• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

ফাইল ছবি

শিক্ষা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেঞ্চুরি

·       খুলনা ও রাজশাহীতে অনুমোদন পেল আরো দুটি ·       অপেক্ষায় আছে আরো এক ডজন

  • অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
  • প্রকাশিত ১৮ এপ্রিল ২০১৮

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় চরম অরাজকতার মধ্যে মঙ্গলবার আরো দুটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেল। এ নিয়ে এর সংখ্যা দাঁড়াল ৯৯। এ ছাড়া দারুল ইহসান নামে আরো একটি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। সনদ বাণিজ্য, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে আদালত এটি বন্ধ করে দিয়েছেন। এর বাইরে আরো অন্তত এক ডজন বিশ্ববিদ্যালয় পাইপলাইনে আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

নতুন অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় দুটি হলো ‘খুলনা খান বাহাদুর আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়’ ও ‘আহছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’। এগুলো খুলনা ও রাজশাহীতে স্থাপিত হবে। এ দুটির প্রতিষ্ঠাতা ঢাকা আহছানিয়া মিশনের প্রেসিডেন্ট কাজী রফিকুল আলম। এর আগে তিনি ঢাকায় ‘আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’র অনুমোদন নিয়ে পরিচালনা করছেন। বর্তমানে এটি নামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে সচিবের রুটিন দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. মহিউদ্দীন খান বলেন, এসডিজি (টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা) অর্জনে শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার একটি সূচক আছে। আমাদের দেশে শিক্ষার্থীর তুলনায় বিশ্ববিদ্যালয় অপর্যাপ্ত। সে হিসেবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দরকার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনে সমস্যা নেই। সমস্যা হলো শিক্ষার মান। তারা (উদ্যোক্তা) অনুমোদন নিয়ে মান রক্ষা করতে পারছেন না। স্থায়ী ক্যাম্পাসে না গিয়ে ভাড়াবাড়িতে শিক্ষা দিচ্ছেন। মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ার কারণেও অনেক সমস্যা হচ্ছে। সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আমরা চেষ্টা করছি।

মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০-এর ৩৬ ধারা অনুযায়ী ২৩ শর্তে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দুটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের নিজস্ব বা ভাড়া করা ভবন, কমপক্ষে তিনটি অনুষদ ও ছয়টি বিভাগ, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি, ছাত্রছাত্রীদের জন্য কমন রুম, সেমিনার কক্ষসহ পর্যাপ্ত অবকাঠামো থাকতে হবে। পূর্বানুমোদন ছাড়া বিভাগ খোলা যাবে না। বিভাগে শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্টসংখ্যক পূর্ণকালীন শিক্ষক থাকতে হবে। আচার্যের (রাষ্ট্রপতি) পূর্ব অনুমোদন ছাড়া বিদেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা যাবে না। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় দুটি স্থাপনের বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন। এরপর চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২৯ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে।

এদিকে ঢাকায় আর কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার অনুমতি না দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও তা লঙ্ঘন করে ২৯ জানুয়ারি গুলশানে ‘জেড এন আর এফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়’টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ড. এম জুবায়দুর রহমান।

অনুমোদনের অপেক্ষায় যেসব বিশ্ববিদ্যালয় : ‘বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের আবেদন করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উসৈশিং এমপি। শামসুল আলম নামে একজন সিঙ্গাপুর প্রবাসী ‘শাহ মখদুম বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের আবেদন করেছেন। বিরোধীদলীয় নেতা নিজ নামে ‘রওশন এরশাদ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’-এর আবেদন করেছেন। এটি ময়মনসিংহ জেলার ক্রিস্টাপুরে স্থাপিত হবে। সাবেক এমপি এবং হুইপ এইচএম গোলাম রেজা রাজধানীর সেনপাড়ায় ‘সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’ করতে চান। ‘এ্যাপোলা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ খোলার আবেদন করেছেন জাতীয় সংসদ সদস্য শামসুল আলম ভূঁইয়া। বিশ্ববিদ্যালয়টি চাঁদপুর জেলার বাবুরহাটে স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। পটুয়াখালীর লাউকাঠিতে ‘সাউথ রিজন ইউনিভার্সিটি’ স্থাপনের আবেদন করেছেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ। ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি’ নামে রাজধানীর মহাখালীতে স্থাপনের জন্য আবেদন করেছেন ইঞ্জিনিয়ার একেএম মোশাররফ হুসাইন। বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের প্রেসিডেন্ট এইচ এন ভেন সঙ্ঘনায়ক শ্রদ্ধানন্দ মহাথের ‘ইউনিভার্সিটি অব অতীশ দীপঙ্কর বাজরাগজনি’ স্থাপনের অনুমোদন চেয়েছেন। এটি মুন্সীগঞ্জে স্থাপন করা হবে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে ঢাকায় ৫৫টি, মানিকগঞ্জে একটি, ফরিদপুরে একটি, নারায়ণগঞ্জে তিনটি, কিশোরগঞ্জে একটি, জামালপুরে একটি, শরীয়তপুরে একটি, চট্টগ্রামে ৯টি, কক্সবাজারের একটি, কুমিল্লায় তিনটি, ফেনীতে একটি, রাজশাহীতে দুটি, বগুড়ায় একটি, সিরাজগঞ্জে একটি, নাটোরে দুটি, খুলনায় দুটি, চুয়াডাঙ্গায় একটি, কুষ্টিয়ায় একটি, সিলেটে চারটি, বরিশালে দুটি, রংপুরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

প্রসঙ্গত, আইন লঙ্ঘনকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি। নিরুপায় হয়ে তারা আচার্যের দ্বারস্থ হয়। রাষ্ট্রপতি ৬ ফেব্রুয়ারি সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নিয়ে সভা করেন। এরপর সার্টিফিকেট ও ভর্তি-বাণিজ্য বন্ধ, অতিরিক্ত ভর্তি ফি আদায় না করা, স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া, শিক্ষক নিয়োগে নীতিমালা করা, নিয়মিত অডিট রিপোর্ট জমা দেওয়াসহ ১৬ দফা নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠাতে মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads