• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বৈশাখ এসেছে বাঙালিত্বের অহংকার নিয়ে: অভ্রভেদী আনন্দ-উচ্ছলতা কই

সংগৃহীত ছবি

সম্পাদকীয়

বৈশাখ এসেছে বাঙালিত্বের অহংকার নিয়ে: অভ্রভেদী আনন্দ-উচ্ছলতা কই

  • আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া
  • প্রকাশিত ১৪ এপ্রিল ২০২১

আজ পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। বাঙালিত্বের অহংকারের প্রজ্বলিত বছরের প্রথম লগ্ন। রাত পোহাতে না পোহাতেই প্রকৃতিজুড়ে অনুরণিত ঝংকৃত হয়ে ওঠে চিরায়ত রাবীন্দ্রিক সুর-মূর্ছনা ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’। এবারো তো তার কোনো ব্যতিক্রম হয়নি প্রকৃতিতে, বাঙালি মানসপটে। বৈশাখ এসেছে কিন্তু বৈশাখী দাপট কোথায়? আমাদের প্রিয় রমনার বটমূলে ছায়ানটের কবিতার হৃদয়গ্রাহী আমেজ কই? আর কোথায় আমাদের মঙ্গলশোভাযাত্রা- প্রাণের বন্যায় ছন্দবন্ধ স্লোগানমুখর- হাজার দীপ্তপ্রাণ বাঙালির মিছিল? কোথায় সেই বাঙালি রং পোশাক আর মুখবদনজুড়ে অলংকরণ ফুল পত্রপল্লব খচিত আবিরমাখা আল্পনা? কোথায় আজ এই আনন্দক্ষণে শিশু-কিশোর যুবক-যুবতী রমণী-বৃদ্ধার উল্লাস মাতোয়ারা-কোলাহল মুখর প্রকম্পিত রাজপথ-মেঠোপথ?

আমাদের উৎসবমুখর সাংবৎসরিক হালখাতা, প্রশস্ত মাঠজুড়ে নাগরদোলা, বাঁশির সুরলহরি, পরস্পর মিঠাই মাণ্ডা বিতরণ। পান্তা-ইলিশ, ভর্তা-ভাজা শতরকমের মুখরোচক বৈশাখী খাওয়ার জৌলুশ আজ কোথায় হারিয়ে গেল? এর সবকিছুই হলো সর্বনাশা করোনার অভিশাপ।

এই ঘাতক শত্রু এসে কেড়ে নিয়েছে আমাদের সুখ, উল্লাস ও নান্দনিক প্রাণের মেলা। বিগত পুরো বছরটি আমাদের সব হাসি-আনন্দ-উচ্ছলতা রাহুর মতো গ্রাস করে নিয়েছে এই মরণব্যাধি। আজকের পূর্বদিগন্তে যে লালে লাল হওয়া সূর্যটি উদিত হয়েছে বাঙালির নতুন বছরের বার্তা নিয়ে, একই সঙ্গে বয়ে এনেছে নতুন বছরের জন্য অজানা এক অশনি সংকেত। যখন এই পর্যন্ত লেখাটি টেনে এনেছি, নিউজরুম থেকে এক সহকর্মী বিরহ-বিধুর কণ্ঠে জানান দিলেন-ভাই, আজ সর্বোচ্চ রেকর্ডসংখ্যক ৮৩ প্রিয়মুখ মৃত্যুর শীতল কোলে ঢলে পড়েছে করোনার করাল গ্রাসে।

তবুও আমরা বাঙালি। বীরের জাতি। জ্বলেপুড়ে ছারখার তবু মাথা নোয়াবার নয়। আমরা হার মানতে জানি না। আমরা পরাজয়-পরাভব কাকে বলে জানি না। আমরা আশাবাদী জাতি। আজ পহেলা বৈশাখে রমনার বটমূলে যেতে পারিনি। আজ মঙ্গলশোভাযাত্রায় রাজপথ প্রকম্পিত করতে পারিনি; আজ গানে-কবিতায়-নৃত্যে আকুল-ব্যাকুল হতে পারিনি; তবে আসছে বৈশাখে আবার ষোলোআনা বাঙালিত্বে অভ্রভেদী দাপট ও অহংকার নিয়ে, উদ্বেলিত চিত্তে নববর্ষের সুখ-সুধা-চত্বর প্রাণভরে উপভোগ করব। সেদিন আমরা রাক্ষুসে করোনাকে জাদুঘরে পাঠিয়ে দিয়ে ফিরে পাব আমাদের আনন্দ-উচ্ছল স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহ। আজ কেবল সারা বিশ্বের বাঙালি-অবাঙালি নির্বিশেষে সবার জন্য প্রার্থনা রইল-চিরায়ত বাংলায় এ নববর্ষ আনুক নতুন প্রত্যয় প্রতিটি প্রাণে। আর মুক্তপ্রাণে সমবেত কণ্ঠে উচ্চারিত হোক কবিগুরুর অমোঘ কণ্ঠস্বর যা ধাবিত হবে কাল থেকে কালান্তরে— মহাকালের কক্ষপথে-

বন্ধু হও, শত্রু হও

যেখানে যে কেহ রও

ক্ষমা কর আজিকার মত

পুরাতন দিনের সাথে

পুরাতন অপরাধ যত।

লেখক : সম্পাদক, বাংলাদেশের খবর

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads