঈর্ষা ও পরশ্রীকাতরতার কারণেই বাঙালি নেতৃত্ব শহীদ সাহেবকে ‘প্রথমে চিনতে পারে নাই’। যখন চিনতে পারল, তখন আর সময় ছিল না।’ (প্রাগুক্ত, পৃ.৪৮)।

নীতির প্রশ্নে আপসহীন বঙ্গবন্ধু অপরাজনীতিকে ঘৃণা করতেন। টাকার সাহায্যে জনপ্রতিনিধিদের কেনা যায় এমন বিষয়কে তিনি ঘৃণার চোখে দেখতেন। এ সম্পর্কে তার মত, ‘কয়েক লক্ষ টাকা তুলে লীগ মন্ত্রিসভাকে খতম করার জন্য কয়েকজন এমএলএকে কিনে ফেলল।’ (প্রাগুক্ত, পৃ.৩৩)। রাজনীতিতে টাকার প্রভাব অস্বীকারের উপায় না থাকলেও তা প্রতিরোধের ব্যাপারে তিনি ছিলেন সোচ্চার।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন আজীবন আদর্শবাদী। তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে অসমসাহসী আদর্শবাদী এক যুবকের কথাই লিখেছেন বঙ্গবন্ধু। রাজনৈতিক দর্শনের কাছে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সঁপে দেওয়া বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক চাতুর্যকে সহজাত কৌশল হিসেবে বিবেচনা করতেন। তাই পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্বের নিকট তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল পাহাড়সম। কিন্তু পঙ্কিলাবর্ত রাজনীতির কূটাভাষ তাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে নানা সময় নানাভাবে। ক্ষিপ্রতা ও ব্যক্তিত্বের মিশেলে মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের সহজ কাব্যময়তা তৈরির যে দক্ষতা তার ছিল তা দিয়ে যে-কোনো অশুভ শক্তির অনায়স পরিণতি ঘটাতে পারতেন তিনি।

 

লেখক : অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads