• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ

সংরক্ষিত ছবি

শিক্ষা

প্রশ্ন ফাঁসে বাতিল হচ্ছে না পরীক্ষা

পরীক্ষা পদ্ধতি বদলের ইঙ্গিত শিক্ষামন্ত্রীর

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৪ মে ২০১৮

আসন্ন জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। একই সঙ্গে মন্ত্রী বলেন, সদ্য সমাপ্ত এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ‘উন্মুক্তভাবে’ কোনো প্রশ্ন ফাঁস হয়নি বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি। এ জন্য কমিটি কোনো বিষয়ের পরীক্ষা বাতিল না করতে অনুরোধও করেছে তাদের প্রতিবেদনে। যুক্তি হিসেবে মন্ত্রী বলেছেন, ফেসবুকের কিছু ‘ক্লোজড’ গ্রুপে এই প্রশ্ন এসেছে। পরীক্ষার আগে আসা প্রশ্ন পেয়ে শিক্ষার্থীদের খুব বেশি লাভ হয়নি। কাজেই অল্প কিছু (হাজার পাঁচেক) ছেলেমেয়ের কারণে সবার জন্য আবার পরীক্ষা নেওয়ার মানে হয় না। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সম্মেলন কক্ষে এই সুপারিশ প্রতিবেদন হাতে নিয়ে তা অনুমোদনের ঘোষণা দেন শিক্ষামন্ত্রী।

এমসিকিউ থাকবে কি না সিদ্ধান্ত শিগগির

পাবলিক পরীক্ষায় এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে কি না, থাকলে কীভাবে তা রাখা হবে- সে বিষয়ে শিগগির সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১২ বিষয়ের এমসিকিউ অংশের একটি সেটের প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার তথ্য তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পর বৃহস্পতিবার প্রশ্ন পদ্ধতির সংস্কার নিয়ে এসব কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, এমসিকিউ এখন প্রশ্ন ফাঁসের একমাত্র উপায়, এ বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে। শিগগির সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ বলেন, প্রশ্ন ফাঁস তদন্তে কমিটি পরীক্ষা বাতিল না করার সুপারিশ করেছে। এমসিকিউ ফাঁসের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন এমসিকিউ বাতিলের বিষয়ে জনমত গড়ে তুলতে। এমসিকিউ নিয়ে শিগগির সিদ্ধান্ত জানাব।

বাংলাদেশে এসএসসিতে এমসিকিউ প্রশ্ন প্রবর্তন করা হয়েছিল ১৯৯২ সালে। তখন মোট ৫০টি বহুনির্বাচনী প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো। প্রতিটির জন্য বরাদ্দ ছিল ১ নম্বর করে। দীর্ঘদিন ওই ব্যবস্থা চলার পর প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে এখন এমসিকিউ অংশ কমিয়ে আনার কথা বলা হচ্ছে। প্রাথমিক সমাপনীর পাশাপাশি চলতি বছরের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা পদ্ধতিতেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন বিষয়টি স্পর্শকাতর। বিষয়টির একটি পরিবর্তন আসতে পারে। তবে আমরা এখনই সুযোগটা দিচ্ছি না। এমসিকিউ এখন যে রকম আছে- এ, বি, সি, ডি, সে রকম না করে সেটার একটা পরিবর্তন আসতে পারে। আক্ষরিক হতে পারে। এটা টোটালি বন্ধ করে সিকিউতে যেতে হবে। কিন্তু সিকিউ প্রশ্ন একজন ছাত্রের পক্ষে কতটা লেখা সম্ভব, সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি বলেন, তার (পরীক্ষার্থীর) জন্য সহনশীল হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লেখা সম্ভব হয়, সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। সেটা মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার বিষয় নয়। আমাদের মাথায় আছে। সঠিক জায়গায় আগে পরীক্ষামূলকভাবে করব। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।

কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী বলেন, এমসিকিউ বাদ দেওয়া উচিত। এমসিকিউ বাদ দিলে প্রশ্ন ফাঁসের কথা উঠবে না। আমি আগামী পরীক্ষা থেকে এমসিকিউ তুলে দেওয়ার প্রস্তাব করছি।

এসএসসিতে ১২ বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁসে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ

সদ্য শেষ হওয়া এসএসসি পরীক্ষায় ১৭ বিষয়ের মধ্যে ১২ বিষয়ে শুধু এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন) অংশের ‘খ’ সেট প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। তবে সৃজনশীল অংশের প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে এই কথা বলা হয়েছে। তবে কমিটি ২০ লাখ পরীক্ষার্থীর ভোগান্তির কথা চিন্তা করে পুনরায় পরীক্ষা না নেওয়ার সুপারিশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের ক্লোজ গ্রুপে এই প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে। এই গ্রুপের মাধ্যমে বড়জোর চার থেকে পাঁচ হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষা শুরুর আগ মুহূর্তে প্রশ্ন পেয়ে থাকতে পারে। এ জন্য কমিটি ২০ লাখ পরীক্ষার্থীর ভোগান্তির কথা চিন্তা করে পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা না নেওয়ার সুপারিশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্মুক্তভাবে কোনো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। ক্লোজ গ্রুপের মাধ্যমে নগণ্যসংখ্যক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট আগে বা কাছাকাছি সময়ে প্রশ্ন পেয়েছে। এ ধরনের ক্লোজ গ্রুপের একেকটিতে ১০ থেকে ১০০ জনের মতো সদস্য রয়েছে। তবে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগেই পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হয়। ফলে ১৫-২০ মিনিট আগে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটলেও এতে সামগ্রিকভাবে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। পরীক্ষায় এমসিকিউ অংশে মোট চার সেট প্রশ্ন থাকে। এমসিকিউ অংশের মোট নম্বর ৩০। গত ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষায় এবার একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটে। তখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীরের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি গত মার্চ মাসেই প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads